লেখা-লেখি

মণিপুরী নৃত্যগুরু ও গবেষক বিপিন সিংহ

৪:৩১:০০ PM 4 Comments



















© সুনীতি দেবনাথ

ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের একমাত্র ক্ল্যাসিকাল নৃত্য বলা চলে মণিপুরী নৃত্য। আর গুরু বিপিন সিংহ কিংবদন্তী নৃত্যশিল্পী, গুরু ও গবেষক। নিঃসন্দেহে বিপিন সিংহের সমতুল্য গুরু, গবেষক তথা সংগঠক মণিপুরী নৃত্যের জগতে আর জন্মগ্রহণ করেছেন বলে মনে হয়না।
   বিপিন সিংহের পিতা ছিলেন একজন ট্রাডিশনাল বৈদ্য ও গায়ক। গত শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে অর্থাৎ ১৯১৮ সালের ২৩ শে আগষ্ট বিপিন সিংহের  জন্ম হয়। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর  যখন সিলেটে এসে প্রথমবারের মতো মণিপুরী নৃত্য দেখে যান তার ঠিক পনেরো মাস পর গুরু বিপিন সিংহ জন্মগ্রহণ করেন, পুণ্য মাতৃভূমি সিঙ্গারী গ্রামে,পুণ্য লেইখমসেনা সিংহ ও পুণ্যবতী গর্ভধারিনী মাতা ইন্দুবালা দেবীর কোলে। শৈশবাবস্থায়ই তিনি মণিপুরী নৃত্য এবং সঙ্গীত বিষয়ে শিক্ষা  নিতে শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি মণিপুরী নৃত্যের জন্যই সঙ্গীত ও নৃত্য সম্পর্কে গভীর পড়াশোনা করতে লাগলেন। তিনি গুরু আমোদন শর্মার নিকট শিক্ষা নিতে লাগলেন।মণিপুরের রাজাও বিপিন সিংহকে যথেষ্ট সাহায্য করতে লাগলেন।  পরে মণিপুরী নৃত্যের জন্য মণিপুুরের ইম্ফলে মণিপুরী নর্তনালয় স্থাপন করেন। ১৯৭২ সালে কলকাতায় তিনি মণিপুরী নর্তনালয় নামে নৃত্য শিক্ষার বিদ্যালয় স্থাপন করেন। তিনি বহু ছাত্রীকে উপযুক্ত নৃত্য ও সঙ্গীতে পারদর্শী করে তুলেন। যেমন জাভেরী  ভগ্নীদের মত( দর্শনা জাভেরী ), বিনোদিনী দেবী, গুণেশ্বরী দেবী, প্রীতি প্যাটেল, শ্রুতি ব্যানার্জি, লতাসনা দেবী, লায়লী বসু, ইন্দ্রানী দেবী, মনোরমা দেবী, পৌষালী চাটার্জি, সোহিনী রায়, বিম্বাবতী দেবী, রঞ্জিনী বসুদের মত ছাত্রী তাঁর কাছে শিক্ষা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হন। জীবিকা নির্বাহের জন্য তিনি কোরিওগ্রাফি করতেন। তিনি অনেক নৃত্যনাট্যের কোরিওগ্রাফী করেন এবং একক নৃত্যের জন্যও। কোরিওগ্রাফি, নির্দেশনা এবং গবেষণা তিনি প্রভূত পরিশ্রম করে একই সঙ্গে সুদক্ষভাবে করে গেছেন।

 নৃত্যগুরু বিপিন সিংহ বিগত ৬০ বছর ধরে মণিপুরী গীত-নৃত্যের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা করে গেছেন। পাশাপাশি তিনি বৈষ্ণব পদাবলীরও চর্চা করে গেছেন। তিনি বহু প্রচলিত এবং বিখ্যাত গীত-নৃত্যের সংগ্রহ করে এগুলোকে বিশুদ্ধ করে ব্যবহার করেছিলেন। গুরু বিপিন সিংহ ধ্রুপদী ভারতীয় গীত-নৃত্যের সাথে জড়িত বিভিন্ন লিরিক তাঁর কলকাতা এবং মণিপুরের ঘরে ব্যক্তিগতভাবে সংগ্রহ করে রেখেছেন। গুরু বিপিন সিংহ খুবই সাফল্যের সহিত মন্দির এবং সমাজের গণ্ডীর ভিতরে আবদ্ধ হয়ে থাকা মণিপুরী নৃত্যকে তার ঐতিহ্য এবং বিশুদ্ধতা রক্ষা করে বিশ্বমঞ্চে উপস্হাপিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। মণিপুরী নৃত্যে নিজের সম্পূর্ণ জীবন উৎসর্গ করেছিলেন বলে এর অন্য নাম গুরু বিপিন সিংহ। ঋষিতুল্য এই পুরুষ ধ্রুপদী পরম্পরা রক্ষা করে মণিপুরী নৃত্যকে জনপ্রিয় করে উপস্থাপন করতে আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন। গুরুর আরেকটি উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে ছিল- আট/দশ ঘণ্টা দীর্ঘ রাসনৃত্যকে মাত্র ঘণ্টা-দেড়ঘণ্টার ভিতরে সংক্ষেপ করা সত্ত্বেও এর ভিতরে প্রভূত উপকরণ এবং নাটকীয়তা বজায় রেখে নতুনরূপ দিয়ে মঞ্চোপযোগী করেছিলেন। শাস্ত্রীয় মণিপুরী নৃত্যে যে মাধুর্য আছে তা গুরু নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে আবিষ্কার করেছিলেন। বৈষ্ণব পদাবলী এবং পুরাণ নিয়ে গুরুর রচনাসমগ্র আত্মিক অনুধাবন করে এগুলোর উপর নতুন ধরণের গীত রচনা করেছিলেন। যে গীতের ভিতর শাস্ত্রীয় মণিপুরী গীতের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য প্রকটভাবে ফুটে উঠার পাশাপাশি বর্তমান যুগের সাংস্কৃতিক চেতনারও উন্মেষ ঘটে।
গুরু বিপিন সিংহ যে কত সুদক্ষ পরিচালক ছিলেন তা Bengal Music Festival -এর পরিচালনায় অনুভব করা যায়।
‘নৃত্য চিরন্তন : মণিপুরী, ভরতনাট্যম, কত্থক নৃত্যার্ঘ’ শীর্ষক দুই পর্বের নৃত্য পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় চতুর্থ দিনের আয়োজন। এ পরিবেশনার নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন গুরু বিপিন সিংহ, পণ্ডিত বিরজু মহারাজ, শিবলী মহম্মদ; এবং নৃত্য ভাবনা, সার্বিক নৃত্য পরিচালনা ও সমন্বয়কারী হিসেবে ছিলেন শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়। মণিপুরী নৃত্যে তাল-তানচেপ-৪ মাত্রায় রাধা রূপ বর্ণন করেন সুদেষ্ণা স্বয়ম্প্রভা; নৃত্য ও সঙ্গীত পরিচালনায় ছিলেন গুরু বিপিন সিংহ, কণ্ঠে গুরু কলাবতী দেবী। এরপর তাল-সপ্ততাল ২০ মাত্রায় কালীয় দমন পরিবেশন করেন সুইটি দাস; নৃত্য ও সঙ্গীত পরিচালনা করেন বিপিন সিংহ, কণ্ঠে ছিলেন দ্রৌপদী দেবী। মণিপুরী নৃত্যের সর্বশেষ অংশের পরিবেশনায় ছিলেন শিব স্তুতি। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন বিম্বাবতী দেবী, সঙ্গীত পরিচালনায় গুরু লাকপতি সিং এবং কণ্ঠে দ্রৌপদী দেবী।

এখানে প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায় কলাবতী দেবী গুরু বিপিন সিংহের দ্বিতীয়া পত্নী এবং পূর্বে ছাত্রী ছিলেন। তাঁদের দুজনের কন্যা এবং ছাত্রী বিম্বাবতী দেবী। মণিপুরী নৃৃত্যে যেমন সুুুুদক্ষা ছিলেন বিম্বাবতী দেবী ,তেমনি ছিল তাঁঁর সুুুুগভীর পাণ্ডিত্য। বিপিন সিংহের প্রথমা পত্নীর ছয় সন্তান। তাঁরা বিপিন সিংহের পৈতৃক বাড়িতে থাকেন। এঁরা সবাই আর্য বিষ্ণুপুরী ভাষায় কথা বলেন। বিপিন সিংহরা বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী, তাঁদের সংস্কৃতি মেইতেই মণিপুরীদের থেকে আলাদা। প্রথম পত্নী এবং তাঁর সন্তানেরা কোনদিন সরকারি সম্মান পাননি। বিপিন নর্তনালয়ের উত্তরসূরীর খ্যাতিও ভোগ করেননি। পিতা জীবিত থাকতে তাঁরা গ্রামের মণ্ডপে মাঝে মাঝে নৃত্যের অনুষ্ঠান করেছেন। প্রকৃতপক্ষে এখন ক্লাসিক্যাল মণিপুরী নৃত্যের লাগাম বিষ্ণুপ্রিয়াদের হাতছাড়া হয়ে গেছে। মেইথেইরা এর উপর কর্তৃত্ব করছে।

 মণিপুরী নৃত্যের একজন লিজেণ্ড  ও ন়ৃত্যবিশারদ গুরু বিপিন সিংহ তাঁর প্রতিভা ও কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসেবে জীবনে বহু পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। সেগুলির একটি তালিকা উপস্থাপন করা হচ্ছে।

সম্মান এবং পুরস্কার
-----——--------------—-
তিনি জীবনে বহু সম্মান এবং পুরস্কার অর্জন করেছেন। এর ভিতরে উল্লেখযোগ্য কিছু–

১. নর্তনাচার্য (১৯৫৯ ইংরেজিতে),

২. হাঞ্জাবা (১৯৬১ ইং),

৩. জাতীয় সঙ্গীত নাটক একাডেমি পুরস্কার  (১৯৬৫ ইং),

৪. শ্রীহট্ট সম্মেলন পুরস্কার (১৯৮১ ইং),

৫. বিশ্ব উন্নয়ন সংসদ পুরস্কার (১৯৮২ ইং),

৬. কলাভারতী (১৯৮৩ ইং),

৭. প্রতিশ্রুতি পরিষদ পুরস্কার (১৯৮৪ ইং),

৮. সারঙ্গদেব ফেলোশিপ (১৯৮৪ ইং),

৯. উদয় শঙ্কর পুরস্কার (১৯৮৬ ইং),

১০. ওজা রত্ন (১৯৮৮ ইং),

১১. সঙ্গীত শ্যামলা পুরস্কার (১৯৮৮ ইং),

১২. এমিরেটাস ফেলোশিপ (১৯৮৯ ইং),

১৩. কালিদাস সম্মান (১৯৯০ ইং),

১৪. বহুলকা পুরঙ্কার (১৯৯১ ইং),

১৫. অনামিকা কলা সঙ্গম -পুরস্কার (১৯৯২ ইং),

১৬. পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য একাডেমি এওয়ার্ড (১৯৯২ ইংরেজিতে)।

সম্মান জানানো সংস্হা এবং সাল যথাক্রমে -

১. রূপকার ডান্স একাডেমি (১৯৯৪ ইং),

২. নুপূর ডান্স একাডেমি (১৯৯৫ ইং),

৩. সুরনন্দন ভারতী (১৯৯৫ ইং),

৪. শিরোমণি পুরস্কার (১৯৯৬ ইং),

৫. নিখিল বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী পুরস্কার (১৯৯৭ ইং),

৬. অঙ্গাহার ডান্স একাডেমী (১৯৯৮ ইং), ইত্যাদি
গুরু বিপিন সিংহ প্রয়াত। গতবছর তাঁর জন্ম শতবার্ষিকী কলকাতায় এবং বর্তমান আসামের কাছাড় জেলার শিলচরের কাছে তাঁঁর জন্ম ভিটেতে উদযাপন করা হয়। গুরু বিপিন সিংহ নৃত্যবিশারদের জন্য ভারতবাসী গর্ব অনুভব করে।

কাজরী,
১জুন, ২০১৮

SUNITI Debnath

আমি সুনীতি দেবনাথ, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি শিক্ষিকা। কবিতা, প্রবন্ধ ও ছোটগল্প লিখি। কবিতা আমার প্রিয়ভূমি, শৈশব থেকেই হেঁটে চলেছি...

৪টি মন্তব্য:

  1. মণিপুরী রাসকে স্টেজ উপযোগি করেছেন মনিপুরী নৃত্রের ত্রিরত্ন মাইস্নাম আমুব সিং, অতোম্বা সিঙ, আমুদোন শর্র্মা। মন্দিরে বাইরে মণিপুরী রাস প্রথমবারে মতো আয়োজন হয় ১৯২১ সালে প্রিন্স অব ওয়েলসের সন্মানে। পরিচালনায় ছিলেন গুরু মাইস্নাম আমুবী। প্রবাদ প্রতীম নৃত্যশিল্পী উদয়শংকরের আলমোরাতে মণিপুরী দ্রুপদি নৃত্যকে স্টেজ উপযোগি করেছেন তিনি। সংগীত নাটক একাডেমী, ভারতের একটি কন্সটিটিউয়েট ইউনিট হিসেবে জওহরলাল নেহেরু মণিপুর ডান্স একাডেমী, ইম্ফাল ১৯৫৪ সনে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ প্রতিষ্ঠানে মণিপুরী নৃত্য তার কৃষ্টি, ঐতিহ্য, পরম্পরা ইতিহাস সমুন্নত ‘ গুরু শিষ্য পরম্পরা বজায় রেখে নৃত্য প্রশিক্ষণ শুরু করে। গুরু বিপিন সিংহ তাদেরেই শিষ্য। গুরু বিপিন সিংহ বেড়ে উঠা মণিপুরে তাদের হাত ধরেই। অথচ আপনি আপনার উর্বর মস্তিকে বলেছেন, এখন ক্লাসিক্যাল মণিপুরী নৃত্যের লাগাম বিষ্ণুপ্রিয়াদের হাতছাড়া হয়ে গেছে। মেইথেইরা এর উপর কর্তৃত্ব করছে। যে জিনিষ কোনদিন বিষ্ণুপিওয়াদের ছিলনা সেটার লাগাম হাতছাড়া হতে যাবে কোন দু:খে।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. রাসলীলা টি প্রকৃতপক্ষে বিষ্ণুপুরী সংস্কৃতি, এটি মণিপুরী সংস্কৃতি নয়। মণিপুরীরা বাংলা ব্রজবুলি ভাষায় রাসলীলা করতো। এই মনিপুরে বাংলা ব্রজবুলি কে শেখালো মণিপুরীদের? বিষ্ণুপুরীরা আজও বাংলা ব্রজবুলি মৈথিলী ভাষায় রাস লীলা করে। তাহলে কি করে এটি মণিপুরী রাসলীলা হয়ে গেলো। এটি পরিষ্কার এক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সাধিত হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিষ্ণুপুরী গ্রাম মাছিমপুর, সিলেটে এসেছিলেন 6 নভেম্বর 1919 সনে। বিষ্ণুপুরীরা বাংলা ব্রজবুলি ভাষায় রাস করে উনাকে মুগ্ধ করেছিল। বিষ্ণুপুরীরা বেঙ্গল মিশনারি যারা এই মনিপুরে রাসলীলা নিয়ে এসেছিলো। আজ পর্যন্ত এরকম ঘটনা শুনা যায়নি যে এক সম্প্রদায় প্রথমেই অন্য সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি কে প্রদর্শন ও পরিচয় করাবে এক সম্মানীয় ব্যক্তির সমক্ষে। কিন্তু মণিপুরী তো এমনেই সংস্কৃতি যাকে প্রথমে অন্য সম্প্রদায়ের লোকেরা জগতের সমক্ষে পরিচয় করে দিয়েছিলো। বাস্তব কথা হলো বিষ্ণুপুরী রাস সংস্কৃতিকে দখল করার জন্য অবিষ্ণুপুরীরা এক গভীর ষড়যন্ত্র করে বিষ্ণুপ্রিয়া মনিপুরি নামকরণ বের করেছিল বিষ্ণুপুরিদের ধ্বংস করার জন্য। যাহাতে বিষ্ণুপুরী রাসলীলা চিরকাল মনিপুরি সংস্কৃতি থাকতে পারে আর কোটি টাকা উপার্জন হবে, বিষ্ণুপুরী জনসংখ্যা সেন্সাসে মণিপুরিতে ঢুকে মনিপুরি জনসংখ্যা বৃদ্ধি হবে এবং বিষ্ণুপুরীদের মনিপুর হ্যান্ডলুমের এক বিশাল বাজার বানিয়ে মনিপুর হ্যান্ডলুমের উপকার করানো যাবে। এটি এক শোষণ প্রক্রিয়া।

      মুছুন
  2. আপন কৃষ্টি ঐতিহ্য ইতিহাসের আলোকে মণিপুরী নৃত্যকে সংরক্ষণ লালন করে বিশ্বময় ছড়িযে দিতে যে সকল প্রতিষ্ঠান অগ্রণী, অনন্য ভূমিকা পালনে করে চলেছে জওহরলাল নেহেরু মণিপুর ডান্স একাডেমী, ইম্ফাল মণিপুর তাদের অন্যতম। প্রতিষ্ঠানের হীরক জয়ন্তী বিগত ২০১৪ সালে নানান আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়। বর্ষব্যাপি এ উৎসব ছিল প্রতিথযশা গুরু, শিল্পী, সাহি্ত্যিক, প্রাক্তণীদের মিলন মেলা। উৎসবের আয়োজিত Growth & Development of Manipuri Dance – A Perspective’ বিষয়ক সেমিনারে অংশ নিয়েছিল আর কে সিংহজীৎ, দেবযানি চালিহা, রতন থিয়াম, লীলা ভেংকটারমন, প্রীতি প্যাটেল, ডব্লিউ লোকেন্দ্রজীৎ সিং মতো মণিপুরী নৃত্যের জীবন্ত কিংবদন্তী শিল্পী গবেষক, রথি মহারথি গুরু শিক্ষক শিল্পীরা।
    উৎসবে প্রকাশিত স্মারকে প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তণী বিশ্বখ্যাত মণিপুরী নৃত্যশিল্পী পদ্মশ্রী দর্শনা ঝাভেরী তাঁর Preservation of Classical Manipuri Dance প্রবন্ধে স্মৃতিরমন্থন করে বলেন-
    I recollect the rare occasion in our life in 1956 when we four Jhaveri sisters ( late Nayana and Ranjana, Suverna, Darshana) performed 5 traditional Bhangi Parengs learnt from Guru Bipin Singh, in front of three great Guru - Ojha Amubi Singh, Ojha Atomba Singh, Ayga Amudon Sharma in Johnston High School at the premise of Jawaharlal Nehru Manipur Dance Academy founded in Imphal in 1954 . We were blessed with individual certificates from them as well as Diploma from JNMDA.
    প্রবন্ধে নৃত্যগুরু বিপিন সিং-এর দৃষ্টিভঙ্গি পরিস্কারভাবে তুলে ধরে তিনি বলেন-
    Guruji approached the great masters in Manipur, Cachar, Tripura and convinced them to part with the rare and hidden knowledge with them. He realized that gurus were aware of some of the classical elements however in their own Meitei terminology. Hence He wanted to give a scientific and methodical orientation and approach to Manipuri dance.
    অথচ গুরু বিপিন সিং, কলাবতি দেবী, জাভেরি সিসটার্স –এর মণিপুরী নৃত্যকে ‘বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী ঘরানা’ নাম দিয়ে নতুন নৃত্যধারা প্রর্বতনের বৃথা অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আপনার মতো অনামা গবেষক।

    উত্তরমুছুন
  3. রাসলীলা টি প্রকৃতপক্ষে বিষ্ণুপুরী সংস্কৃতি, এটি মণিপুরী সংস্কৃতি নয়। মণিপুরীরা বাংলা ব্রজবুলি ভাষায় রাসলীলা করতো। এই মনিপুরে বাঙ্গলা ব্রজবুলি কে শেখালো মণিপুরীদের? বিষ্ণুপুরীরা আজও বাংলা ব্রজবুলি মৈথিলী ভাষায় রাসলীলা করে। তাহলে কি করে এটি মণিপুরী রাসলীলা হয়ে গেলো। এটি পরিষ্কার এক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সাধিত হয়েছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিষ্ণুপুরি গ্রাম মাছিমপুর, সিলেটে এসেছিলেন 6 নভেম্বর, 1919 সনে। বিষ্ণুপুরীরা বাংলা ব্রজবুলি ভাষায় রাসলীলা করে উনাকে মুগ্ধ করেছিল। বিষ্ণুপুরীরা বেঙ্গল মিশনারি যারা এই মনিপুরে রাসলীলা নিয়ে এসেছিলো। আজ পর্যন্ত এরকম ঘটনা শুনা যায়নি যে এক সম্প্রদায় প্রথমেই অন্য সম্প্রদায়ের সংস্কৃতিকে প্রদর্শন ও পরিচয় করাবে এক সম্মানীয় ব্যক্তির সমক্ষে। কিন্তু মণিপুরী তো এমনেই সংস্কৃতি যাকে প্রথমে অন্য সম্প্রদায়ের লোকেরা জগতের সমক্ষে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো। বাস্তব কথা হলো বিষ্ণুপুরী রাস সংস্কৃতিকে দখল করার জন্য অবিষ্ণুপুরীরা এক গভীর ষড়যন্ত্র করে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী নামকরণ বের করেছিল বিষ্ণুপুরিদের ধ্বংস করার জন্য। যাহাতে বিষ্ণুপুরি রাসলীলা চিরকাল মণিপুরী সংস্কৃতি হয়ে থাকতে পারে আর কোটি টাকা উপার্জন হবে, বিষ্ণুপুরি জনসংখ্যা সেন্সাসে মণিপুরিতে ঢুকে মণিপুরী জনসংখ্যা বৃদ্ধি হবে এবং বিষ্ণুপুরীদের মনিপুর হ্যান্ডলুমের জন্য এক বিশাল বাজার বানিয়ে মনিপুর হ্যান্ডলুমের উপকার করানো যাবে। এটি এক শোষণ প্রক্রিয়া।

    উত্তরমুছুন