গোলকধাঁধা
© সুনীতি দেবনাথ
একদিন ছিলো তোমার আমার সবটা আকাশ,
অভিসারের নীলাম্বরীতে উঠতো হেসে মেঘের ফাঁকে।
সেদিন আমার দরজায় ঝুলানো থাকতো
সোহাগী বাতাস মসলিনের,
এখন আমরা বিমর্ষ দাঁড়িয়ে নদীর ভাঙ্গনের মুখে
এপারে আমি ওপারে তুমি মাঝখানে কান্নানদী—
এখন রোদের কণারা সুতীব্র ব্যথায় অথৈ সাগর,
আমরা কেউ কাউকে আর বিশ্বাস করিনা মোটে।
সমস্যাটা জানো আসলে এখানেই।
এই শীতে সুমেরুর বরফ জমে কত উঁচু পাহাড়,
পরিযায়ী পাখিরা উড়ে কত হাজার কিলোমিটার
পার হলো বিষাদী ডানায় আকাশে আকাশে
কত দূরে কোন ঝিমোনো ঝিলের কাছে
কোন শিরিষ গাছের বাউল ছায়ায় জমালো ভীড়
মোটেও তার খবর রাখি না।
অথচ আমার পাশে তোমার পাশে গড়িয়ে যাচ্ছে করোটি
জমছে পাহাড় স্তুপে স্তুপে বীভৎস হাড়গোড়ের
পেরোতে পারছো না তুমিও আমিও না।
তুমি চাও আমি উত্তরে গেলে তুমি যাবে দক্ষিণে
মুখ দেখাদেখি কুটিল হাসির বিনিময়ও বন্ধ,
অথচ দেখো অবাক কাণ্ড একই পথের যাত্রী আমরা,
তবু তুমি আমি কেউ কাউকে একদমই বিশ্বাস করি না।
তুমি চাও মাটিটা দু' ফাঁক হোক গিলে নিক আমাকে
হাসির ফিচকে রেখা ঠোঁটে ঝুলিয়ে ওপারে তুমি,
আমি ভাবি ফাটলটা নিশ্চিতই গিলবে তোমাকে।
কিছুই ঘটে না শুধু তোমাকে আমাকে বিচ্ছিন্ন করে
মাঝখানে নদীটি খিলখিল বয়ে চলে যায়।
দু'জনেই ভাবি আমার সূর্য আমার আলো
কালো আঁধার তোমার থাক, অথচ তুমি আমি
আলোয় ভাসি প্রখর তাপে দগ্ধ হয়ে শীতল ছায়ায়
একই সাথে জুড়োতে চাই, আঁধার ঢেউয়ে সাঁতার কাটি,
অদৃশ্য এক লোহার শেকল আমায় বাঁধে তোমাকেও।
একটা আকাশ তোমার মাথায় আমার মাথায়
একটা বাতাস তোমায় ছুঁয়ে ভালোবাসায় আমায় জড়ায়।
অথচ তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না মোটে,
তোমাকে বিশ্বাস করতে আমিও থমকে যাই।
কাজরী,
২ জুলাই, ২০১৬
0 comments: