লেখা-লেখি

একটি কবিতা এবং

৬:২৮:০০ PM 0 Comments







কিছু কিছু কবিতা লেখার আগে ও পরে মনে দ্বৈত ভাবনা ঝড় তোলে । বিষয়টা যে হালহামেশা ঘটে তা কিন্তু নয়। প্রথমেই বলেছি কিছু কিছু কবিতার ক্ষেত্রে এই ব্যাপার একটু বেশি বেশি মাত্রায় ঘটে। প্রথমত কবিতাটি লেখার আগে একটা উন্মাদ তাড়না লিখে ফেলার জন্য মনটাকে ছিঁড়েখুঁড়ে ভেঙ্গেচুরে খানখান করে ফেলে। পারিপার্শ্বিক এমন কিছু বিষয় - আশয়, কার্যক্রম বা ঘটনা পরম্পরা মনের উপর এমন চাপ সৃষ্টি করতে থাকে তার প্রতিক্রিয়ায় একটি কবিতা না লিখে পারা যায় না। কথা হচ্ছে যে বিষয় নিয়ে কবিতাটি লেখার তাড়না সৃষ্টি হয় তা কিন্তু মনোহারী নাও হতে পারে। বরং মর্মবিদারক হতে পারে। সেক্ষেত্রে তাড়নার পাশাপশি হৃদয়ে রক্তমোক্ষণ শুরু হয়। অতএব না লেখা অব্দি নিস্তার মেলে না। অতএব লিখে নিতে হয়। লিখে নেওয়া হলো একেবারে পূর্ব পরিকল্পনাবিহীনভাবে। অবশ্যই আমার প্রায় সব কবিতাই এমনি পরিকল্পনাবিহীন। কারণ কবিতা লিখতে গিয়ে আমি প্রথমে এবং সবশেষে আমার কর্তা মন ও  হৃদয়কেই বেশি পাত্তা দিই। এবং আমি মনে করি এই দুটি নিয়ন্ত্রক শক্তি সদাসর্বদা এবং অতি অবশ্যই সঠিক নির্দেশনাই দেয়। যুক্তিতর্ক বা লজিক সত্যের পথে নিয়ে যায় চাঁছাছোলা কটমটে কাঠখোট্টাভাবে। অন্যদিকে মন - হৃদয় তাতে বাড়তি মোলায়েম আবেগ আর ভালবাসার প্রলেপ দেয়। উপযুক্ত স্থানে প্রদীপ্ত আবেগ ঝকঝকে শাণিত করে তোলে কবিতাকে। 
    যাইহোক প্রথম ধাপে তাড়না - আবেগে হিসেবনিকেশের বালাই মাত্র না রেখে মন -হৃদয়ের হাতে সঁপে দিয়ে নিজেকে কবিতাটা লিখে ফেলা হলো। এবার মনোযোগ সহকারে কবিতা পাঠ ও বিচার বিশ্লেষণ। খুব কম ক্ষেত্রেই মন - হৃদয়ের কথা শুনে লেখা কবিতাকে অকবিতা মনে হয়েছে। বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিছু কিছু পংক্তি বেশ ভালোই লেগেছে। খুব বেশি এডিট কখনোই করিনি। এডিট করতে গেলে একটা অদ্ভুত উপলব্ধি মনে জেগে ওঠে, এ যেন অনধিকার চর্চা হয়ে যাচ্ছে। লিখে ফেলা কবিতার খুব একটা ওলোটপালট করা যেন নিষিদ্ধ। তাই প্রায় সব ক্ষেত্রেই কবিতাকে হুবহু স্বরূপে রেখে শুধুমাত্র অসাবধানতাবশতঃ সামান্য টাইপের ত্রুটি, শব্দের লাফঝাঁপজনিত বানানের বিচ্যুতির সামান্য সারাই করে নিই। চেষ্টা করেও বড়সড় এডিট পারিনি,  করিনি। অনেক সময়, বলা যায় প্রায় সবক্ষেত্রেই কোন কবিতা লেখার পর পরিপূর্ণ তৃপ্তি  পাইনি। মনে হয় যা বলার ছিলো তা বলা হলো না। তাই লিখে ফেলার আনন্দের বদলে একটা অতৃপ্তি , একটা যন্ত্রণা  থেকেই যায়। পূর্ণানন্দ, পূর্ণ তৃপ্তি পাবার কবিতা তাই অতি কম লিখেছি। কবিতা লেখার ক্ষেত্রে ভাব- ভাবনার ঝাড়াই - বাছাই, সূক্ষ্ম অর্থে ফিলট্রেশন লেখার সময়েই হয়ে যায়,  শব্দগুলিও হুড়মুড়্ করে নিজেদের জায়গায় আসম পেতে বসে পড়ে। যা হবার প্রথমেই হয়ে যায়।  তাই লেখার পরের পর্বে টুকিটাকি করা এবং অতৃপ্তির বেদনা পাওয়া ছাড়া কিছু থাকে না। 
   বিগত ২৪ জুলাই তারিখে লিখেছি ' উত্তর দাও ' কবিতাটি। কবিতাটি লেখার পর একটি গ্রুপে পোস্ট করলে বিতর্কের ঝড় তুলে তিনদিন ধরে। সুনামী যেন। ছোট একটি কবিতা, বিজ্ঞজনেরা এটাকে কবিতা বলবেন কিনা  জানি না। আমি নিজেই এ ব্যাপারে সন্দিহান। যা বলতে চেয়েছি তার কতটুকুই বা বলতে পারলাম সন্দেহ থেকে গেছে। তবু  প্রতিক্রিয়া দেখে এবং বিতর্ক শেষে বিষয়বস্তু সম্পর্কে সবাই সহমত পোষণ করেছেন দেখে ভালো লেগেছে। কবিতার নান্দনিক বিচারে হয়তো বা এটি উত্তীর্ণ হবে না। নিম্নে কবিতাটি উদ্ধার করা হলো।

উত্তর দাও
------------------------------
© সুনীতি দেবনাথ


আজ বিষাদনীলিমা ছেয়ে গেলো
আকাশে বাতাসে জলে স্থলে মগ্নচৈতন্যে।
আমরা একুশের মানুষ বলতে লজ্জা পাই অগ্রগমন মানুষের ইতিহাস জানা ছিলো 
এই শতকে বাংলা থেকে ফ্রান্স যা ঘটে গেলো
সে তো নিখাদ পশ্চাদ্গমনের নয়া ফরমান।
ধর্ম কি মানুষের হত্যাকারী হতে পারে?
ধর্মান্ধতা সভ্যতার ইতিহাস হতে পারে কি?
 যদি হয় বলবো সে ধর্ম নিপাত যাক।
সাধারণ মানুষ যারা তারা তো ক্ষমতার জন্য কখনো খেয়োখেয়ি করেনি কোন কালে
তবে তারাই কেন মরবে অসহায় হয়ে?
ধর্ম হবে সন্ত্রাসবাদ, সন্ত্রাসী হয়ে ঝরাবে রক্ত?
কেন মানুষের প্রাণ নিয়ে স্বার্থান্বেষী জেহাদী ঘোষণা?
নিত্য প্রাণ নিয়ে ছিনিমিনি খেলা নিষ্ঠুর হয়ে,
কী এমন মহান কাজ জানি না, একটি শুধু
একটি মাত্র প্রাণ পেরেছো কি সৃষ্টি করতে? 
তবে এ কেমন জেহাদ উত্তর দাও। 

কাজরী, 
২৪ জুলাই, ২০১৬

SUNITI Debnath

আমি সুনীতি দেবনাথ, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি শিক্ষিকা। কবিতা, প্রবন্ধ ও ছোটগল্প লিখি। কবিতা আমার প্রিয়ভূমি, শৈশব থেকেই হেঁটে চলেছি...

0 comments: