লেখা-লেখি

কবি অমিয় দেবনাথের কবিতা ' আমি ভালো আছি '— আলোচনা।

১১:৫৬:০০ PM 0 Comments


কবি অমিয় দেবনাথের কবিতা  'আমি ভালো আছি '— আলোচনা।


কবি অমিয় দেবনাথের একটি সহজ সুরের কঠিন কবিতা " আমি ভালো আছি "মুগ্ধ করলো। কবিতাটিতে সমস্ত বক্তব্য শেষ হয়েছে 'আমি ভালো আছি 'বলে, অনেকটা যেন রিমেকের মত। কিছু চরণে শেষে 'আমি ভালো আছি 'র পুনরুচ্চারণ যেন সচেতন করে দেয় এই ভালো থাকা আদৌ ভালো থাকা কি না।  কোথাও  শব্দ গুচ্ছের অনবদ্য বিন্যাস থাকা সত্ত্বেও ভালো আছি উচ্ছারণে অনূক্ত বেদনা যেন স্বতোৎসারিত আবেগে উচ্ছ্বাসে ঝরে ঝরেই যায়। এই উৎসারিত আবেগ হৃদয় দুমড়ানো মুচড়ানো বেদনার নির্যাস!
    লক্ষ্য করা যায় এই কবিতায় রোমান্টিক আবেগ প্রকাশে কবি অভ্যস্ত পথচলা ত্যাগ করে ভিন্ন পথের পথিক যেন। অভ্যস্ত প্রেম ও তজ্জনিত বিরহের রোমান্টিকতা থেকে এখানে  প্রকৃতির সৌন্দর্য জগতের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন! তবুও কবি রোমান্টিকতার প্রবল ও অচ্ছেদ্য জগৎ থেকে সরে যেতে পারেননি। একথা বললে অত্যুক্তি হবে না কবি অমিয় দেবনাথ মূলত একজন রোমান্টিক কবি। তিনি তাঁর রোমান্টিক চেতনাকে অবলম্বন করে প্রেম এবং তজ্জনিত বিরহ বেদনার উৎসারণ নিয়ে কবিতা লিখেছেন। এরূপ কবিতার সংখ্যাই সম্ভবত অধিক। কবির রোমান্টিসিজম আবার প্রকৃতিকেন্দ্রিক,  কোন কোন কবিতায় দেখা যায় প্রকৃতিকে কেন্দ্রে রেখে তাঁর এই শ্রেণীর রোমান্টিক কবিতা লেখা হয়েছে। অবশ্যই এই শ্রেণীর কবিতার সংখ্যা বিরল। ' আমি ভালো আছি ' কবিতাটি শেষোক্ত শ্রেণীর নিঃসন্দেহে। কবির এই কবিতাটি তাই বিশেষ উল্লেখযোগ্য।আরেকটি বিষয় বর্তমান প্রসঙ্গে উল্লেখের দাবি রাখে কবি অমিয় দেবনাথ অধিকাংশ ক্ষেত্রে গুরুগম্ভীর তৎসম শব্দ ও পৌরাণিক মিথ তাঁর কবিতায় ব্যবহার করেন। কিন্তু এই কবিতাটি প্রকৃতই ব্যতিক্রমী। শব্দ প্রয়োগে যেন প্রকৃতির সহজ সারল্যই কবির পছন্দ। তৎসম শব্দের উদ্দাম গাম্ভীর্য অনুপস্থিত থেকেও তাঁর এই কবিতা উল্লেখযোগ্য! সহজ সারল্যের অন্তরালে একটা স্তিমিত বেদনার সরব উপস্থিতি কবির এই কবিতাকে মাধুর্যদান করেছে। তাছাড়া কবিতায় চিত্রকল্প, অনুপ্রাসাদি অলংকারের প্রয়োগ কবিতার নান্দনিকতা বাড়িয়ে তুলেছে!
     সবুজ শস্যক্ষেত্র দূর প্রসারিত দিগন্তের মত কবির ভালো থাকার বিস্তৃতি। ম্যানগ্রোভ অরণ্যের দাবাগ্নি, সমুদ্রের উত্তাল তরঙ্গের স্বাধীন স্বতোৎসারিতার মত যেন তাঁর ভালো থাকার উৎসার। অভাবিত চিত্রকল্পের প্রয়োগ, ' নিশাচর পাখিটির শুকতারা দেখার মত' তাঁর ভালো থাকা। মুগ্ধ হয়ে কবিকে বাহবা না দিয়ে থাকা যাবে না।  অতীতের অনাকাঙ্ক্ষিত অতীতে কাঙ্ক্ষিত শৌর্য পরাস্ত হবার ব্যথার মাঝেও ভালো ছিলেন তা আজ কবি অনুভব করছেন। বেদনার প্রকাশ যেন কিছুটা সরব হতে শুরু করলো। 'জীবনের কত সহস্র শক্ত পথ '-এর বিপরীতে সহজ পথ থাকলেও তার ঠিকানা 'গরঠিকানা ', জেনেও কবি ভালো আছেন এই অনুভূতি প্রকাশ করেন। জীবনে প্রাপ্তি যদি অপ্রাপ্তির চেয়ে কম হয়, তবু কবি বলবেন ভালো আছি। অপ্রকাশিত বেদনা যেন এবার অভিমানে আন্দোলিত! সেই অভিমান শেষ চরণগুলিতে বিষাদ ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে । অবশেষে শেষ আহ্বানও যদি হয় ' অনেক হয়েছে  এবার চলো, ' তবু কবি বলতে চাইবেন ভালো আছি।জীবনে সুখ দুঃখ বেদনাকে কবি সমানভাবে গ্রহণ করতে শিখেছেন। নিরপেক্ষভাবে সবকিছুকে   গ্রহণ করেছেন। কবি সুদৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, মৃত্যুকে সামনে দেখলেও কবি বলতে চাইবেন ভালো আছি। মনে পড়ে কবিগুরুর বিখ্যাত পংক্তি 'মরণ রে তুঁহু মম শ্যাম সমান ...'। এভাবে কবিতাটি এক রোমান্টিক আবহে বিষাদাচ্ছন্নতায় সমাপ্ত হয়েছে। বলা যায় একটি সার্থক রোমান্টিক কবিতা যা পড়ার পরেও বিষাদের সুর থেকে যায় 'আমি ভালো আছি '। আর এই বিষাদিত মানসিকতার পেছনে এক প্রগাঢ় অভিমান যেন নীরবে কারুকাজ করে যায়!

 অমিয় দেবনাথ —কবি
    আমি ভালো আছি — কবিতা

আমি ভালো আছি.......
সবুজ শস্যক্ষেত, বিস্তৃত দিগন্তের মতো
আমি ভালো আছি।
ঘাসের উপর মুক্ত শিশির বিন্দুর মতো
আমি ভালো আছি।
ভাদ্র শুক্লা চতুর্দশীর তারা ভরা
স্নিগ্ধাবেশে আলোকিত মধুময়
চন্দ্রবাসরের মতো
আমি ভালো আছি।

স্নিগ্ধতার শিখর চ্যুত মধ্য গগনাভিষিক্ত
ভাস্কর সম ভালো আছি।
ঝরা বকুলের কান্নার মতো
চলে যাওয়ার দুঃস্বপ্ন বুকে নিয়ে
ভালো আছি।
সুদীর্ঘ ম্যানগ্রোভে দাবাগ্নি
প্রজ্জ্বলনে
শান্ত হরিণ শাবকের মতো ভালো আছি।
শান্ত সাগরের অশান্ত ঢেউয়ের মতো
নিশাচর পাখিটির শুকতারা দেখার মত
আমি ভালো আছি।

0 comments:

জেগে ওঠো

২:৪০:০০ PM 0 Comments










   © সুনীতি দেবনাথ

ওখানে বসো চুপটি করে
একটিবার ছুঁয়ে দেবো শুধু —
আর জলগন্ধী ঘাসের নির্যাস
মাখিয়ে দেবো সারা শরীরে,
নীলপদ্মের গর্ভকোষ থেকে আনা
মিহিন রেণুপুঞ্জ মুখে দেবো ছড়িয়ে।
তুমি জেগে উঠে দেখবে
জেগে উঠেছে পৃথিবী
তোমাকে ঘিরে নৃত্যরত
হাজার হাজার মানবমানবী।
জীবন নদী হয়ে অথবা
নদী জীবন হয়ে কলস্বরা,
আর কোন দুঃখ নেই ব্যথা নেই
আছে শুধু আদিগন্ত আলো,
অলৌকিক অন্য এক চেতনা
আর এলোমেলো কবিতার
ছন্দহীন লাজুক পথচলা।

কাজরী ,
৩১ জুলাই, ২০১৫

0 comments:

জন্ম সার্ধশতবর্ষে রজনীকান্ত সেন

৯:২৫:০০ PM 0 Comments
























© সুনীতি দেবনাথ


কার মুখে শুনেছি খেয়াল নেই  বাঙালি আত্মবিস্মৃত জাতি। কথাটা কিন্তু মনে গেঁথে আছে। আর সেই আত্মবিস্মৃতির কারণে মূল্যবান অনেক কিছুই বোধহয় আমরা হারিয়ে ফেলি। রজনীকান্ত সেনের সমসাময়িক অনেক কবির জন্ম সার্ধ - শতবর্ষ যেখানে ধুম - ধাড়াক্কার মধ্য দিয়ে পালন করা হচ্ছে,  সেখানে রজনীকান্তের নাম অনুচ্চারিত। আশ্চর্য হতে হয়। এভাবে আমাদের অস্বীকৃতি বহু বহু মূল্যবান প্রতিভাকে বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে দেবে। বিশেষ করে রজনীকান্তের মত অনবদ্য কবি,  গীতিকার, সুরকার ও গায়কের  ক্ষেত্রে বিস্মৃতি অমার্জনীয় অপরাধ।
     ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে, রজনীকান্তের দুটি গান ঘরে ঘরে শোনা যেতো। এই দুটি গানের একটি হলো ' মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নেরে ভাই ...:, আর অপরটি 'তুমি নির্মল কর,  মঙ্গল করে,  মলিন মর্ম মুছায়ে ...'। প্রথমটি স্বদেশগীতি এবং শেষটি ভক্তিগীতি। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন আর ফলশ্রুতিতে যখন স্বদেশী আন্দোলন বাংলাকে স্বদেশীগ্রহণ ও বিদেশী বর্জনের জন্য আলোড়িত করে তুলেছিলো সেই পটভূমিতে রজনীকান্ত লিখেছিলেন এই অনবদ্য সঙ্গীতটি।  সারা বাংলা সেদিন এই সঙ্গীতে মেতে উঠেছিল। এই এক গান দিয়েই সেদিন রাজশাহীর কবি  রজনীকান্ত অখণ্ড বাংলার কান্তকবি হয়ে  ওঠেন। তাঁর এই গান তখনকার স্বদেশী আন্দোলনে সুপ্রচুর অনুপ্রেরণা সঞ্চার করেছিলো।  গভীর আন্তরিকতা আর স্বদেশপ্রেমের আকুতিতে সুদীর্ঘ কালব্যাপী এই গান মুখে মুখে ফিরেছে। দ্বিতীয় গানটিও প্রাণের আকুুতিতে, সুগভীর ভাবের ব্যঞ্জনায় মর্মস্পর্শী। লোকমুখে বিপুল বিস্তৃতি ঘটে এর।
        ১৮৬৫সালের ২৬ জুলাই রজনীকান্তের জন্ম হয়েছিল পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ মহকুমার ভাঙাবাড়ি গ্রামে। বাবা গুরুপ্রসাদ সেন মা মনমোহিনী দেবী। রজনীকান্তের বাবা গুরুপ্রসাদ সেন পেশায় ছিলেন ঢাকার মুন্সেফ পরে তিনি  বরিশালের সাব-জজ হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর অন্য বিশেষ পরিচয় হচ্ছে তিনি কবিও ছিলেন।তিনি  ব্রজবুলি ভাষায় বৈষ্ণব পদাবলী ও শিবদুর্গার পদাবলী রচনা করেছিলেন। পিতার কাব্য প্রীতির প্রভাব রজনীকান্তের উপর পড়েছিল।
     ছেলেবেলায় অবসরকালীন সময় প্রতিবেশীদের বাড়িতে কাটানো তিনি পছন্দ করতেন। সেখানে রাজনাথ তারকরত্নের কাছে সংস্কৃত শেখেন। গোপাল চন্দ্র লাহিড়ী ছিলেন তাঁর  শিক্ষাগুরু। প্রথমে বোয়ালিয়া জিলা স্কুল এরপর কুচবিহার জেনকিন্স স্কুলে পড়েন। এন্ট্রান্স বৃত্তি সহ পাশ করে রাজসাহী কলেজ থেকে এফ এ পাশ করেন!। এফএ পাশ করে তিনি কলকাতায় সিটি কলেজে ভর্তি হলেন এবং ১৮৯১ সালে বিএ পাশ করেন। এর পর বিএল পাশ করে রাজশাহীতে ওকালতি শুরু করেন। এক সময় প্রাচুর্যের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করেছিলেন।  কিন্তু পরবর্তীতে  নিঃস্ব হয়ে পড়লেন। তখন জীবনটা তাঁর কাছে একটা বড় পরীক্ষা হয়ে উঠল। তবু সব বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করে তিনি এগিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।
তিনি জীবনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে যেন এগিয়ে যেতে চাইলেন। তাঁর চরিত্রের দৃঢ়চেতা রূপটি এভাবে পরিলক্ষিত হয়।
        ছেলেবেলা থেকেই রজনীকান্তের সঙ্গীতের প্রতি ছিলো নিবিড় ভালোবাসা। কেবল একটি বাঁশি দিয়েই তিনি সঙ্গীত চর্চার অন্যান্য সকল সাজসরঞ্জামের অভাবকে পুষিয়ে নিয়েছিলেন। একের পর এক স্বজনের মৃত্যু তাঁকে বিপর্যস্ত করলেও গভীর সঙ্গীত প্রীতি থেকে বিচ্যুত হননি। সমস্ত ব্যথা বেদনাকে উপেক্ষা করে রজনীকান্ত একজন একনিষ্ঠ সাধকের একাগ্রতা নিয়ে সঙ্গীতের অন্দরমহলে প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন। আর তাই তাঁর সাধনার ফলশ্রুতিতে তিনি সাফল্যও অর্জন করেছিলেন। সমকালীন কবিদের মত তিনি হাজার গান রচনা করেননি। কিন্তু তাঁর গানের সুরের লালিত্য আর সর্বোপরি সারল্য গানগুলিকে এমনি মাধুর্য মণ্ডিত করে তুলতো যে, শ্রোতাদের মন বিস্ময়াভিভূত হয়ে যেতো।পঞ্চকবির মধ্যে রজনীকান্তের গানই সর্বাপেক্ষা বেশি ভাবগম্ভীর এবং দার্শনিক তাৎপর্যপূ্র্ণ। তাঁর লেখা গান কান্তগীতি নামে পরিচিত। তাঁর লেখা গানগুলিকে দেশাত্মবোধক, ভক্তিগীতি, প্রীতিমূলক এই কটি ভাগে ভাগ করা হয়। তবে এর বাইরে তিনি  কিছু রম্যগীতিও লিখেছিলেন। আবগারি বিভাগের পরিচালক দ্বিজেন্দ্রলাল রায় একবার রাজসাহী এলে তাঁর রম্যগীতি শুনে কান্তকবিও হাস্যরসাত্মক গান রচনা  করতে উৎসাহিত হন। প্রসঙ্গত উলেখ করতে হয় যদিও দ্বিজেন্দ্রলালের রম্যগানে মুগ্ধ হয়ে রজনীকান্ত রম্যগীতি লিখতে শুরু করেন, তবু বিশেষজ্ঞদের মতে দুজনের রম্যগীতির চরিত্র একেবারে ভিন্ন ছিলো।  এই প্রসঙ্গে প্রমথনাথ বিশী বলেন.,  " দ্বিজেন্দ্রলালের হাসির গান যদি শুক্ল শীতের বাতাস হয় রজনীকান্তের হাসির গান বর্ষায় জলভারাক্রান্ত পূবের বাতাস "। লক্ষনীয় স্বজন মৃত্যুর অতলান্ত বেদনার মধ্যেও রজনীকান্ত ৪৫ বছরের স্বল্পায়ু জীবনে সঙ্গীত রচনা থেকে বিরত থাকেননি।
      "এক অর্থে এই তারকেশ্বর চক্রবর্তীই হলেন রজনীকান্তের সঙ্গীতগুরু —যদিও ঠিক নিয়ম মেনে প্রথাগত সঙ্গীতাভ্যাস রজনীকান্ত করেননি। "
রজনীকান্তের কন্যা শান্তিলতাদেবীর একটা লেখায় এই তথ্য জানা যায়। কে তারকেশ্বর চক্রবর্তী? ইনি রজনীকান্তের বন্ধু এবং চৌদ্দ বছর বয়সে দুজনের পরিচিতি ঘটেছিল। তারকেশ্বর সুন্দর গান গাইতেন তাঁর গান শুনে রজনীকান্ত সঙ্গীতের প্রতি অধিকতর আকৃষ্ট হয়েছিলেন। তবে একথা সত্য রজনীকান্ত স্বয়ং সুগায়ক ছিলেন বলে রাজশাহীতে অবস্থানকালে স্বরচিত গান গেয়ে নানা অনুষ্ঠানে, মজলিশে, সাহিত্যসভায় আসর মাতিয়ে দিতেন। প্রমথনাথ বিশী তাঁকে বলেছেন, "উৎসবরাজ "।
     ‘বাণী’ ও ‘কল্যাণী’ গ্রন্থ দুটি কবির গানের সংকলন। তাঁর গানগুলোর সুর মূলত ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত ঘরানার, তবে এর সাথে কীর্তন,বাউল ও টপ্পার সুরমিশ্রণ দেখা যায়। আইন ব্যবসায়ে মোটেই মন বসে নি, আগ্রহী ছিলেন সঙ্গীত, সাহিত্য ও নাটকে। খুব স্বল্প তিনি গান লিখতে পারতেন। রাজশাহীর যে কোন উৎসব অনুষ্ঠানে রজনীকান্তের গান ছিল অবধারিত।
নীতিকবিতা লেখার ক্ষেত্রেও তাঁর প্রতিভা স্মরণীয়, যেমন স্বাধীনতার সুখ,উপযুক্ত কাল প্রভৃতি এর নিদর্শন। রবীন্দ্রনাথকে রজনীকান্ত প্রথম সাক্ষাতের দিন দুটি গান গেয়ে শোনান, কবিগুরু তাতেই বেশ মুগ্ধ হন এবং কান্তকবিকে তাঁর বাসায় যেতে বলেন। কান্তকবির শেষজীবনে অসুস্থতার সময় রবীন্দ্রনাথ তাঁকে দেখতে হাসপাতালে আসেন।
      হিন্দু হস্টেলে থেকে পড়াশুনা করার সময় তিনি স্বরচিত গান খঞ্জনী বাজিয়ে গেয়ে পথ পরিক্রমা করতেন। পড়াশুনার শেষে রজনীকান্ত রাজশাহী শহরে ওকালতি ব্যবসা শুরু করেছিলেন। তবে তাতে তিনি মনোনিবেশ করতে পারেননি। এক দিকে চলতে থাকে ওকালতি অন্য দিকে গান ও কবিতা রচনা। শরৎ কুমার রায়কে তিনি নিজেই লিখেছিলেন , "আমি আইন ব্যবসায়ী কিন্তু ব্যবসা করিতে পারি নাই।"
       ১৯০২-এ তাঁর প্রথম গ্রন্থ ‘বাণী’ প্রকাশিত হয়। শোনা যায় স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্যদের কাছ থেকে উৎসাহ পেয়েও সুরেশচন্দ্র সমাজপতির ভয়ে তিনি এই বইটি ছাপতে চাননি। পরে জলধর সেনের কলকাতার বাড়িতে সুরেশচন্দ্র সমাজপতি তাঁর গান শুনে সেগুলি গ্রন্থাকারে ছাপাতে বললে তা প্রকাশ করেন।  ১৯০৫-এ তাঁর দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘কল্যাণী’ প্রকাশিত হয়েছিল। জীবিতাবস্থায় তাঁর তৃতীয় গ্রন্থ 'অমৃত'। প্রথম দুটি সঙ্গীতের বই।  মৃত্যুর আগে তিনটি এবং মৃত্যুর পরে পাঁচটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল। কান্তকবির কন্যা শান্তিলতা দেবী জানান তাঁর গানের সংখ্যা ২৯০ টি, এটি সম্পূর্ণ সংখ্যা নয় বলেও তাঁর অভিমত। ভক্তি রসাত্মক গানে কবি ঈশ্বরভক্তির কাছে কিভাবে আত্মসমর্পণ করেন তা বুঝা যায়, তেমনি হাস্যরসাত্মক গান কবির সঙ্গীতবৈচিত্র্যের পরিচায়ক।আরেকটি কথা কান্তকবি সম্সর্কে বলতেই হয়। অতি দ্রুত ও স্বল্প সময়ে তিনি একটা গান লিখে ফেলতে পারতেন।
   কবি হিসেবেও রজনীকান্ত প্রভূত খ্যাতির অধিকারী হয়েছিলেন।তাঁর কবিতা  নির্মল আবেগে এবং কোমল সুরের ব্যঞ্জনায় ঋদ্ধ ও সমৃদ্ধ। ব্যঙ্গ কবিতা রচনায় কবি সিদ্ধহস্ত ছিলেন। তাঁর ব্যঙ্গ কবিতাগুলো রসচাতুর্যে ও রস নিবেদনে অপূর্ব! প্রচ্ছন্ন শ্লেষ ও চতুরতায় সমকালীন সমাজেের সংস্কার ও শিক্ষিত সমাজের অসঙ্গতি নিয়ে ব্যঙ্গ কবিতা লেখেন।
তিনি সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে তীব্র ব্যঙ্গ করেছিলেন। তৎকালীন সামাজিক সংস্কার, শিক্ষিত সমাজের বিকৃতি ইত্যাদি উপকরণ নিয়ে ব্যঙ্গ করার সাথে সাথে গ্লানিমুক্ত নির্দোষ হাসির কবিতাও তিনি লিখেছেন। এদেশের ঐতিহাসিক গবেষণার প্রতি প্রচ্ছন্ন শ্লেষের সাথে কৌতুকরসের পরিবেশনা করেন।
গল্প,কাহিনী বা নিছক কলাশিল্পের সাহায্যে কবি জ্ঞানগর্ভ নীতিকথা বা তত্ত্ব প্রচার করেন। নীতিকথার তীব্রতা কল্পনার স্পর্শে যাতে কোমল ও কান্তরূপ পরিগ্রহ করে, তাই কবি হৃদয়ের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। সেই দৃষ্টিকোণে রজনীকান্ত সেনের 'অমৃত' কাব্যগ্রন্থটি একটি সার্থক নীতি কবিতার অন্তর্ভূক্ত।
১৯০৯ সালে রজনীকান্ত কণ্ঠনালীর প্রদাহজনিত কারণে সমস্যা ভোগ করতে থাকেন। আর্থিক সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করা সত্ত্বেও একই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর তারিখে তাঁকে জোরপূর্বক কলকাতায় ় প্রেরণ করেন পরিবারের সদস্যরা। একজন ব্রিটিশ ডাক্তার তাঁকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন ও তাঁর ল্যারিঙ্কস ক্যানসার হয়েছে বলে সনাক্ত করেন। এরপর তিনি কলকাতার বিভিন্ন প্রথিতযশা ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। কিন্তু তাঁর অবস্থার আর উত্তরণ হয়নি, বরঞ্চ উত্তরোত্তর অবনতি হতে থাকে।
শেষ আশ্রয় হিসেবে বারাণসীতে ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রকৃতি প্রদত্ত আরোগ্য লাভের আশায় বেশ কয়েকমাস ব্যয় করেন। এ ব্যয়ভার বহনের লক্ষ্যে খুবই বিষণ্ণ চিত্তে তাঁর প্রকাশিত 'বাণী' এবং 'কল্যাণী' বই দু'টোর গ্রন্থস্বত্ত্ব বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন তিনি। কলকাতায় আবার  ফিরে এলেও শারীরিক অবস্থা ক্রমশ আরো ভেঙ্গে পড়ে। এরপর তিনি ১০ ফেব্রুয়ারি, ১৯১০ তারিখে ক্যাপ্টেন ডেনহ্যাম হুয়াইটের তত্ত্বাবধানে কলিকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ট্রাকিওটোমি অপারেশন করান। এরফলে তিনি কিছুটা আরোগ্য লাভ করলেও চিরতরে তাঁর বাকশক্তি হারিয়ে যায় । অপারেশন পরবর্তী জীবনের বাকী দিনগুলো় হাসপাতালের কটেজ ওয়ার্ডে কাটাতে হয়।
হাসপাতালে থাকাকালীন তিনি তাঁর দৈনিক দিনলিপি বা ডায়েরী সংরক্ষণ করতেন। এছাড়াও, আত্মজীবনী লিখতে শুরু করলেও একটিমাত্র অধ্যায়েই তা শেষ হয়ে যায় মৃত্যুজনিত কারণে। কিছু কবিতাপ্রেমী ব্যক্তিত্ব এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররা তাঁর দেখাশোনা ও খোঁজ-খবর নিতেন। মহারাজা মনীন্দ্র চন্দ্র নন্দী এবং শরৎ কুমার রায় তাঁকে আর্থিক
 সহযোগিতা করেন। স্মর্তব্য যে, ১১ জুন, ১৯১০ তারিখে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রজনীকান্ত সেনকে দেখার জন্যে হাসপাতালে  গিয়েছিলেন। তখন রজনীকান্তের লিখিত একটি গান তাঁর পুত্র ক্ষিতীন্দ্রনাথ এবং কন্যা শান্তিলতা হারমোনিয়ম সহযোগে গেয়েছিলেন । রজনীকান্ত বিশ্বাস করতেন যে, ঈশ্বর তাঁকে ব্যথা-বেদনা দিয়ে তাঁর পবিত্র আত্মাকে শুদ্ধ করছেন। এ বিশ্বাসটুকু তাঁর অন্তঃশক্তি প্রদান করে শারীরিকভাবে ব্যথা থেকে সাময়িক বিমুক্ত রাখতে সহায়তা করেছে। তাঁকে আত্মনিমগ্ন রেখে এবং সঙ্গীত  রচনা করতে সাহায্য করেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে ঐদিন সাক্ষাতের প্রতিফলন হিসেবে নিম্নবর্ণিত গানটি রচনা করেছেন রজনীকান্ত সেন।
"আমায় সকল রকমে কাঙ্গাল করেছে, গর্ব করিতে চূর,.,, "
তারপর তিনি গানটিকে কবিতা আকারে বোলপুরে রবীন্দ্রনাথের কাছে পাঠিয়ে দেন। উষ্ণপ্রকৃতির এ কবিতা হাতে পেয়ে রবিঠাকুর ৩০ জুলাই একটি চিঠি লেখেন। তাতে তিনি রজনী'র ব্যাপক সাহিত্য প্রতিভা এবং গৌরবময় ভূমিকার কথা সবিশেষভাবে উল্লেখ করেন। এর মাধ্যমেই তাঁর অন্তরাত্মা শক্তি ও সাহস জুগিয়ে সর্বপ্রকার ব্যথা-বেদনা থেকে মুক্ত থাকবে বলে ব্যক্ত করেন। এ সময়ে রজনীকান্ত বেশ কিছু আগমনী এবং বিজয়া'র গান রচনা করেন।
    রজনীকান্তের শেষ দিনগুলো ছিল অসম্ভব ব্যথায় পরিপূর্ণ। তিনি ১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯১০ সালে (১৩১৭ বঙ্গাব্দের ২৮শে ভাদ্র) মঙ্গলবার রাত্রি সাড়ে আটটার সময় লোকান্তরিত হন। সৃষ্টির একটি অধ্যায় অকালে সমাপ্ত হয়ে গেলো।
    কান্তকবি রজনীকান্ত সেন আমাদের গৌরব। স্বল্পস্থায়ী জীবনে দুঃখের দহনে দগ্ধ হয়েও বাংলার সম্মানজনক সম্পদ ভাণ্ডারে অকাতরে সৃষ্টির নব নব সম্পদ দান করে গেছেন। সেকথা ভুলে যাওয়া বা এই স্রষ্টাকে বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যেতে দেওয়া উত্তরাধিকারী হিসেবে আমাদের নৈতিক অপরাধ হবে বলে মনে করি।

কাজরী,
৩০ জুলাই, ২০১৬

0 comments:

ক্রুশবিদ্ধ ঈশ্বর

৩:২৬:০০ PM 0 Comments














© সুনীতি দেবনাথ

আর কতবার ক্রুশবিদ্ধ হবো বলো
আমি তো বিশুদ্ধ ঈশ্বর নই,  তবু
বারবার কেন  ক্রুশবিদ্ধ হতে হয়।
হে চৈতন্য পথিক ঈশ্বর,  তুমি
অবশেষে হেরে গেলে তুচ্ছ
এই মানুষের কাছে শেষবার,
বারবার মানুষ যা পারে
তুমি পারোনি তা একবারের বেশি।

কাজরী,
২৯ জুলাই, ২০১৬

0 comments:

জন্মদিনে সঙ্গীত শিল্পী ফিরোজা বেগম

৪:৪০:০০ PM 0 Comments






জন্মদিনে স্মরণ করি উজ্জ্বল সঙ্গীত প্রতিভার অধিকারিনী, অবিস্মরণীয়, জনপ্রিয় নজরুল গীতির গায়িকা ফিরোজা বেগমকে!
   
স্বনামধন্য সঙ্গীত শিল্পী ফিরোজা বেগম জন্মগ্রহণ করেছিলেন ব্রিটিশ শাসিত ভারতের গোপালগঞ্জে, বর্তমানে যে স্থান বাংলাদেশে। ২৮ জুলাই, ১৯৩০ সালে তাঁর জন্ম হয়। তাঁর জাতীয়তা বাংলাদেশী ও নাগরিকতাও বাংলাদেশের।  তাঁর জন্মস্থান বর্তমান ফরিদপুরের গোগালগঞ্জ জেলার রাতইল ঘোনাপাড়ায়। এক সম্ভ্রান্ত জমিদার বংশে ফিরোজা বেগম জন্মেছিলেন। পিতা খান বাহাদুর মোহাম্মদ ইসমাইল এবং মাতা বেগম কওকাবুন্নেসা। শৈশব থেকেই তাঁর সঙ্গীতের প্রতি প্রগাঢ় অনুরাগ । ১৯৫৪ সালে সঙ্গীতের জন্যই তিনি কলকাতায় বসবাস শুরু করেন। পরিচয় হলো বিখ্যাত সঙ্গীতবিদ্ কমল দাশগুপ্তের সঙ্গে, তাঁর কাছেই তিনি  সঙ্গীত শিক্ষা শুরু করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে কমল দাশগুপ্তের সঙ্গেই তাঁর বিবাহ হলো। তাঁদের তিন সন্তান তাহসিন, হামীন ও শাফীন। ১৯৫৫ সালে গীতিকার, সুরকার ও গায়ক কমল দাশগুপ্তের সঙ্গে বিবাহ হয়েছিল। ফিরোজা বেগম সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে নজরুল গীতির জন্য সুবিখ্যাত। এই অঞ্চলে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তিনি বাংলা সঙ্গীতের প্রতীকী রূপে বিবেচিত হচ্ছেন। ১৯৬৭ সালে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন এবং ১৯৭৪ সালের ২০ জুলাই তাঁর স্বামীর মৃত্যু হলো। 

১৯৪০-এর দশকে তিনি সঙ্গীত জগতে প্রবেশ করেন। ফিরোজা বেগম ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ার সময়েই অল ইণ্ডিয়া রেডিওতে গানে কন্ঠ দেন।  ১২ বছর বয়সে বিখ্যাত গ্রামোফোন কোম্পানি এইচএমভি থেকে ৭৮ আরপিএম ডিস্কে ইসলামী গান নিয়ে তাঁর প্রথম রেকর্ড বের হয়। কিছুদিন পর কমল দাশগুপ্তের তত্ত্বাবধানে উর্দু গানের রেকর্ড হয়। এ রেকর্ডের গান ছিল- 'ম্যায় প্রেম ভরে, প্রীত ভরে শুনাউ' আর 'প্রীত শিখানে আয়া'। দশ বছর বয়সে ফিরোজা বেগম কাজী নজরুলের সান্নিধ্যে আসেন এবং তাঁর কাছ থেকে তালিম গ্রহণ করেন। নজরুল গীতি নিয়ে  তাঁর প্রথম রেকর্ড  ১৯৪৯ সালে প্রকাশিত হয়। কাজী নজরুল অসুস্থ হবার পর ফিরোজা বেগম নজরুল সঙ্গীতের শুদ্ধ স্বরলিপি ও সুর সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তিনি ৩৮০টির বেশি একক সঙ্গীতানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। নজরুলসঙ্গীত ছাড়াও তিনি আধুনিক গান, গজল, কাওয়ালি, ভজন, হামদ ও নাত-সহ বিভিন্ন ধরনের সঙ্গীতে কন্ঠ দিয়েছেন। জীবদ্দশায় তাঁর ১২টি এলপি, ৪টি ইপি, ৬টি সিডি ও ২০টিরও বেশি অডিও ক্যাসেট প্রকাশিত হয়েছে।

১৯৭২ সালে কলকাতায় বঙ্গ-সংস্কৃতি-সম্মেলন-মঞ্চে কমল দাশগুপ্তের ছাত্রী তথা পত্নী হিসেবে তিনি ছিলেন মুখ্যশিল্পী।  তাঁদের দ্বৈত সঙ্গীত শ্রোতাদের বিপুলভাবে বিমোহিত করে।

পুরস্কার ও সম্মাননা :
-----------------------------------

• স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক

• নেতাজী সুভাষ চন্দ্র পুরস্কার

• সত্যজিৎ রায় পুরস্কার

• নাসিরউদ্দীন স্বর্ণপদক

• বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী স্বর্ণপদক

• সেরা নজরুল সঙ্গীতশিল্পী পুরস্কার (একাধিকবার)

• নজরুল আকাদেমি পদক

• চুরুলিয়া স্বর্ণপদক

• বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিলিট

এ ছাড়াও জাপানের অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সিবিএস থেকে গোল্ড ডিস্ক, ২০১১ সালে মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার অর্জন করেন
এপ্রিল ২০১২ তিনি পশ্চিমবঙ্গ থেকে   "বঙ্গ সম্মান" পুরস্কার পান ।

এই কৃতী সঙ্গীতশিল্পী কিডনি জটিলতায় ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪, মঙ্গলবার রাত ৮টা ২৮ মিনিটে ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন ।

0 comments:

উত্তর দাও

১:৩৪:০০ AM 0 Comments
















© সুনীতি দেবনাথ


আজ বিষাদনীলিমা ছেয়ে গেলো
আকাশে বাতাসে জলে স্থলে মগ্নচৈতন্যে।
আমরা একুশের মানুষ বলতে লজ্জা পাই অগ্রগমন মানুষের ইতিহাস জানা ছিলো
এই শতকে বাংলা থেকে ফ্রান্স যা ঘটে গেলো
সে তো নিখাদ পশ্চাদ্গমনের নয়া ফরমান।
ধর্ম কি মানুষের হত্যাকারী হতে পারে?
ধর্মান্ধতা সভ্যতার ইতিহাস হতে পারে কি?
 যদি হয় বলবো সে ধর্ম নিপাত যাক।
সাধারণ মানুষ যারা তারা তো ক্ষমতার জন্য কখনো খেয়োখেয়ি করেনি কোন কালে
তবে তারাই কেন মরবে অসহায় হয়ে?
ধর্ম হবে সন্ত্রাসবাদ, সন্ত্রাসী হয়ে ঝরাবে রক্ত?
কেন মানুষের প্রাণ নিয়ে স্বার্থান্বেষী জেহাদী ঘোষণা?
নিত্য প্রাণ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা নিষ্ঠুর হয়ে,
কী এমন মহান কাজ জানি না, একটি শুধু
একটি মাত্র প্রাণ পেরেছো কি সৃষ্টি করতে?
তবে এ কেমন জেহাদ উত্তর দাও।

কাজরী,
২৪ জুলাই, ২০১৬

0 comments:

একটি কবিতা এবং

৬:২৮:০০ PM 0 Comments







কিছু কিছু কবিতা লেখার আগে ও পরে মনে দ্বৈত ভাবনা ঝড় তোলে । বিষয়টা যে হালহামেশা ঘটে তা কিন্তু নয়। প্রথমেই বলেছি কিছু কিছু কবিতার ক্ষেত্রে এই ব্যাপার একটু বেশি বেশি মাত্রায় ঘটে। প্রথমত কবিতাটি লেখার আগে একটা উন্মাদ তাড়না লিখে ফেলার জন্য মনটাকে ছিঁড়েখুঁড়ে ভেঙ্গেচুরে খানখান করে ফেলে। পারিপার্শ্বিক এমন কিছু বিষয় - আশয়, কার্যক্রম বা ঘটনা পরম্পরা মনের উপর এমন চাপ সৃষ্টি করতে থাকে তার প্রতিক্রিয়ায় একটি কবিতা না লিখে পারা যায় না। কথা হচ্ছে যে বিষয় নিয়ে কবিতাটি লেখার তাড়না সৃষ্টি হয় তা কিন্তু মনোহারী নাও হতে পারে। বরং মর্মবিদারক হতে পারে। সেক্ষেত্রে তাড়নার পাশাপশি হৃদয়ে রক্তমোক্ষণ শুরু হয়। অতএব না লেখা অব্দি নিস্তার মেলে না। অতএব লিখে নিতে হয়। লিখে নেওয়া হলো একেবারে পূর্ব পরিকল্পনাবিহীনভাবে। অবশ্যই আমার প্রায় সব কবিতাই এমনি পরিকল্পনাবিহীন। কারণ কবিতা লিখতে গিয়ে আমি প্রথমে এবং সবশেষে আমার কর্তা মন ও  হৃদয়কেই বেশি পাত্তা দিই। এবং আমি মনে করি এই দুটি নিয়ন্ত্রক শক্তি সদাসর্বদা এবং অতি অবশ্যই সঠিক নির্দেশনাই দেয়। যুক্তিতর্ক বা লজিক সত্যের পথে নিয়ে যায় চাঁছাছোলা কটমটে কাঠখোট্টাভাবে। অন্যদিকে মন - হৃদয় তাতে বাড়তি মোলায়েম আবেগ আর ভালবাসার প্রলেপ দেয়। উপযুক্ত স্থানে প্রদীপ্ত আবেগ ঝকঝকে শাণিত করে তোলে কবিতাকে। 
    যাইহোক প্রথম ধাপে তাড়না - আবেগে হিসেবনিকেশের বালাই মাত্র না রেখে মন -হৃদয়ের হাতে সঁপে দিয়ে নিজেকে কবিতাটা লিখে ফেলা হলো। এবার মনোযোগ সহকারে কবিতা পাঠ ও বিচার বিশ্লেষণ। খুব কম ক্ষেত্রেই মন - হৃদয়ের কথা শুনে লেখা কবিতাকে অকবিতা মনে হয়েছে। বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিছু কিছু পংক্তি বেশ ভালোই লেগেছে। খুব বেশি এডিট কখনোই করিনি। এডিট করতে গেলে একটা অদ্ভুত উপলব্ধি মনে জেগে ওঠে, এ যেন অনধিকার চর্চা হয়ে যাচ্ছে। লিখে ফেলা কবিতার খুব একটা ওলোটপালট করা যেন নিষিদ্ধ। তাই প্রায় সব ক্ষেত্রেই কবিতাকে হুবহু স্বরূপে রেখে শুধুমাত্র অসাবধানতাবশতঃ সামান্য টাইপের ত্রুটি, শব্দের লাফঝাঁপজনিত বানানের বিচ্যুতির সামান্য সারাই করে নিই। চেষ্টা করেও বড়সড় এডিট পারিনি,  করিনি। অনেক সময়, বলা যায় প্রায় সবক্ষেত্রেই কোন কবিতা লেখার পর পরিপূর্ণ তৃপ্তি  পাইনি। মনে হয় যা বলার ছিলো তা বলা হলো না। তাই লিখে ফেলার আনন্দের বদলে একটা অতৃপ্তি , একটা যন্ত্রণা  থেকেই যায়। পূর্ণানন্দ, পূর্ণ তৃপ্তি পাবার কবিতা তাই অতি কম লিখেছি। কবিতা লেখার ক্ষেত্রে ভাব- ভাবনার ঝাড়াই - বাছাই, সূক্ষ্ম অর্থে ফিলট্রেশন লেখার সময়েই হয়ে যায়,  শব্দগুলিও হুড়মুড়্ করে নিজেদের জায়গায় আসম পেতে বসে পড়ে। যা হবার প্রথমেই হয়ে যায়।  তাই লেখার পরের পর্বে টুকিটাকি করা এবং অতৃপ্তির বেদনা পাওয়া ছাড়া কিছু থাকে না। 
   বিগত ২৪ জুলাই তারিখে লিখেছি ' উত্তর দাও ' কবিতাটি। কবিতাটি লেখার পর একটি গ্রুপে পোস্ট করলে বিতর্কের ঝড় তুলে তিনদিন ধরে। সুনামী যেন। ছোট একটি কবিতা, বিজ্ঞজনেরা এটাকে কবিতা বলবেন কিনা  জানি না। আমি নিজেই এ ব্যাপারে সন্দিহান। যা বলতে চেয়েছি তার কতটুকুই বা বলতে পারলাম সন্দেহ থেকে গেছে। তবু  প্রতিক্রিয়া দেখে এবং বিতর্ক শেষে বিষয়বস্তু সম্পর্কে সবাই সহমত পোষণ করেছেন দেখে ভালো লেগেছে। কবিতার নান্দনিক বিচারে হয়তো বা এটি উত্তীর্ণ হবে না। নিম্নে কবিতাটি উদ্ধার করা হলো।

উত্তর দাও
------------------------------
© সুনীতি দেবনাথ


আজ বিষাদনীলিমা ছেয়ে গেলো
আকাশে বাতাসে জলে স্থলে মগ্নচৈতন্যে।
আমরা একুশের মানুষ বলতে লজ্জা পাই অগ্রগমন মানুষের ইতিহাস জানা ছিলো 
এই শতকে বাংলা থেকে ফ্রান্স যা ঘটে গেলো
সে তো নিখাদ পশ্চাদ্গমনের নয়া ফরমান।
ধর্ম কি মানুষের হত্যাকারী হতে পারে?
ধর্মান্ধতা সভ্যতার ইতিহাস হতে পারে কি?
 যদি হয় বলবো সে ধর্ম নিপাত যাক।
সাধারণ মানুষ যারা তারা তো ক্ষমতার জন্য কখনো খেয়োখেয়ি করেনি কোন কালে
তবে তারাই কেন মরবে অসহায় হয়ে?
ধর্ম হবে সন্ত্রাসবাদ, সন্ত্রাসী হয়ে ঝরাবে রক্ত?
কেন মানুষের প্রাণ নিয়ে স্বার্থান্বেষী জেহাদী ঘোষণা?
নিত্য প্রাণ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা নিষ্ঠুর হয়ে,
কী এমন মহান কাজ জানি না, একটি শুধু
একটি মাত্র প্রাণ পেরেছো কি সৃষ্টি করতে? 
তবে এ কেমন জেহাদ উত্তর দাও। 

কাজরী, 
২৪ জুলাই, ২০১৬

0 comments:

আমরা দু 'জনে

১২:০৮:০০ AM 0 Comments


0 comments:

আমরা সুখী হব না

১১:৫৮:০০ PM 0 Comments















© সুনীতি দেবনাথ

সশস্ত্র গণসংগ্রাম শেষে
সাম্রাজ্যবাদীর কবলমুক্ত
লাতিন আমেরিকা যখন
এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে —
মাত্র দুটি ভাষায় জুড়ে রাখা
আর একই উৎসে যুক্ত সেদেশে
ঐক্যে ছিলোনা বড়োসড়ো ফাটল,
কিন্তু ছিলনা সেটাই
এক মহৎ রাষ্ট্রের সংগঠনের
অনিবার্য শর্ত অর্থনৈতিক গোষ্ঠী,
পরিণাম যা হবার তা হল,
সব অনুন্নত দেশের যা হয়।
স্বপ্ন - কল্পনার মিশেলে ঐক্যবদ্ধ,
মহৎ ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্রের আশার ছবি
এঁকেছিলেন সিমন বলিভার,
হোসে আরতিগাস, হোসে দেসান মারতিন —
আর বিশ্বগ্রাসী ক্ষুধা নিয়ে
আগ্রাসী মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ
ওৎ পেতে ছিল।
কূটনীতির জটিল চক্রান্ত,
প্রতারক লোভী ব্যাংক মালিকেরা,
ধান্ধাবাজ বণিক গোষ্ঠীর চতুরালি,
স্বদেশী দালালের লোভ দাবানল —
এতো সব কিছু একত্রিত হয়ে
বীভৎস ধাক্কায় সব চুরমার করল।
ভাঙ্গাচোরা স্বপ্নের সেই হৃতমান বধ্যভূমিতে
সেদিন সীমন্ বলিভার
ভবিষ্যৎ বাণী উচ্চারণ করেন —
' না আমরা কখনো সুখী হব না,
কখনো না। '

আমরাও অনুভব করি
আমাদের এই স্বদেশেও সুখী হবনা
আমাদের সুখী হতে দেয়া হবেনা।
আমাদের জলজ্যান্ত প্রত্যক্ষগোচর জীবনটাই
অজ্ঞাতে কাণাকড়ি মূল্যে কবেই বিক্রি হয়ে গেছে।
জীবননীতি অর্থনীতি সমাজনীতি
এমনকি মহার্ঘ এ যুগের রাজনীতি
যা নিয়ত আমাদের জুড়ে রেখেছে
এক দুর্নিরীক্ষ্য অদৃশ্য সূত্রে—
হায়, সবকিছু সহ আমরা নিলামে
বিক্রি হয়ে গেছি!

নামমাত্র বা বিনিমূল্যে সওদা করার
নিষ্ঠুর চতুর সওদাগর আছে,
আছে আমাদেরই সম্মিলিত ক্ষমতার
বলে বলীয়ান প্রতিনিধি, সওদাগরের
কাছে বিক্রিত ক্রীতদাস।
এই গণতন্ত্রের জনগণ আজ প্রশ্নবোধক
সংহতির মুখোমুখি। রাষ্ট্রীয় কাঠামো?
এক সাম্রাজ্যবাদ যখন বিদায় নিল
আরেক সাম্রাজ্যবাদ হাঁ করা মুখে সম্মুখে খাড়া —
ষড়যন্ত্রটা খুব ছোট নয় জটিল সুগভীর।
আর আমরা? ধর্মের কানাগলি, জাতপাতের
নর্দমায় আবর্তিত বিবর্তিত,
বিভেদের চোরাবালিতে লুটুপুটু।
ভ্রষ্ট দেশনায়ক আখের গুছোয়
অবলীলায় দেশ বিক্রি করে।
আগামীকালের শিশু ঋণের দায়ভাগী!
ধর্মীয় মৌলবাদী, রাজনৈতিক মৌলবাদী,
মেকী মানবতাবাদী সবাই
হাত ধরে চলে, দলিত মথিত মানুষ।
জানা নেই কবে এই জঞ্জাল মুক্ত হবে দেশ,
আমরা কবে মুক্ত হবো।
সুখ আমাদের ধারেকাছে নেই
আমরা সুখী হবো না।

আমাদের অগুনিত জীবন কিনে নিয়ে
খোলা অর্থনীতির খোল্লমখোলা ময়দানে
এই আমাদের জীবনের মূল্যে
আড়ালের সেই সওদাগর
গড়েছে গগনচুম্বী হাওয়ামহলের সুখ।
বিক্রিত গণতন্ত্রের বিক্রিত জনগণ
কবে এই বন্ধনমুক্ত হবো জানিনা
আদৌ হব কিনা তাও তো জানিনা!
না আর কোনও দিন আমরা সুখী হবনা,
সুখের মিহিন আঁচলে চোখের জল
পারবনা কোনদিন মুছে নিতে পারব না।

আজ সাম্রাজ্যবাদী আর স্বদেশী দালাল
আমাদের ধ্বংসস্তুপে গিটারে সেতারে
যুগলবন্দী বাজায়, আজ কোন
ঊর্ধ্বলোকে সমাসীন ঈশ্বরের করুণা
আল্লাহর দোয়া মুক্তির দিশা দেখাবে না
আত্মশুদ্ধি, শাণিত চেতনা, সংঘবদ্ধ শক্তির দ্যোতনা
হয়তো একদিন মুক্তি আনবে,
সুচেতনার সুবাতাস বইবে —
আহাম্মক গাড়োল জড়বুদ্ধি আমরা
সেই সত্যকেও অনুভব করিনা। 

0 comments:

গোলকধাঁধা

৭:৩৯:০০ AM 0 Comments














© সুনীতি দেবনাথ

একদিন ছিলো তোমার আমার সবটা আকাশ,
অভিসারের নীলাম্বরীতে উঠতো হেসে মেঘের ফাঁকে।
সেদিন আমার দরজায় ঝুলানো থাকতো
সোহাগী বাতাস মসলিনের,
এখন আমরা বিমর্ষ দাঁড়িয়ে নদীর ভাঙ্গনের মুখে
এপারে আমি ওপারে তুমি মাঝখানে কান্নানদী—
এখন রোদের কণারা সুতীব্র ব্যথায় অথৈ সাগর,
আমরা কেউ কাউকে আর বিশ্বাস করিনা মোটে।

সমস্যাটা জানো আসলে এখানেই।
এই শীতে সুমেরুর বরফ জমে কত উঁচু পাহাড়,
পরিযায়ী পাখিরা উড়ে কত হাজার কিলোমিটার
পার হলো বিষাদী ডানায় আকাশে আকাশে
কত দূরে কোন ঝিমোনো ঝিলের কাছে
কোন শিরিষ গাছের বাউল ছায়ায় জমালো ভীড়
মোটেও তার খবর রাখি না।
অথচ আমার পাশে তোমার পাশে গড়িয়ে যাচ্ছে করোটি
জমছে পাহাড় স্তুপে স্তুপে বীভৎস হাড়গোড়ের
পেরোতে পারছো না তুমিও আমিও না।

তুমি চাও আমি উত্তরে গেলে তুমি যাবে দক্ষিণে
মুখ দেখাদেখি কুটিল হাসির বিনিময়ও বন্ধ,
অথচ দেখো অবাক কাণ্ড একই পথের যাত্রী আমরা,
তবু তুমি আমি কেউ কাউকে একদমই বিশ্বাস করি না।
তুমি চাও মাটিটা দু' ফাঁক হোক গিলে নিক আমাকে
হাসির ফিচকে রেখা ঠোঁটে ঝুলিয়ে ওপারে তুমি,
আমি ভাবি ফাটলটা নিশ্চিতই গিলবে তোমাকে।
কিছুই ঘটে না শুধু তোমাকে আমাকে বিচ্ছিন্ন করে
মাঝখানে নদীটি খিলখিল বয়ে চলে যায়।

দু'জনেই ভাবি আমার সূর্য আমার আলো
কালো আঁধার তোমার থাক, অথচ তুমি আমি
আলোয় ভাসি প্রখর তাপে দগ্ধ হয়ে শীতল ছায়ায়
একই সাথে জুড়োতে চাই, আঁধার ঢেউয়ে সাঁতার কাটি,
অদৃশ্য এক লোহার শেকল আমায় বাঁধে তোমাকেও।
একটা আকাশ তোমার মাথায় আমার মাথায়
একটা বাতাস তোমায় ছুঁয়ে ভালোবাসায় আমায় জড়ায়।
অথচ তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না মোটে,
তোমাকে বিশ্বাস করতে আমিও থমকে যাই।

কাজরী,
২ জুলাই, ২০১৬

0 comments:

দিনবদলের পদ্যকথা

১:৪১:০০ AM 0 Comments














© সুনীতি দেবনাথ

ক'দিন হলো আকাশটা নীল থেকে সাদা হলো পালাবদলে নয়া কূটকৌশলে দান চালাচালি
মার্কিনী - কিউবান ভবিষ্যৎ নির্ধারণ হয়ে গেলো।
কিউবার বন্ধুরা এখন চে গেভারার নামটা
আমার বারবার মনে আসছে, আমাকে ক্ষমা করো!
এমন দিনবদলের বার্তালাপ দিন বদলাবে কিনা  জানিনা মোটেই।
ঠিক অষ্টাশী বছর আগে প্রথম বারের মতন
কিউবায় এসেছিলেন মার্কিন এক রাষ্ট্রপতি!
মাত্র বারোটি বছর কম পূর্ণ হতে একটি শতাব্দী!

এই প্রায় শতাব্দী জোড়া সময়ে কত কূটকৌশল
চোরাগুপ্তা লড়াই আর গগনস্পর্শী লোভের অগ্নিশিখা!
কিউবার মৃত্তিকা বড় পেলব উর্বর, দামি খনিজে ভরপুর,
তাই শকুনেরা ঘোরাফেরা করে বহুকাল আশেপাশে —
মার্কিনী তৎপরতা ছিলো বহুকাল ধরে এই ভূমি দখলের,
ক্যারিবিয়ান সাগরের অগুনতি ঢেউ সাক্ষী আছে  —
কতনা বিষাদিত গূঢ় চক্রান্তের, কত রক্তপাতের সাক্ষী আছে রোদেলা নীলাকাশ!

কম্যুনিস্ট দেশ বিপ্লবোত্তর কালে হাত ধরে রাশিয়ার —
ক্রুদ্ধ হলো যুক্তরাষ্ট্র ফুঁসে উঠলো ক্রুদ্ধ অগ্নি সংকেতে!
১৯২৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ত্রিশতম প্রেসিডেন্ট কেলভিন কুলিজ
মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ইউ এস এস টেক্সাসে
দর্পিত পা রেখে নেমেছিলেন হাভানার বন্দরে!
তারপর অষ্টাশী বছর এক ঘৃণ্য আগ্রাসন - চক্র
কখনো পর্দার অন্তরালে প্রকাশ্যে কখনো,
বড় নিষ্ঠুর গতিতে আবর্তিত হয়েছিল।
বিপ্লবী অগ্নিপরিধির সীমানা পেরিয়ে কিউবা
স্বাধীনতার কূলে উড়িয়েছিল রক্ত পতাকা —
ফিদেল কাস্ত্রো কমিউনিস্ট দেশের রাষ্ট্রনেতা।
যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে ঘোষণা করে এক ক্রুঢ় অবরোধ নীতি,
প্রেসিডেন্ট আইসেনহাওয়ার কিউবান প্রতিবিপ্লবীদের নিয়ে গড়ে তুললেন বাহিনী,
সি আই এ নির্দেশ পেলো কিউবা আক্রমণের,
দুহাজার চার সালে প্রেসিডেন্ট বুশ নগ্নভাবে
আদেশ দিলেন সামরিক আক্রমণ,  আগ্রাসনের,
আরো নগ্ন - ঘৃণ্য আক্রমণের, গঠিত হলো
" কমিশন ফর অ্যাসিস্ট্যান্স টু আ নিউ কিউবা "!
ক্ষমতার বেপরোয়া লোভ বেপরোয়া আগুন হয়ে
এই সেদিন দুনিয়াকে চমকে দিয়ে জ্বলেছিলো দাউদাউ!

দুনিয়ার সবচেয়ে বড় তাকতদার দানবীয় শক্তি
দিনের পর দিন রাতের পর রাত সন্ত্রাসী আক্রমণ
আর ঘৃণ্য অবরোধ নীতিতে পিষে চুরমার করার ধান্ধায় ছিল
বিপ্লবে বিজয়ী সমুদ্র মেখলা বিশ্বের বিস্ময় কিউবাকে,
সারা দুনিয়ার বিপ্লবী চোখে স্বপ্ন জাগানো কিউবাকে,
দানব শক্তির পরাজয় ঘোষিত হলো বিশ্ব দরবারে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামার সফর ভাষণ
উচ্চকিত কণ্ঠস্বর চুপসে ম্রিয়মাণ হলো এই সেদিন
ঊননব্বই বছরের বিপ্লবী যুবক ফিদেল কাস্ত্রোর পত্রাঘাতে,
বিপ্লবী স্বপ্নদেখা চোখ সব অনিমিষে স্পষ্ট চেয়ে আছে —
সন্ত্রাসী দানবের পতন হবে নাকি বিপ্লবীর হবে বিজয় ?
সারা বিশ্বে নয়া রাজনীতির মেরুকরণের পালা এখন!

সি এম সি, ভেলোর,
১ এপ্রিল, ২০১৬

0 comments:

মোহনা

৯:১৩:০০ PM 0 Comments















  © সুনীতি দেবনাথ

মৃত্যু থেকে মৃত্যুতে পদচারণা করে
রূপ থেকে রূপান্তরে রূপায়িত হয়ে
আমি চলেছি অন্য ভুবনের অন্য এক
অমল জ্যোতির অনাস্বাদিত মোহনায়।
কে তুমি পেছনে থেকে অবিরাম, 
কে তুমি আমার আঁচল ধরে টানো?
জানো না এ জগতে এ জীবনে
স্থির কিছু নেই সবই অস্থির চলমান!
চলিষ্ণুতা জীবনের একমাত্র সত্য, 
জীবনের আরেক নাম পথ,  চলাই তার
সারসত্য গতিতে সমর্পিত অনির্বাণ সে! 

সেই কবে ছিল এক অন্ধকার অন্তহীন
তারই মাঝে ঝলকে উঠেছিল সুপ্রকাশ
আলোয় বিভাসিত অমিয় প্রাণকণা, 
প্রাণকণা সেও তো রূপান্তরিত প্রতিক্ষণ
সেও তো চলমান চিরকাল অবিরাম।
অন্ধকার থেকে আলোর বৈভবে
জন্মের প্রথম দিনে কান্নার উতরোলে
বলেছি আমি কন্যা আমি পৃথিবীর নারী 
অনন্তকাল মৃত্তিকাকন্যা নারীই শুধু।
আমার কি রূপান্তর নেই, স্থির প্রতিমা?
শুধু কোমল নবনী কন্যা, মোহিনী প্রিয়া
জায়া ও স্নেহদা জননী? আর কিছু নই?
রূপান্তরহীন গতিহীন এইমাত্র পরিচয়? 
সীমার বন্ধনে সীমায়িত রুদ্ধ আত্মা, 
চিরন্তনী নারী তার বেশী কণামাত্র নই?
গতিশীল রূপান্তরে স্থির চিত্রকলা!

তাহলে আমি কি জীবিত নই, গতি নেই
প্রাণ নেই,  পিরামিডে স্থাপিত মমি 
অজন্তার গুহাচিত্র, কোণার্কের নৃত্যপরা
ভাস্করের ছেনি খোদাই পাথর প্রতিমা!
দ্য ভিঞ্চির রহস্যময়ী মোনালিসা?
তার বেশী কোনদিনই কিছুই নই? 
তাই যদি হয় প্রাণহীন আবেগ,
মৃত ভাবনার খোলশে জাবরকাটা
আর স্থবিরতায় আবদ্ধ নিষ্প্রাণতা
তার বেশী অন্য কোন পরিচয়
নারীর হতেই পারে না কোনদিন।
অথচ প্রতিটি দিন প্রতিটি পল
সুতীব্র এক গতিশীল আলোড়ন
রূপ থেকে রূপান্তরে অতিক্রমন
আমাকে ভেঙ্গে নিয়ে যায় সম্মুখে
পেছনে ফেরার পথ রুদ্ধ দেখি
প্রাণের অমোঘ প্রবাহে চলমান
আমার অস্তিত্ব হাহাকারে ভেসে
অনন্ত মোহনায় মিশে যেতে চায়
সব তাহলে মিথ্যা মরীচিকা মাত্র?
আমি বিশ্বাস করি না করবোও না।

আজ আমি প্রশ্ন করতে চাই কেন,
কেন প্রবঞ্চিত আমি যুগ যুগ ধরে?
কেন আমি অধিকার আর মুক্তির
নিশ্চিত দাবি করি যখন জীবনের
মৌল অধিকারে নখ দন্ত বিদারিত
তুমি প্রশ্ন তোল নারীই দায়ী মাটি দায়ী
পৃথিবীর তাবৎ যুদ্ধ আর শান্তিহীনতার?
আমার বিস্ময় আকাশ ছোঁয়া স্তম্ভিত!
মাটি তোমার ধাত্রীভূমি  নারী জননী
সেই সত্য ভুলে গিয়ে অধিকার মোহে
তাদের দায়ী করার আগে আয়নায় কি
একবারও দেখোনা স্বরূপ? স্বাধিকারে
প্রমত্ত তুমি ধাত্রী জননীকে ভাব সম্পদ
তারচেয়ে একবিন্দু কম বেশী  নয়। 
আমি পৃথিবীর কন্যা আজ প্রশ্ন করি—
নারীকে শৃঙ্খলে বাঁধার অধিকার
নিয়ম রীতিনীতির স্রষ্টা তুমি,
পৃথিবীকে কৃত্রিম রেখাচিত্রে খণ্ডিত
করার অধিকার কে তোমার হাতে দিল?
তুমি ভণ্ড প্রতারক, প্রতারণা শক্তি শুধু।

এবার প্রকৃত যুদ্ধ শুরু হবে নিশ্চিত।
এ পৃথিবী ধাত্রী ভূমি আমার তোমার,
এই নারী মুক্ত কন্যা পৃথিবী মাতার,
এই পথ পাশাপাশি চলাচলের সকলের 
আর অনন্ত এ মোহনা সবার মিলনের!
এই ভূমি, জল, আকাশ, বাতাস
বিভাসিত আলোকিত প্রাণের মহিমা
যতখানি তোমার ভাবো ঠিক ততখানি
সুনির্দিষ্ট সুনির্বাচিত তোমার আমার।
শত্রুপক্ষ কখনো ভাবিনি, মিত্র হয়ে
প্রসারিত করো হাত, হাত ধরাধরি করে
অবশ্যই পেয়ে যাবো আলোর মোহনা,
তোমার আমার স্বপ্নের সর্বশেষ ঠিকানা!

    কাজরী 
    ২১ এপ্রিল, ২০১৫

0 comments:

অন্য অনুভব

৯:০৭:০০ PM 0 Comments

















© সুনীতি দেবনাথ

আমি রাতের আঁধারে যখন নিমগ্ন হয়ে যাই,
আর আমি আমার আত্মাকে নিয়ে একা একা
অন্ধকারের পাটাতনে বসে লোফালুফি খেলি,
তখন কোন কোনদিন একফালি চাঁদ মলিন হয়ে
আকাশের এক কিনারা থেকে চুপিচুপি চেয়ে থাকে
আর শেষ রাতের কুয়াশার আস্তর ছিঁড়েখুঁড়ে
কিছু কিছু মিটমিট তারা ক্ষীণ সবুজ আলো
ছুঁড়ে দেয় বহুকালের প্রাচীন এই পৃথিবীর পিঠে।

মহাকালের অতি ক্ষুদ্র এক খণ্ডাংশে এই অবস্থানে
আমি মানুষের সংসারে খুব বেশি সম্পদ সুখ  চাইনি,
চেয়েছি শুধু কেউ বেশি কেউ কম নয় সমান সমান সবার মাঝে ভাগাভাগি হোক মৌল সম্পদ আর অধিকারের।
এই চাওয়া সবচেয়ে বড় চাওয়া জানি আর তাই
জীবনের শেষ দিগন্তে হিসেব - নিকেশ মেলাতে গিয়ে দেখি,
আমাকে ঘিরে থাকা রাত্রির আঁধারের দীর্ঘশ্বাস
আমাকে জড়িয়ে থাকা মৃত্তিকার অশ্রুসিক্ত বন্ধন
অরণ্যের অন্তর জোড়া হু হু হতাশ্বাস আর
নদীর কলোচ্ছ্বাসে সুগভীর ক্রন্দনের রোল।

এতোসব কিছু আমাকে ঘিরে থাকা আকাশ বাতাস
আর কল কোলাহলরত জীবনের হা হুতাশ —
সবকিছু আমাকে ক্রমাগত দিনের পর দিন
যণ্ত্রণার ভিন্নতর কুৎসিত মানচিত্রে নির্বাসিত করে
আমার কবিতায় তাই আগুনের তাণ্ডব চিরদিন
আমার কবিতার আর্তনাদ আকাশ করে ফালাফালা আর —
কবিতা শেষ রাত্রির আলোর প্রত্যাশার বিলাপ।

এবার আলোর প্রার্থনা আর স্বপ্নিল নতুন সকালের
সুবিমল কামনায় আমি স্নিগ্ধতায় শেষ ডুব দিতে চাই।

   কাজরী,
২৭ জানুয়ারি, ২০১৬

0 comments:

কান পেতে শোনো

৫:১০:০০ AM 0 Comments
















        © সুনীতি দেবনাথ
             
       
এই অন্ধ করা অন্ধকারে চোখও তো
অন্ধ হয়ে গেছে সবই ঢাকা কালো
চাদরে, আর দূর থেকে গুনগুন অস্পষ্ট
ভায়োলিনের করুণ মূর্ছনার মত
নাকি সদ্য তাজা প্রাণের টুকরো
সন্তানহারা মায়ের একা কান্নার মত
একটা আওয়াজ ভেসে আসছে।
শুনতে পাচ্ছো কি?
এ কি কান্নার সুর? পাঁজরের ফাঁকে
পেঁচিয়ে থাকা ধ্বনি কেঁপে কেঁপে
বেরিয়ে আসতে চাইছে অনর্গল স্রোতে
কে কাঁদে একাকী প্রান্তরে স্তব্ধতার
স্তবকের স্তর ভেঙ্গে ভেঙ্গে?

এ কোন নারী আঁচল লুটানো রুক্ষ চুল
ছড়ানো হিমালয় থেকে কন্যাকুমারীর
সমুদ্র তটে ? ঊর্ধ্বে উত্থিত দুটি বাহু
নিরালম্ব হয়ে আকাশের শূন্যতায়
কোন অবলম্বন আঁকড়ে ধরতে চায়?
একবার চোখ খুলে তাকিয়ে দেখো
এ নারীর দুটি চোখে ধারাস্রোত গঙ্গা
আর ব্রহ্মপুত্রের দূষিত দুটি জলধারা!
এ কোন রমণী একা কাঁদে অনন্ত আঁধারে
বিলাপে ঝরে অপার বেদনা!
মনে কি জাগেনা প্রশ্ন কেন কাঁদে নারী?
এ নারীর মুখ দেখে চেনা বলে হয় না কি মনে
এ আমার এ তোমার মা স্বদেশ জননী!
একবারও জাগে না মনে
ডেকে উঠি মা মা বলে, বলে উঠি
আকুল হয়ে উঠগো ভারত লক্ষ্মী
এই ধুলিশয্যা ছেড়ে, এই দীন বেশ ছেড়ে
জেগে ওঠো পূর্ণ মহিমায়
রাজ রাজেন্দ্রানী রূপে অমিত জীবনে!

জানি মাগো তোমার সন্তান হারিয়েছে
বিশ্বাসের দাম, ভুলে গেছে আত্মপরিচয়
তবু কেঁদোনা মাগো,  তুমি যে শত
সাধনার ধন অমূল্য রতন, তুমি জননী।
একবার কান পেতে শোনো যখন কাঁদে
হাজার লক্ষ কোটি মানুষ, আমার সন্তান
আমি কি না কেঁদে পারি?
আমি কি কেবল মাটি কেনাবেচার আর মানচিত্ররেখা?
দেশ কি কেবল মাটিরপ্রতিমা?
জাননা এ সত্য নয়?
আমার অন্তরের গভীরতম প্রদেশে
বিচিত্র সুরে কে যেন বলে ওঠে মানুষ
কেবল মানুষ দিয়েই তো গড়ে ওঠে
দেশ। এমন আত্মবিস্মৃতি আমাদের
সমগ্র চেতনাকে প্রাচীন চীনের আফিং
খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছে বুঝিবা।
এই ঘুম কি ভাঙবে কোনদিন জানিনা
জানিনা আর কতদিন চলবে শকুনির
পাশা খেলার কূটচাল আর নির্দোষ
পাণ্ডব যাবে বনবাসে বারেবার!
আমি স্পষ্ট চোখে দেখি আমার স্থাবর
অস্থাবর সব সম্পত্তি বিক্রি হয়ে যায়
আর অসহায় যন্ত্রণায় আমি কঁকিয়ে  উঠি,
আমার কান্না আমাকেই করে বিদ্রূপ,
আমি তো বিদ্রোহী হইনি।
চোখ বুজে না দেখার ভান করা
আমার রক্তে মিশে গেছে।

আজ মানুষ কাঁদছে কাঁদুক,
আজ দেশ কাঁদছে কাঁদতে দাও,
শুধু কান্নার আওয়াজ রুদ্ধ রাখো
দেশে যে আজ  সেরা উৎসব! প্রজাতন্ত্র দিবস!
প্রজাগণ নিশ্চুপ থাকো
দুনিয়ার সেরা দেশের সর্বসেরা বন্ধু
আমাদের অতিথি!
এখন কান্না চেপে রাখো,
দেশের বদনাম হবে।
আজ সারাটা দেশে আনাচে কানাচে
অলিতে গলিতে তেরঙা উড়াও
স্বচ্ছ ভারতের মাটিতে জৌলুস মানাও।
টিভির পর্দায় দেখো রঙবাহারী জৌলুস
আর গোপন কক্ষে মহামান্য অতিথি সহ
আগামীকালের প্রগতির চুক্তিপত্র সব
দফায় দফায় স্বাক্ষরিত হচ্ছে।
দেশ কাঁদছে কাঁদুক, মানুষ কাঁদছে কাঁদুক,
কান পেতে শোনো পৃথিবীর সেরা বন্ধু
আমাদের সেরা উৎসবে সেরা অতিথি!

কাজরী,
২৬ জানুয়ারি, ২০১৫

0 comments:

শরৎ এলো

১০:০৯:০০ PM 0 Comments
















© সুনীতি দেবনাথ

শেষ রাত্রির ক্লান্ত প্রহরে একলা ঠাণ্ডা চাঁদ
শীতল হাতে ছড়িয়ে দেয় সোহাগী ম্লান জ্যোৎস্না
নিরালা নদীচরে হু হু প্রান্তরে সারাটি চরাচরে।
প্রৌঢ়া পৃথিবী শ্লথ শরীরে আড়মোড়া ভেঙ্গে
বিবশ শরীরে পাশ ফিরে চোখ বুজে।
হঠাৎ মৃদু শীতল দমকা বাতাসে শিশিরে ভেজা
এক দঙ্গল শিউলির নরম গন্ধ ঝাপটা মারে।
চমকে তাকায় পৃথিবী নরম সোনালি আলোর ঘটা,
ভেজা কুয়াশায় ঘাসের ডগায় মুক্তোবিন্দু হাসে,
নদীর চরে গুচ্ছ সাদা কাশ মত্ত বাতাসে দোলে
আকাশে নীলের মহিমা হারায় স্তরে স্তরে সাদা মেঘে।
জল বর্ষাণো ক্লান্ত বর্ষা শেষে শরৎ আসে স্নিগ্ধ হেসে।

কাজরী,
২৩ জুলাই, ২০১৬

0 comments:

নক্ষত্র

৩:০৩:০০ AM 0 Comments















© সুনীতি দেবনাথ

মহাকাশ থেকে কোন মহতী লগ্নে
সবচেয়ে উজ্জ্বল একটি নক্ষত্রের
পতন হয়েছিল সেদিন ভারত মহাসাগরে,
দুরন্ত তরঙ্গে আন্দোলিত হয়ে নক্ষত্রটি
ভেসে ভেসে এসে থামলো রামেশ্বরমে!
ভারত জননী উল্লসিত হৃদয়ে
কোলে তুলে নিলেন তাকে
বিস্ময়ে তাকালেন তার দিকে —
এ যে দেখি পরম রতন মানব শিশু!

সেই শিশু দিনে দিনে বেড়ে উঠলো
এতোখানি বড়,  দুহাতে আকাশ ছুঁয়ে নেয়,
স্বপ্ন দেখে আর স্বপ্নের ফোয়ারা ছড়ায়
সারাটি দেশে দেশ পেরিয়ে সারা বিশ্বে।
বিশ্ববাসী জেনে গেল ঐ মহামানব
নক্ষত্রের মতো উজ্জ্বল,  ভারত সন্তান।
আমরা আশ্বস্ত হয়েছি বিশ্বস্ত হয়েছি
জেনেছি আকাশ জয়ী বিজ্ঞানী
মহান মানব তিনি মিসাইল ম্যান!

আকাশ ছোঁয়া মানুষটি পরিশুদ্ধ অস্তিত্বে,
তিনি সকল ধর্মের সীমানা পেরিয়ে
সর্বশ্রেষ্ঠ প্রকাশ মহান মানবাত্মার,
কোন গণ্ডিরেখা তাঁকে সীমায় সীমিত করেনি,
ভারত রত্ন বা প্রেসিডেন্টের আসন
বড় ছোট ছিল
বিশাল ব্যাপ্তির মানুষটির জন্য।
আজ আবার নক্ষত্র পতনের দিন,
আজ তিনি চলে গেলেন দেশের,
পৃথিবীর সীমানা ছাড়িয়ে কোন মহাশূন্যে!
আর সবচেয়ে বিস্ময়ের ব্যাপার
ভারতবর্ষ আজ জানিয়ে দিল
হাজারো বিভেদ আর বৈচিত্র্যের মাঝেও
এই দেশ অন্তরে সংহতির মহিমায় এক।
আর এ ঐক্যের ঐকতান সৃস্টিতে বুঝি
অগ্নিহোত্রী আলোকদীপ্ত নক্ষত্র কালাম।
হে নক্ষত্র মানব কালাম, আমরা সবাই,
সব ভারতবাসী তোমার যাত্রাপথকে
চোখের জলে ধুয়ে দিতে চাই আজ!

কাজরী,
২৭ জুলাই, ২০১৫

0 comments:

মাটি আর নারী

২:৫০:০০ AM 0 Comments














© সুনীতি দেবনাথ

সেদিন সেই যাযাবরী জীবনে শীতল সাইবেরিয়ায়
পশুপালক তোমাদের সাথে আমিও তো ছিলাম
প্রান্তরের পর প্রান্তরে সবুজের সে কী তরঙ্গ উদ্দাম!
সেদিনও বরফ ঠাণ্ডায় যখন আমি কুঁকড়ে যেতাম,
তোমাদের সন্তানগুলিকে বুকে চেপে শেষ উষ্ণতা
বিন্দু বিন্দু ওদের দেহে সঞ্চালন করে দিতে হবে
সেই সত্য সবার উপরে জেনেছি মেনেছি।
আর ইউরাল পর্বতের অরণ্য থেকে
বুনো ঘোড়াকে বশ মানিয়ে এপার ওপার
পিঙ্গল চুল উড়িয়ে টগবগ টগবগ ছুটতে তোমরা।

এই করে একদিন সব ঘাস শেষ হতো
পরম্পরায় সন্তান সন্ততি বেড়ে পরিণাম খাদ্যাভাব
নতুন এলাকায় দিতে হতো পাড়ি
পশুর পাল যাবতীয় অস্ত্রশস্ত্র শিশু নারী সহ ,
নিঃসন্দেহে জানি যেসব নারীর দেহে জোয়ারের খেলা নেই
ভাঁটার টানে কুঁজো হয়ে প্রতীক্ষার শেষ দিন গুনে যেতো
বর্জিত হতো তারা খাদ্যহীন তাঁবুহীন সাথীহীন সে প্রান্তরে।
সেই সব নারী পৃথিবীর অনাদৃতা অবাঞ্ছিতা কন্যা মাত্র।
সেই আদিম পৃথিবীর নাবাল মৃত্তিকায় কত বৃদ্ধা জননীর দেহ
ইউরেশীয় চিল শকুন বুনো ধূর্ত শেয়ালেরা ছিঁড়েখুঁড়ে আহ্লাদে খেয়েছে,
হাড়গোড় মিশে গেছে মৃত্তিকার স্তরে,
এসব করুণ গাথা ভূতাত্ত্বিক নৃতাত্ত্বিকের জ্ঞানের বিষয়।

গোষ্ঠীবদ্ধ জনসংখ্যা যখন লাগামছাড়া
অশ্বপৃষ্ঠে ছোট ছোট দলে পুরুষেরা ছুটলো
ইউরোপ আর মধ্যপ্রাচ্য বিজয়ে, তখন তাদের দলে
পরিত্যক্ত আমি নারী, বিজয় এনে দেবে
নবীনা নারীদের—
যোদ্ধা পুরুষের যুদ্ধক্ষেত্রে নারী বিবর্জিতা।
আর্যদের পূর্বপুরুষ এরা, এদেরই একটি শাখা
কালক্রমে পৌঁছে গিয়েছিল ইরান মরুর বুকে
রুক্ষ কঠোর জীবনে ওরা শক্ত পেশীর শরীরে
যুদ্ধ করে করে অপরিমেয় শক্তির আধার হলো।
ইঙ্গিতে ওদের ডাকছিল সুজলা সুফলা ভারতবর্ষ,
তাই অশ্বশক্তি অস্ত্রশক্তিতে বলীয়ান ওরা পৌঁছালো
গিরিপথ পেরিয়ে এদেশের অমল মধুর মাটিতে।
এবারও তাদের সাথে আমি নারী ঠাঁই পাইনি
ইতিহাস বলে।

ভূস্বর্গ কাশ্মীর দখল করে সিন্ধু অববাহিকায়
ইন্দোইরানীয় পুরুষ তোমরা উজ্জ্বল সূর্যালোকের মত
তেজোদীপ্ত আবির্ভাবে ক্ষমতার বলে বলীয়ান
পঞ্চ নদীর দেশ দখল করলে, দখল করলে আমাকে,
আমি অনার্য নারী সেদিন আর্য পুরুষের সম্পদ।
এভাবে ঠিক এমনি করে পুরুষ তুমি আমার সমগ্র সত্তাকে
একবার নয় বারবার দখল করেছো, সম্পদ বানিয়েছো।
যোদ্ধা পুরুষ অমিত শক্তিশালী মাটির দখল
নেবার সাথে সাথে ভূমিকন্যাদের দখল করেছো।
এ তোমার যুগ যুগের সঞ্চিত অপরাধ আর
ভূমিকন্যাদের অশ্রুসিক্ত জীবনের অপমান।
আমি আর আমার মত নারীরা যেন বোবা পশু,
পশুশিকারী মদমত্ত পুরুষ বন্য পশুর মতই
আমার দখলদারী চালিয়ে গেলে চিরটা কাল।
তোমাদের অশ্বখুরে উত্থিত ধুলোয় ঢেকে গেল
আমার চোখের জলের স্বপ্নমাখা উত্তাল তরঙ্গ।

বিজয়ী আর্য সারাটি উত্তর ভারত দখল নিয়ে
এলো জলজঙ্গলের দেশ রূপবতী বাংলায়।
আবারো ভূমিপুত্র নিহত বিতাড়িত হলো আর
কোমলকান্তা লাবনীমাখা ভূমিকন্যা অপহৃতা
লাঞ্ছিতা।
শ্যামলী বঙ্গকন্যার হাতে লোহার শিকল আর
পুরুষ দেহের রক্ত টিকায় ব্যক্তি পুরুষের চিহ্নিত
সম্পত্তি হলো নারী।
আজো এতদিনের এপারে এসে আমি নোয়া সিঁদুরের
আনুগত্যের বন্ধন মুক্ত নারী হলাম না।
মাটি আর নারী বুঝি পুরুষের ঐতিহাসিক শাশ্বত সম্পদ!

কাজরী,
২৫ জুলাই, ২০১৫

0 comments:

বর্ষা ও কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

৮:৫১:০০ PM 0 Comments














© সুুনীতি দেবনাথ

' জল পড়ে পাতা নড়ে ' দিয়ে একদিন যে শিশু কবির অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল বর্ষা ঋতুর সঙ্গে অতি শৈশবে, সে সম্পর্ক জীবনের নানা তরঙ্গাভিঘাতের পরেও অবিক্ষত থেকে গিয়েছিল। কবি রবীন্দ্রনাথের জীবনে ছয়টি ঋতুর বর্ণ - রূপ - রস চিরটাকাল গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল। প্রকৃতির কবির অন্তরাত্মার সঙ্গে ঋতুপর্যায় তাদের তাল - লয় - ছন্দে বাঁধা পড়ে গিয়েছিল। বসন্ত ঋতু ঋতুরাজ বলে কথিত হলেও রবীন্দ্রনাথের কাছে বর্ষাই যেন ছিলো ঋতুরাজ। একদা অতি শৈশবে বৃষ্টির সেইযে বিশেষ তাল, লয় আর ছন্দের পতন, আর তার সঙ্গে তরুলতার পাতার বর্ণিল ছন্দময় নড়ে ওঠা শিশু কবির মনে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে তা আজন্ম বন্ধনে কবিকে বেঁধে ফেলে। প্রতিটি ঋতুর নিজস্ব খেয়ালীপনা কবির মনে নানা রঙের দোলা দিলেও বর্ষার সঙ্গে সর্বাপেক্ষা গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল রবীন্দ্রনাথের। তাই ' জল পড়ে পাতা নড়ে '-র পর কবিকে ' বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর নদেয় এলো বান 'যেন অন্তরে অন্তরে নাড়িয়ে দিয়েছিল। বৃষ্টির বর্ণবৈচিত্রে মুগ্ধ কবি দেখেন,
   ও পারেতে বিষ্টি এলো,  ঝাপসা গাছপালা।
  এ পারেতে মেঘের মাথায় এক শো মানিক জ্বালা। শৈশবের এই অদ্ভুত দেখা ও জানা ক্রমে ক্রমে বয়োবৃদ্ধির সাথে সাথে ' নব নব রূপে ...' বর্ষাকে অনুভূতির পরতে পরতে জানা ও বুঝার মাধ্যমে চিরকালীন করে বেঁধে রাখতে লাগলো।
    বিদ্যাপতি চণ্ডীদাসের মরমী বৈষ্ণব পদাবলী শুনে শুনে আনমনা উদাসী কবি ভাবুক তন্ময় বৈষ্ণব পদকর্তা যেন হয়ে যান। লিখে ফেললেন 'ভানুসিংহের পদাবলী '। এখানেও বর্ষার অনিবার্য পদ সঞ্চার,
' শাওন গগনে ঘোর ঘনঘটা, নিশীথ যামিনী রে।
কুঞ্জপথে,সখি,  কৈসে যাওব অবলা কামিনী রে।
উন্মদ পবনে যমুনা তর্জিত, ঘন ঘন গর্জিত মেহ।
দমকত বিদ্যুত,পথতরু লুণ্ঠিত, থরহর কম্পিত দেহ।
ঘন ঘন রিমঝিম রিমঝিম রিমঝিম বরখত নীরদপুঞ্জ। '
' শ্রাবণ আকাশে মেঘের ঘোরতর সজ্জা, নিশীথ অন্ধকার রাত্রি । শ্রীরাধা এমনি রাত্রিতে প্রিয়তম শ্রীকৃষ্ণের সাথে মিলনের জন্য  কুঞ্জ অভিসারে কিভাবে যাবেন? বাতাস যেন পাগলপারা হয়ে যমুনার জলকে তর্জন করছে, কিছুক্ষণ পর পর মেঘের গর্জন শোনা যাচ্ছে, চমকাচ্ছে বিদ্যুৎ,লুটিয়ে পড়েছে পথে  বৃক্ষরাজি,  থরথর কাঁপছে শরীর। মেঘপুঞ্জ ঘন ঘন রিমঝিম বৃষ্টি বর্ষণ করেই চলেছে । '
   কী অপরূপ রাত্রিকালীন বর্ষার বর্ণনা! কিশোর কবির ভাষা  যেন কালো ক্যানভাসে গভীর রাতের বর্ষার ভয়ঙ্কর সুন্দর ছবি এঁকে চলেছে আনমনে!          
বর্ষা ঋতু মানব মনের গহীনে উথালপাথাল কাণ্ড কারখানা ঘটিয়ে আনমনা যেমন করে তেমনি অনির্বচনীয় এক বেদনার আস্তরণও ছড়িয়ে দেয়। আবার বিদ্যুল্লেখার উজ্জ্বল আঁকাবাঁকা তড়িৎ গতির আনন্দ ছবিও যেন এঁকে দেয়। এই প্রসঙ্গে কবির পরবর্তীতে লেখা গানের প্রথম দুটি চরণ উদ্ধার করা যেতে পারে,
মোর ভাবনারে কী হাওয়ায় মাতালো
দোলে মন দোলে অকারণ হরষে  ।। ...
   জীবনস্মৃতিতে রবীন্দ্রনাথ নিজেই বলেছেন যে , জীবনের  এক একটা পর্যায়ে এক একটা ঋতু বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে । সেই হিসেবে বাল্যকালের উপর বর্ষা ঋতুর প্রভাব লক্ষণীয় ।
কবি বলেন, " বাল্যকালের দিকে যখন তাকাইয়া দেখি তখন সকলের চেয়ে স্পষ্ট করিয়া মনে পড়ে তখনকার বর্ষার দিনগুলি বাতাসের বেগে জলের ছাঁটে বারান্দা একেবারে ভাসিয়া যাইতেছে, সারি সারি ঘরের সমস্ত দরজা বন্ধ হইয়াছে, প্যারীবুড়ি কক্ষে একটা বড় ঝুড়িতে তরিতরকারি বাজার করিয়া ভিজিতে ভিজিতে জলকাদা ভাঙ্গিয়া আসিতেছে, আমি বিনা কারণে দীর্ঘ বারান্দায় প্রবল আনন্দে ছুটিয়া বেড়াইতেছি।আর,  মনে পড়ে, ইস্কুলে গিয়াছি; দরমায় ঘেরা দালানে আমাদের ক্লাশ বসিয়াছে ; "... এরপর রবীন্দ্রনাথের বর্ণনাতে বর্ষা ঋতু জীবন্ত মূর্তি পরিগ্রহ করে ভয়ানক সৌন্দর্যে সামনে এসে দাঁড়ালো, "অপরাহ্নে ঘনঘোর মেঘের স্তুপে স্তুপে আকাশ ছাইয়া গিয়াছে ;দেখিতে দেখিতে নিবিড় ধারায় বৃষ্টি নামিয়া আসিল;থাকিয়া থাকিয়া দীর্ঘ একটানা মেঘ- ডাকার শব্দ ; আকাশটাকে যেন বিদ্যুতের নখ দিয়া একপ্রান্ত হইতে আর - এক প্রান্ত পর্যন্ত কোন্ পাগলি ছিঁড়িয়া ফাড়িয়া ফেলিতেছে ;বাতাসের দমকায় দরমার বেড়া ভাঙ্গিয়া পড়িতে  চায় ; অন্ধকারে ভালো করিয়া বইয়ের অক্ষর দেখা যায় না, পণ্ডিতমশায় পড়া বন্ধ করিয়া দিয়াছেন ; বাহিরের ঝড় বাদলটার উপরেই ছুটাছুটি মাতামাতির বরাত দিয়া বন্ধ ছুটিতে বেঞ্চির উপরে বসিয়া পা দুলাইতে দুলাইতে মনটাকে তেপান্তরের মাঠ পার করিয়া দৌড় করাইতেছি। আরো মনে পড়ে শ্রাবণের গভীর রাত্রি, ঘুমের ফাঁকের মধ্য দিয়া ঘন বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ মনের ভিতরে সুপ্তির চেয়েও নিবিড়তর একটা পুলক জমাইয়া তুলিতেছে ;..."।
      প্রসঙ্গত মনে পড়ে কবির বিরচিত বর্ষা সঙ্গীতের কথা,
    পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে
পাগল আমার মন জেগে - উঠে।। ...
কিংবা,
  আজি ঝরোঝরো মুখর বাদরদিনে
জানি নে, জানি নে কিছুতে কেন যে মন লাগে না।। ...
সঙ্গীত শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঋতু বিষয়ক অনেক অনেক সঙ্গীত রচনা করেছেন। সম্ভবত এই সঙ্গীত তালিকায় বর্ষা পর্যায়ের সঙ্গীতই প্রাধান্য লাভ করবে। ঋতু পর্যায়ের বর্ষা সঙ্গীত ছাড়াও প্রচুর সংখ্যায় বর্ষা বিষয়ক সঙ্গীত কবিগুরুর গীতিনাট্য, নৃত্যনাট্যগুলিতে যুক্ত আছে। এখানে কবিগুরুর 'জীবনস্মৃতি ' বইটি থেকে বর্ষা বিষয়ে উদ্ধার করা অংশটির দুটি মর্মবাণী আমরা উল্লেখ করতে পারি। প্রথমত এই আলোচনায় বাল্যকালে বর্ষার প্রভাব মানুষের উপর বেশি পড়ে বলে কবি স্বয়ং মনে করেন এবং কবির দৃষ্টিতে বাল্যে অনুভূত বর্ষার ভয়ঙ্কর উন্মাতাল রূপ। আর দ্বিতীয়ত কবির উপরে বর্ষার সুগভীর প্রভাব।
প্রকৃতি প্রেমিক কবি রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ইংরেজি  সাহিত্যের কবি Wordsworth - এর তুলনা করা হয়। তেমনি বর্ষাপ্রেমিক কবি রবীন্দ্রনাথের উপর সংস্কৃত সাহিত্যের মহাকবি কালিদাসের গভীর প্রভাবের কথা  অনস্বীকার্য। বাল্যকাল থেকে কালিদাসের অমর কীর্তি মেঘদূতম্ কাব্যের প্রভাব  রবীন্দ্রনাথের উপর পড়েছে। বড়দাদা উদাত্ত কণ্ঠে মেঘদূতম্ কাব্য যখন আবৃত্তি করতেন, তখন কিশোর রবীন্দ্রনাথ অদূরে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ চিত্তে তা শুনতেন। জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের পত্নী, রবীন্দ্রনাথের নতুন বৌঠান কাদম্বরী দেবী মাত্র দুবছরের বড় ছিলেন কবির থেকে। নয় বছরের বালিকা যখন ঠাকুর বাড়ির বৌ হয়ে এলেন, তখন দুবছরের ছোট কবির সঙ্গে হৃদ্যতার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই নতুন বৌঠানের সঙ্গে ছাদে বসে মুগ্ধ হয়ে কবি জ্যোতিরিন্দ্রনাথের কণ্ঠে মেঘদূতের পাঠ শুনতেন। রেকাবিতে রাখা সিক্ত যূথীর গন্ধ কবির মনকে বহু যুগের ওপারে কালিদাসের যুগে যেন নিয়ে যেতো।
          কালিদাসের সঙ্গে, বিশেষ করে মেঘদূতম্ কাব্যের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের যোগাযোগ শৈশব থেকেই। বড় দাদার কণ্ঠে মেঘদূতমের তন্ময় পাঠ কিংবা কাদম্বরী দেবীর সঙ্গে বসে মেঘদূতমের পাঠ শ্রবণের আগেরও ইতিহাস আছে রবীন্দ্র জীবনে বর্ষার সঙ্গে। ' জল পড়ে পাতা নড়ে ' দিয়ে বর্ষা ভাবনার, দর্শনের যে সূচনা অতি শৈশবের দিনগুলিতে তা যেন রবীন্দ্রনাথের জীবনের অগ্রগতিব বাঁকে বাঁকে নব নব রূপে বিকশিত হয়েছে, পরিপুষ্ট হয়েছে। বর্ষার মেঘসজ্জা আর অবিরাম ঝরো ঝরো বারিধারা সারাটা জীবনে কবিকে রসসিঞ্চিত অভিষিক্ত করেছে!
       বহুযুগের ওপারে কবি কালিদাস মেঘপুঞ্জের শোভা দেখে আনমনা হয়েছেন, চির বিরহী সত্তার অনির্দেশ্য আবেগে লিখেছেন মেঘদূতম্ কাব্য। শাশ্বত বিরহ কাব্য হয়ে তা যুগ যুগান্তরের পথ বেয়ে আজও বিরহের তরঙ্গ তুলে। " রামগিরি হইতে  হিমালয় পর্যন্ত প্রাচীন ভারতবর্ষের যে দীর্ঘ এক খণ্ডের মধ্য দিয়া মেঘদূতের মন্দাক্রান্তা ছন্দের জীবনস্রোত প্রবাহিত হইয়া গিয়াছে, সেখান হইতে কেবল বর্ষাকাল নহে, চিরকালের মত আমরাও নির্বাসিত হইয়াছি। " মেঘদূত নিবন্ধে রবীন্দ্রনাথের এই উক্তি প্রণিধান যোগ্য। সেই যুগ আর নেই, সেসব জনপদ বধূরাও আজ আর নেই। এখন আর সে পটভূমিতে মেঘকে দূত করে পাঠাবার সুযোগ আমাদের নেই।
      "  মেঘ দেখিলে,সুখিনোহপণ্যথা বৃত্তি চেতঃ, সুখী লোকেরাও আনমনা হয় এইজন্যই, মেঘ মনুষ্যলোকের কোন ধার ধারে না বলিয়া মানুষকে অভ্যস্ত গণ্ডির বাইরে লইয়া যায়। মেঘের সঙ্গে আমাদের প্রতিদিনের চিন্তা চেষ্টা কাজকর্মের কোনো সম্বন্ধ নাই বলিয়া সে আমাদের মনকে ছুটি দেয়। মন তখন বাঁধন মানিতে চাহে না, প্রভুশাপে যক্ষের বিরহ তখন উদ্দাম হইয়া উঠে। প্রভু ভৃত্যের সম্বন্ধ সংসারের সম্বন্ধ। মেঘ সংসারের এই সকল সম্বন্ধগুলোকে ভুলাইয়া দেয়, তখনই হৃদয় বাঁধ ভাঙ্গিয়া আপনার পথ বাহির করিতে চেষ্টা করে। "
               [ কালিদাস ও রবীন্দ্রনাথ /ডঃ নরেন্দ্রনাথ জানা, পৃষ্ঠা ২০৫ ]
       বর্ষা ঋতু এমনি সকলের উপর প্রগাঢ় প্রভাব ফেলে।  বর্ষার সমাগমে সকলেই নিজের মনে এক অনির্দেশ্য বেদনাবিধুরতা আর বিরহ বেদনা যেন অনুভব করে।প্রথম জীবনে মেঘদূতম্ রবীন্দ্রনাথের উপরও স্থায়ীভাবে বর্ষার প্রভাব ফেলেছিল। আর এই প্রভাব জীবন ব্যাপী স্থায়ীত্ব লাভ করে।
     জমিদারী দেখাশোনার দায়িত্ব পাবার পরে শিলাইদহ আর সাজাদপুরে রবীন্দ্রনাথ বোটে করে পদ্মা নদীতে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস কাটিয়েছেন। এই দিনগুলিতে পল্লীবাংলার প্রকৃতি ও বর্ষার শ্যামল শোভন রূপচিত্রের অভাবনীয় প্রভাব রবীন্দ্রনাথের উপর পড়ে। যে বর্ষা সারাজীবন কবিগুরুর উপর কোনও না কোনও ভাবে প্রবল আধিপত্য বিস্তার করেছে এবং তাঁর সৃষ্টির যত্রতত্র প্রসন্ন মুখে উঁকিঝুঁকি দিয়েছে, সেই বর্ষা কবির অনুভবে পদ্মাতীরের যাপিত বর্ষাদিনের অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ অবয়বে প্রকাশলাভ করেছে। এই অভিজ্ঞতা বাংলার বর্ষাকে পূর্ণায়ত মূর্তিতে কবির প্রত্যক্ষগোচর যেমন করিয়েছে, তেমনি সমকালীন পত্রসাহিত্যে ও বিশেষ করে ছোটগল্প সম্ভারে নব নব রূপে কবি ভাবনাকে পরিচালিত করেছে। কবির সৃষ্টিতে এই বর্ষাভাবনা বর্তমান আলোচকের অভিমতে প্রকৃতিকেই যেন পৃথক সত্তায়, চরিত্রে প্রতিস্থাপন করেছে। সমকাল ও ভাবীকালের লেখালেখিতে এই সময় থেকে যেন একটা সুস্পষ্ট পরিবর্তনের মোড় পরিলক্ষিত হতে লাগলো।
   রবীন্দ্রনাথ দুচোখ মেলে পদ্মাবক্ষ থেকে পল্লী বাংলার সজল শ্যামল মোহনীয় রূপ দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। এ যেন এতোদিনের চেনা জানা জগৎ থেকে আলাদা। দূরে দিগন্তে ' তরুশ্রেণী মেঘে ঢাকা', বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, মেঘগর্জন শোনাচ্ছে, গ্রামের বধূটি লজ্জিত হয়ে ঘোমটা টেনে দ্রুতগতিতে কলসী কাঁখে চলে যাচ্ছে। বৃষ্টি নামলো রিমঝিম। অপূর্ব! এই মেঘ, এই বৃষ্টি নাগরিক জীবন থেকে একেবারে আলাদা। প্রবল স্রোতোময়ী পদ্মার পাড়ে শান্ত সমাহিত গ্রামের স্তিমিত জীবন! সে জীবনে বর্ষার আগমন কদম, কেয়ার মঞ্জরিত পাপড়ি ছুঁয়ে, গ্রামীণ জীবনে আন্দোলন তুলে বর্ষা আসে ' ঐ অতি ভৈরব রভসে '!
     " একদিন বর্ষাকালে মেঘমুক্ত দ্বিপ্রহরে ঈষৎ - তপ্ত সুকোমল বাতাস দিতেছিল;রৌদ্রে ভিজা ঘাস এবং গাছপালা হইতে একপ্রকার গন্ধ উত্থিত হইতেছিল ;মনে হইতেছিল, যেন ক্লান্ত ধরণীর উষ্ণ  নিঃশ্বাস গায়ের উপর আসিয়া লাগিতেছে... (পোস্টমাস্টার)।

" একদিন ঘনঘোর মেঘ করিয়া আসিয়াছে। এমনি অন্ধকার করিয়াছে যে, ঘরের মধ্যে কাজকর্ম করা অসাধ্য। বাইরে ঝুপ্ ঝুপ্ করিয়া বৃষ্টি হইতেছে। কুলগাছের তলায় লতাগুল্মের জঙ্গল জলে প্রায় নিমগ্ন হইয়া গিয়াছে এবং প্রাচীরের পার্শ্ববর্তী নালা দিয়া ঘোলা জলস্রোত কল্ কল্ শব্দে বহিয়া চলিয়াছে।
( মধ্যবর্তিনী)

বর্ষাকাল আসিল। ক্ষুধিত পদ্মা উদ্যান গ্রাম শস্যক্ষেত্র এক এক গ্রাসে মুখে পুরিতে লাগিল। বালুকাচরের কাশবন এবং বনঝাউ জলে ডুবিয়া গেল। পাড়ভাঙ্গার অবিশ্রাম ঝুপঝাপ শব্দ এবং জলের গর্জনে দশ দিক মুখরিত হইয়া উঠিল, এবং দ্রুতবেগে ধাবমান ফেনারাশি নদীর তীব্রগতিকে প্রত্যক্ষগোচর করিয়া তুলিল।
(খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন)
রবীন্দ্রনাথ রচিত তিনটি ছোটগল্পে বর্ষার প্রভাব যুক্ত তিনটি অংশ উদাহরণ রূপে সমাহৃত হলো।
     বর্ষা ঋতু কবির অজান্তেই যেন তাঁর অন্তর সত্তায়  স্থায়ী আসন গেড়ে বসেছিল। তাই রবীন্দ্র সঙ্গীতে ও সাহিত্যে সর্বত্রই তার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। বাংলার নবনীত কোমল প্রকৃতির সঙ্গে সর্বতাপহরা শ্যামল সজল বর্ষার যে মধুর সম্পর্ক, ঠিক তেমনি কবি রবীন্দ্রনাথের সত্তার সঙ্গেও যেন বর্ষার সম্পর্ক। তাই বুঝি কাকতালীয়ভাবে শ্রাবণের মেঘমেদুর রিমঝিম বর্ষণমুখর দিবসে পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহাকবির মহাপ্রয়ানও হয়েছিল।

কাজরী,
২১ জুলাই, ২০১৬

0 comments:

অন্য নদী অন্য কথা

১১:২০:০০ PM 0 Comments











©  সুনীতি দেবনাথ

অতঃপর সন্ধ্যা চলে গেলো
অন্ধকারের একলা পথ ধরে
ঝোপঝাড়ে জোনাকি আলো
মিটিমিটি ওড়াওড়ি করে শুধু
টুপটাপ শিশিরবিন্দুর মতন।

খোলা জানালায় একান্তে আমি
তারাদের জলভরা চোখ খুঁজি,
আমার নীরব অশ্রু আর
তারার অশ্রু দিয়ে গড়ে নিতে চাই
পৃথিবীরর স্বপ্নগন্ধা একক নদীটি।

নদী মধুমতী চলে  দোলে
জল ছলছল আঁচল উড়িয়ে
অলৌকিক প্রান্তরে লৌকিক জীবনে,
শুধু আঁজলা ভরা স্ফটিক জলে
স্বপ্নের ভাঙ্গা কুচি টুকরো দেখা যায়।

এ নদী পারাপার বড়ই কঠিন—
কূলে তার হাজার নিস্ফল প্রাণ
কাতারে কাতারে ফিসফিস করে,
শীতল আবহে শেষ রাত্রির প্রহরে
টুপটাপ তারারা ডুব দিয়ে স্নান করে।

কাজরী,
২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

0 comments:

চিরন্তন

২:১৭:০০ PM 0 Comments















© সুনীতি দেবনাথ

মানুষ আর পশুর ফারাক কতটুকু —
পশুর আগাপাশতলা সবটুকুই পশুত্ব
পোষাকে মুখোশে ঢাকা মানুষ অন্তরে
নিখাদ চতুর নিষ্ঠুর ইতিহাস বলে।
মুখোশ পরে পশু কোনদিন আক্রমণ করে না
মানুষ কোনদিন মুখোশের বাইরে বেরোতে পারে না
ফারাকটা এখানটায়।
খাদ্য খাদকের বাইরে পশুর অন্য শর্ত নেই,
মানুষ তার বাইরে আরও চায়
চায় মানুষের আত্মাকে পদদলিত করতে
তারপর দুমড়ে মুচড়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়তে,
চায় অন্ধকারে আর সব মানুষকে বেঁধে রাখতে।
ইতিহাস এইতো বলে —
এও বলে মানুষ যেটাকে যুদ্ধ বলে
একদিন সেটাকে বলতো সন্ত্রাসবাদ।
আজ যুদ্ধ আর সন্ত্রাসবাদ কি সমান নয়?
কি বলবে আগামীর ইতিহাস?
কি বলবে মানুষের মানবতা?

কাজরী,
৩ জুলাই, ২০১৬

0 comments:

ফেসবুকীয় কবিতার বাজার

১০:০৭:০০ PM 1 Comments





© সুনীতি দেবনাথ


ফেসবুকীয় সাহিত্যে এখন কবিতার রমরমা। সাহিত্যের অন্যান্য শাখার চর্চা বিরল। কারণ এতে বেশ পরিশ্রম দরকার। হয়তো বা অনেকের ধারণা কবিতা লেখাই সহজ, এতে বিস্তৃত পরিসরে যেতে হয় না বলে টাইপ করাও পরিশ্রমের নয়। মোটামুটি চার পাঁচ লাইনে একটা কিছু দাঁড় করাতে পারলেই কিস্তি মাত্! নামও হলো কামও। আর যদি পেঁচিয়ে কবিতাটিকে কিছুটা জটিল করে তোলা যায় তাহলে  তো আর কথাই নেই! অসাধারণ, অপূর্ব, অনন্য, অনবদ্য, দারুণ ইত্যাদি এক শাব্দিক কমেন্টে কমেন্টের ঝুড়ি পূর্ণ হয়ে উপচে পড়বে। আরো আছে সংক্ষিপ্ততম কমেন্ট বাঃ, বাহ্, বেশ ইত্যাদি। কমেন্টের বন্যায় ভেসে গিয়ে কৃতার্থ কবি নতুন উদ্যমে নিজের ওয়াল ভরিয়ে বিশ্বভ্রমণে বের হন। হরেক রকমের সাহিত্য চর্চার গ্রুপ ওদিকে কবি শিকারের জন্য ফাঁদ পেতে বসে আছেন খাতা খুলে। চটপট আট দশটা গ্রুপে কপি - পেস্ট একদমে করে নিয়ে এবার কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম। তারপর কমেন্টের জবাব দেওয়া। কমেন্ট গুলি হতাশাজনকভাবে কবিতা বিষয়ক নয়, ব্যক্তিগত বার্তালাপ! এই পর্যায়ে উল্লসিত হবার কিছু নেই।
   কবিতা লেখার সময় বিষয় নির্বাচনে কবির স্বাধীনতা কিংবা স্টাইল বা আঙ্গিকের বিষয়েও বলার কিছু থাকে না সেও কবির স্বকীয় নির্মাণ। কিন্তু ভাষার বিশুদ্ধতা, বানানোর বিশুদ্ধতা সম্পর্কে বলার থাকে বটে। একজন কবি কবিতা লিখবেন স্ব ইচ্ছায় স্বাধীনভাবে। কিন্তু তাঁর লেখার প্রাথমিক শর্ত হবে ভাষার বিশুদ্ধ ব্যবহার এবং আলঙ্কারিক সমৃদ্ধ ভাষা প্রয়োগ সাহিত্য তথা কবিতার ক্ষেত্রে অবশ্য প্রয়োজন। স্কুল ছাত্রও বানান ভুল করলে মার্জনা পায় না, সেক্ষেত্রে একজন কবি কিভাবে দিনের পর দিন ভুল বানানে কবিতা লিখে যাবেন এবং আমরা তা পড়ে যাবো? অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলছি ফেসবুকের তথাকথিত অনেক নামীদামি কবির বানান ভুল যেমন চক্ষুপীড়ার কারণ হয়, তেমনি বিস্মিত হতে হয় বানান ভুল শুদ্ধ করে দেবার জন্য ইনবক্সে কবিতা যখন পাঠানো হয়। এটা একদিনের ব্যাপার বা একজনের ব্যাপার নয়। আন্তরিকতা ও ভালোবাসার দাবি নিয়ে বহুদিন বহুজন এই কাণ্ড করে যাচ্ছেন। এঁরা কবিতার জন্য মিনিমাম পরিশ্রম করতে নারাজ। মহান কবিতা, কালজয়ী কবিতা লেখার জন্য এঁরা মানসিক ও ভাবনাগত সমৃদ্ধি থাকা সত্ত্বেও ভাষাগত দুর্বলতাকে কেন জয় করতে চাইবেন না? ভাষা যে ভাবনা ও ভাবের একমাত্র বাহন এ কথা জেনেও কেন তাঁরা ভাষার প্রতি যত্নশীল হবেন না সেটাই প্রশ্ন। আর এই অযত্নেই জন্ম নিচ্ছে প্রতিদিন কবিতা নামধেয় অনেক অনেক অকবিতা।
    নারী মুক্তি,  নারীর ক্ষমতায়ন, নারীকে বেআব্রু করে বিজ্ঞাপন ও বাণিজ্যের বিরুদ্ধে , নারীর সম্ভ্রম শালীনতার প্রতি অসৌজন্যমূলক লেখালেখি নিয়ে বহু কিছু বলা হচ্ছে দীর্ঘকাল ধরে। নারীর নগ্নতা নিয়ে বাণিজ্যের  তুমুল প্রতিবাদ হয়েছে। পথে মিছিলে হেঁটেছেন কত নারী! কিন্তু একুশ শতকের কাব্য সাহিত্যে অন্য একটা ট্রেণ্ড লক্ষ্য করা যাচ্ছে, নামীদামি কিছু মহিলা কবি নারী দেহকে এতোটাই উলঙ্গ করে তোলে ধরছেন যা পুরুষ কবিরা করেননি। আর এভাবেই এইসব মহিলা কবি লাইম লাইটে আসতে চাইছেন। বলাবাহুল্য ফেসবুকের মহিলা কবিদের মধ্যে একটা অংশ এই ধারার স্রোতে গা ভাসিয়ে দিচ্ছেন। মহিলা কবিদের এরকম প্রয়াস সহজে প্রচার পাবার কৌশল মাত্র। বলাটা বোধহয় বেঠিক হবে না সহজে খ্যাতি পাবার এই প্রক্রিয়া আত্মঘাতী। বলা যায় অনেকটা তুবড়ি বাজির জ্বলে ওঠার মত। মনে রাখা প্রয়োজন তুবড়ি বাজি সহজে যেমন জ্বলে ওঠে, নিভেও যায় সহজে। সর্বনাশা এই ট্রেণ্ডের অনুকরণ অনুসরণ সর্বকালীন খ্যাতি প্রাপ্তির পরিপন্থি। শাশ্বত সৃষ্টি এতে ব্যাহত হয়। সমাজ ও জীবনে অনেক কিছুই আছে যা কাব্যের বিষয় হতে পারে, সেসবকে বাদ দিয়ে নারীদের শালীনতাকে আহত করে নারীকে উলঙ্গ নাই বা করা হলো। এটা যদি অত্যাধুনিক হবার উপায় হয় আমরা তার বিরুদ্ধে যাবো।
     ' ভাবের ঘরে চুরি '— খুব সংক্ষেপে কিছু বলা হচ্ছে এ বিষয়ে। কবি হবার আর কবিতা লেখার একটা মোহ আছে বুঝিবা। আর এই মোহে মোহিত হয়ে অনেকটা লজ্জাশরম ত্যাগ করে কিছু সংখ্যক কবি (?) ভাবের ঘরে চুরি করেন। এঁরা বেপরোয়া হয়ে অন্যের কবিতার ভাব, পংক্তির টুকরো, শব্দ প্রয়োগের কৌশল চুরি করে কবিতা লেখেন। অন্যের অনুকরণ বা অনুসরণ করে যাঁরা কবিতা লেখেন তাঁদের কি কবি বলা যাবে? তাঁদের কবিতা কি মৌলিক কবিতা হবে? কবিতার ভাব আর ভাষার চুরি যে গর্হিত অপরাধ। দু 'চারদিন এভাবে চালিয়ে গেলেও একদিন না একদিন ধরা পড়ে যেতে হবেই — ' ....সেদিন ভয়ঙ্কর '। ফেসবুকে এমন অনেক কবির সাক্ষাৎ মেলে। এঁরা ভুলে যান ' সকলেই কবি নন কেউ কেউ কবি '।

কাজরী,
১৯ জুলাই, ২০১৬

1 comments:

আমি ভালো আছি

৮:০৮:০০ PM 0 Comments





























© সুনীতি দেবনাথ

আমি ভালো আছি —
স্রোতে ভেসে আসে সুখ, ভেসে আসে দুঃখ,
স্রোতে ভেসে যায় সব রেশ থাকে কিছু কিছু
উজানে ভাটিতে নদী দুরন্ত গতিতে মাতাল
তবু ভালো আছি, ভালো আছি।
এখনো এখানে পাখির কূজন গাছে গাছে সবুজ মিতালি
পাতায় পাতায় কানাকানি হরিৎ গুঞ্জন
আধা নাগরিক প্রবাসী জীবনে কুবো পাখি
ওড়াওড়ি করে কুব্ কুব্ ডেকে চলে
জানালার পাশে পুকুরের পাড়ে,
থৈথৈ জল নীরবে বিলের  ছবি হয়ে উঁকি দেয়,
ভালো আছি, বড় বেশি যেন ভালো আছি।

তবু ভালো থাকা যেন যায় না।
এখন এখানে বড় দুঃসময়,  দুঃসময়ে
অশনিসংকেতে ভালো লাগা ভালোবাসা
এই বর্ষায় দুরন্ত ঝড়ে বজ্রপতনে উড়ে পুড়ে যায়।
এইতো সেদিন ভোরের সংবাদ কী ভয়ানক!
ঢাকার অভিজাত গুলশান কাফের সন্ত্রাসী হামলা
ভয়াবহ রক্তাক্ত রাত দিন কেবল যে উৎসবের মাস
রমজানের সব হাসি খুশিকে রক্তের ছোঁয়ায় ভেজালো,
জেহাদী সন্ত্রাসে কাফের হত্যা, সন্ত্রাসী মানব বোমার
নয়া নমুনায় জনমানসে বিভীষিকা সৃষ্টি, তাতো নয় শুধু।
আশা, মৈত্রী, সাহস, বিশ্বাস নতুন প্রশ্নের মুখোমুখি হলো,
আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে, কাকে বিশ্বাস করি,
ভাবী প্রজন্ম আমাদের কোন পথে, কোন নিশানায় চলছে?
এক সুদূর বিসারী শূন্যতা ভয়ঙ্কর অক্টোপাসের মত
অজস্র বাহুতে পিষ্ট করে আমাদের অস্তিত্বকে চূর্ণিত করছিল।

এই ভয়ঙ্কর দিনে এই ক্ষুদ্র আমি ভালো থাকি কি করে?

যখন দুঃস্বপ্নের স্মৃতিকে ভুলে যাবার মানিয়ে নেবার
আপ্রাণ চেষ্টায় এই আমি ক্ষুদ্র এক আমি প্রতিপল লড়ছি
ঠিক তক্ষুনি সেই দুর্ধর্ষ ঘাতক লরি ফ্রান্সের নিস্তব্ধ শহরে
একা একেবারে একা কী বীভৎস হত্যালীলা চালালো!
সমগ্র বিশ্বের সাথে চমকে উঠেছি আমি মানুষ
এতো ক্ষুদ্রতায় নেমে গেলো কিভাবে,
আমার বিস্ময় সীমাহীন!
বাস্তিল দিবসের আলোর উজ্জ্বল খেলায় আনন্দে
ভাসছিল সেদিন নিস্তব্ধ শহরের হাজারো নরনারী শিশু বৃদ্ধ,
এমন সময় বেপরোয়া ঘাতক লরিটি এলোপাতাড়ি হত্যা চালায়।
বইলো রক্তস্রোত থেতলে শুয়ে পড়লো উৎসবের পথে
চুরাশিটি লাশ শিশু বৃদ্ধ নরনারীর, কী দুঃসহ কী ঘৃণ্য নারকীয়!
এতো দুর্ধর্ষতা ক্ষমতার উত্তুঙ্গ আস্ফালনেসন্ত্রাসী
বীভৎসতার পেছনে কারা, কেন তাদের এই আস্ফালন?
সিরিয়ায় কোনঠাসা হতে চলা সন্ত্রাসীদের ঘোষণা
মানতে এরা কি তবে দেশে দেশে শক্তি প্রদর্শন রত?
হাজারো প্রশ্ন বিষাদনীলিমায় মিশে আমাকে বিপন্ন করে,
বলো এমনি সময়, এমনি বিপন্নকালে ভালো থাকা যায়?



কাজরী,
১৮ জুলাই, ২০১৬

0 comments:

স্মৃতি যেন হায় আমারে কাঁদায়

১২:২১:০০ AM 0 Comments




তাজমহলে : আমার স্বামীর ক্যামেরায় আমি 

0 comments:

আলোকিত কবি আত্মার পদাবলি

১২:০৫:০০ AM 0 Comments

























রুবেল পারভেজ

কবি সুনীতি দেবনাথ ১৯৪৫ সালের ২৮ জানুয়ারি সিলেটের পঞ্চখণ্ডে জন্মগ্রহন করেন।মাত্র পাঁচ বছর বয়সে মা-বাবার হাত ধরে উদ্বাস্তু হন।বর্তমানে তিনি ভারতের উত্তর ত্রিপুরার জেলাসদর ধর্মনগনের বাসিন্দা।ছোটবেলা থেকেই তাঁর লেখালেখির হাতেখড়ি। তিনি একাধারে কবি,নাট্যকার, গল্পকার ও প্রাবন্ধিক।আধুনিক বাংলা কবিতায় সুনীতি দেবনাথ আপন বৈশিষ্ট্যে বীক্ষিত। মানব মনের রহস্যের উন্মোচন এক মৌলিক কবির ব্রত।সমকালের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে কবি সুনীতি দেবনাথের নীরিক্ষণ মহাকালের বৈশ্বিক বিবর্তন, জীবন জিজ্ঞাসার আণবিক অন্ধকারের বিদ্যুৎ বিভাস,সামুদ্রিক স্বপ্নের ভৌগলিক ইতিহাস,জীবনের যাবতীয় পাওয়া না পাওয়ার সুদকষা তাঁর কবিতার নিত্য নৈর্মিত্তিক বিষয়।
বিশ শতকের বাঙ্গালি প্রতিভার এক মহোত্তর সৃষ্টি আধুনিক বাংলা কবিতা।হাজার বছরের ঐতিহ্য পেছনে ফেলে তা আজ আধুনিক যুগে গাত্রোত্থান করেছে।
সার কথা শেষ কথা যত যুদ্ধই হোক
নারীর জন্য চিরকাল পুরুষের প্রেম জেগে থাকে।
হোকনা যোদ্ধা মানব মুক্তির লড়াকু সৈনিক
অন্তরে আছে তার নরম প্রেম নারীর জন্য
সেও মার্কসের মত প্রেমের কবিতা লেখে
প্রিয়তমার জন্য।
                    ( একটি অনন্য সাক্ষাৎকার)
মন্ত্রের  মত অমোঘ উচ্চারণ কবিতার প্রতিটি চরণে।নিবিড় এক সত্যকে কবি তাঁর কলমের আঁচড়ে চিত্রিত করে তুলেছেন অপূর্ব মহিমায়।প্রকৃতপক্ষে নারীর জন্য আজীবন প্রতিটি পুরুষের প্রেম জেগে থাকে।বিপ্লবী কার্ল মার্কস ও প্রিয়তমার প্রেমে মুগ্ধ হয়ে কবিতা লেখেন।

কতদিন পার হয়ে গেছে কত রক্ত ঝরে গেছে তবু
 ক্ষুধার আগুন নিয়ে পেটে রিয়াং পুরুষ লুসাই বস্তির
কমলা বাগানে জন খাটে।ঝকঝকে পোষাক
মোড়া লুসাই যুবতী পুরন্ত শরীরে বড় তীক্ষ্ণ
ছেঁড়া কাপড়ের রিয়াং পুরুষের যৌবনকে ব্যঙ্গ করে
ঢলে পড়ে।
তার চোখে চোখ মেলানো কঠিন
তবু চৌম্বকীয় টানে তার বেপথু যুবক! শিশির
ধোয়া রস টসটসে কমলাটি ছুঁয়ে দেয় যুবকের চোখে।
                                                ( এপার ওপার)
খেটে খাওয়া রিয়াং পুরুষ লুসাই যুবতীর ভরা যৌবনা নদীতে কামনার বুনো গন্ধের চৌম্বকীয় টানে বেসামাল।এ কবিতা বর্ণনায় কবি যেন বেগবান নদীর ফল্গুস্রোত।

লুসাই ছেলে লুসাই মেয়ে গিটার হাতে হাসতে
হাসতে পড়ছে ঢলে।
দেখ দেখ রঙেন বাহার একে দেখ ওকে দেখ,
কোথায় এলাম?
ঘরবাড়ি সব সাফসুতরো পাহাড় ঢালে ছবির মত,
মাঝে মাঝে মেঘ এসে কুশল শুধোয় কেমন আছ?
কোথায় এলাম বিদেশ নাকি-ওমা,এ যে ভাংমুন।
                                          ( পথ চলেছে ভাংমুন)
কবি ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলেরর ছোট্র রাজ্য ত্রিপুরার সমৃদ্ধ জনপদ ভাংমুনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের নিবিড় বর্ণনা দিয়েছেন।নৈসর্গিক সৌন্দর্যের চিত্র যেমন কবিতার বহিরাঙ্গে প্রতিমা সুন্দরের ছবি আঁকা অপরদিকে এর হৃদয়াঙ্গে ঢেলে দিয়েছে বাক নান্দনিক কলা কলির মোহাচ্ছন্নতা ধ্রুপদ রাগিনীর মীড় মূর্ছনা যা অন্তর সত্তার গড়া নিবিড় তান উল্লাসে বিকশিত।কবি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার রোষানলের শিকার হয়ে বদলি হয়ে চাকরিরত অবস্থায় পাহাড়ি জনপদে সাড়ে ছয় বছর কাটিয়েছেন।তাই তাঁর কবিতায় পাহাড়ি সৌন্দর্য অবলীলায় বর্ণিত হয়েছে।

তবু স্মৃতিবে আঁকড়ে থেকে শেষ পদচিহ্ন
একেবারে শেষ অতিক্রম চিহৃ এঁকে যেতে হয়।
স্মৃতি শুধু জীবনের খণ্ড অবকাশ।
                            ( তবু স্মৃতিকে ঘিরেই)
স্মৃতি অবিরত নদীর ভাঙনের মত হৃদয়ের গহীন ভেতরে দোলা দিয়ে যায়।খণ্ড অবসরে মানুষ নষ্টালজিক হয়ে ওঠে।সে তখন স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে থাকার প্রবল চেষ্টা করে।মৃত্যু অবধি সে স্মৃতিরোমন্থন করে। সময় চলে যায় কিন্তু স্মৃতি থেকে যায়, আমাদের অবসরের দিনগুলোতে মনের দরজায় দারুণ করাঘাত করে।
কবি সুনীতি দেবনাথ আধুনিক কবিতার এক ক্লান্তিহীন আত্মমগ্ন কবি।তিনি কবিতায় চিত্রকল্পের অরুপ লালিত্যে কবিতাকে দৃশ্যত করে তোলেন সচেতন পাঠকের দিদৃক্ষায়।প্রাতিস্বিক তন্ময়তায় অসাধারণ সব শব্দের দ্যোতনা তাঁর কবিতায় মায়াবী পর্দার মত দুলে ওঠে।তিনি একজন ধ্যানস্থ কবি।হতাশা আর ব্যর্থতা,আত্মরতি আর যৌনতায় আক্রান্ত আমাদের আধুনিক কবিতার ধারায় ঋদ্ধ কবি সুনীতি দেবনাথ একজন আলোকিত কবি।

0 comments:

বৃষ্টি ঝরুক

১২:১৭:০০ PM 0 Comments













© সুনীতি দেবনাথ


অঝোর বৃষ্টি নামুক এবার ধুয়েমুছে নিক
শতাব্দীর সব ধুলোবালি পাঁশুটে পলেস্তারা
রাত্রির দীর্ঘ ক্লান্তির অবসাদের অশ্রুর মত
ঝুম ধারায় নামুক না - থামা বর্ষার ধারা একান্তে।

বৃষ্টি এবার বৃষ্টি পুরোনো এ প্রাচীন নগরী ভিজিয়ে,
ক্লান্ত সবাই তৃষ্ণা কাতর তবু দৌড় দৌড় দৌড় —
এবার বৃষ্টি নামুক ওপাশে নদীর তীরে খোলা ময়দানে
জমায়েতে সব নারী শিশু পুরুষেরা ভিজুক।

বৃষ্টির অমল ধারা বহুকাল আগের মতোই ঝরুক
অপনোদিত হোক সব ক্লান্তি সব পাপ গ্লানি চোখের জল,
পুরোনো নগরী বৃষ্টির ধারাপাতে ঝিকমিক করুক,
রোদেলা দিনে আবার হাসবে একদা বিধ্বস্ত
মানুষেরা।

কাজরী,
১৬ জুলাই, ২০১৬

0 comments:

ফিরে এসো না

১:০৭:০০ PM 0 Comments



















© সুনীতি দেবনাথ

আমি কক্ষনো তোমাকে ফিরে আসতে বলবো না।
পৃথিবীটা আজ বড়ই ছোট্ট হয়ে গেছে খেয়াল করিনি,
মিডল ইষ্টের যে দেশে আছো বেশ আছো শিহাব ভাই!
তোমার স্বদেশের মতো তো নিরাপত্তাহীনতায় নেই।
 সেদিন স্বদেশ তোমাকে জীবিকার গ্যারান্টি দেয়নি,
তবু মনে মনে ক্ষুব্ধ ছিলাম জীবিকার জন্য দেশত্যাগী!
আজ ভাবতে গিয়ে বুঝি তোমার বুকে সেদিন
কোন গোপন আগুন জ্বলেছিল ধিকিধিকি।
কোন ক্ষিধের তাড়নায় কোন সে যন্ত্রণায় দেশত্যাগী
প্রাণপ্রিয় স্বজনদের এদেশে ফেলে কোন প্রত্যাশায় গিয়েছিলে।
আজ অনুভব করি যেতে হয় বেদনায় বুক ফেটে চৌচির হলেও!
সারাদিন অমানুষের মত খেটে সন্ধ্যা হলে একা শুধু একা,
একটা যন্ত্রণা তোমাকে সমুদ্রের কাছে নিয়ে যেতো
কালচে নীল সমুদ্র ঢেউয়ে ঢেউয়ে মাতামাতি করে,
দূরে অস্পষ্ট দিগন্তে এক ঝাঁক এলবেট্রস ওড়াওড়ি করে,
আগুন রঙের সূর্য ধীরে ধীরে ডুবে যেতে থাকে সমুদ্রে,
শ্লথ পায়ে তপ্ত বালিতে পা ডুবিয়ে ডুবিয়ে ঘরে ফেরা।
এভাবে দিনের পর দিন রাতের পর রাত একটাই রুটিন!
স্বপ্নহীন শিহাব তোমার নিক নেম, দুদেশের খরখরে রোদ
ইস্পাতের ঝকঝকে ফলার মত রোদ সব স্বপ্ন পুড়িয়ে দিয়েছে জানি,
কিন্তু শিহাব মানে জানি না, তুমিও বলতে পারোনি। অবশেষে অভিধান দেখে জানালে মানেটা 'আগুন',
কল্পনায় দেখেছি তোমার দু' চোখে আগুন বুকের মাঝারে
দাউদাউ জ্বলছে এক সর্বনাশা আগুন অনির্বাণ!
কৌতূহলে বলেছি এতো আগুন নিয়ে কেন বিদেশে?
স্বদেশের সব জঞ্জাল পুড়িয়ে সাফ করে দাও না,
ফিরে এসো স্নেহাতুরা জননীর কাছে, পিতা পত্নী সন্তানের কাছে!
আঁতকে  উঠে বলেছো, 'চুপ দিদি চুপ! আমরা বাঁচতে চাই '।
বুঝে গিয়েছিলাম বুকে আগুন থাকলেও সাহস ছিলো না মোটে!
তারপর যা হবার তা হলো, ধীরে ধীরে কমে কমে যোগাযোগ ছিন্ন হলো।
আজ তোমাকে বলতে চাইছি শিহাব ভাই, ওখানেই থাকো,
স্বদেশে তোমার বইছে রক্তস্রোত, জ্বলছে আগুন হামেশাই!
এমন নিরাপত্তাহীন আগুনে দেশে ফিরে এসো না শিহাব ভাই,
ওখানেই থাকো, যদি কোনদিন বুকে সাহস জন্ম নেয়
সেদিন ফিরে এসো সত্যিকারের যুদ্ধ করে দেশটাকে স্বদেশ বানাতে।

কাজরী,
১৪ জুলাই, ২০১৬

0 comments: