লেখা-লেখি

জন্ম সার্ধশতবর্ষে রজনীকান্ত সেন

৯:২৫:০০ PM 0 Comments
























© সুনীতি দেবনাথ


কার মুখে শুনেছি খেয়াল নেই  বাঙালি আত্মবিস্মৃত জাতি। কথাটা কিন্তু মনে গেঁথে আছে। আর সেই আত্মবিস্মৃতির কারণে মূল্যবান অনেক কিছুই বোধহয় আমরা হারিয়ে ফেলি। রজনীকান্ত সেনের সমসাময়িক অনেক কবির জন্ম সার্ধ - শতবর্ষ যেখানে ধুম - ধাড়াক্কার মধ্য দিয়ে পালন করা হচ্ছে,  সেখানে রজনীকান্তের নাম অনুচ্চারিত। আশ্চর্য হতে হয়। এভাবে আমাদের অস্বীকৃতি বহু বহু মূল্যবান প্রতিভাকে বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে দেবে। বিশেষ করে রজনীকান্তের মত অনবদ্য কবি,  গীতিকার, সুরকার ও গায়কের  ক্ষেত্রে বিস্মৃতি অমার্জনীয় অপরাধ।
     ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে, রজনীকান্তের দুটি গান ঘরে ঘরে শোনা যেতো। এই দুটি গানের একটি হলো ' মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নেরে ভাই ...:, আর অপরটি 'তুমি নির্মল কর,  মঙ্গল করে,  মলিন মর্ম মুছায়ে ...'। প্রথমটি স্বদেশগীতি এবং শেষটি ভক্তিগীতি। বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন আর ফলশ্রুতিতে যখন স্বদেশী আন্দোলন বাংলাকে স্বদেশীগ্রহণ ও বিদেশী বর্জনের জন্য আলোড়িত করে তুলেছিলো সেই পটভূমিতে রজনীকান্ত লিখেছিলেন এই অনবদ্য সঙ্গীতটি।  সারা বাংলা সেদিন এই সঙ্গীতে মেতে উঠেছিল। এই এক গান দিয়েই সেদিন রাজশাহীর কবি  রজনীকান্ত অখণ্ড বাংলার কান্তকবি হয়ে  ওঠেন। তাঁর এই গান তখনকার স্বদেশী আন্দোলনে সুপ্রচুর অনুপ্রেরণা সঞ্চার করেছিলো।  গভীর আন্তরিকতা আর স্বদেশপ্রেমের আকুতিতে সুদীর্ঘ কালব্যাপী এই গান মুখে মুখে ফিরেছে। দ্বিতীয় গানটিও প্রাণের আকুুতিতে, সুগভীর ভাবের ব্যঞ্জনায় মর্মস্পর্শী। লোকমুখে বিপুল বিস্তৃতি ঘটে এর।
        ১৮৬৫সালের ২৬ জুলাই রজনীকান্তের জন্ম হয়েছিল পাবনা জেলার সিরাজগঞ্জ মহকুমার ভাঙাবাড়ি গ্রামে। বাবা গুরুপ্রসাদ সেন মা মনমোহিনী দেবী। রজনীকান্তের বাবা গুরুপ্রসাদ সেন পেশায় ছিলেন ঢাকার মুন্সেফ পরে তিনি  বরিশালের সাব-জজ হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর অন্য বিশেষ পরিচয় হচ্ছে তিনি কবিও ছিলেন।তিনি  ব্রজবুলি ভাষায় বৈষ্ণব পদাবলী ও শিবদুর্গার পদাবলী রচনা করেছিলেন। পিতার কাব্য প্রীতির প্রভাব রজনীকান্তের উপর পড়েছিল।
     ছেলেবেলায় অবসরকালীন সময় প্রতিবেশীদের বাড়িতে কাটানো তিনি পছন্দ করতেন। সেখানে রাজনাথ তারকরত্নের কাছে সংস্কৃত শেখেন। গোপাল চন্দ্র লাহিড়ী ছিলেন তাঁর  শিক্ষাগুরু। প্রথমে বোয়ালিয়া জিলা স্কুল এরপর কুচবিহার জেনকিন্স স্কুলে পড়েন। এন্ট্রান্স বৃত্তি সহ পাশ করে রাজসাহী কলেজ থেকে এফ এ পাশ করেন!। এফএ পাশ করে তিনি কলকাতায় সিটি কলেজে ভর্তি হলেন এবং ১৮৯১ সালে বিএ পাশ করেন। এর পর বিএল পাশ করে রাজশাহীতে ওকালতি শুরু করেন। এক সময় প্রাচুর্যের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করেছিলেন।  কিন্তু পরবর্তীতে  নিঃস্ব হয়ে পড়লেন। তখন জীবনটা তাঁর কাছে একটা বড় পরীক্ষা হয়ে উঠল। তবু সব বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করে তিনি এগিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।
তিনি জীবনকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে যেন এগিয়ে যেতে চাইলেন। তাঁর চরিত্রের দৃঢ়চেতা রূপটি এভাবে পরিলক্ষিত হয়।
        ছেলেবেলা থেকেই রজনীকান্তের সঙ্গীতের প্রতি ছিলো নিবিড় ভালোবাসা। কেবল একটি বাঁশি দিয়েই তিনি সঙ্গীত চর্চার অন্যান্য সকল সাজসরঞ্জামের অভাবকে পুষিয়ে নিয়েছিলেন। একের পর এক স্বজনের মৃত্যু তাঁকে বিপর্যস্ত করলেও গভীর সঙ্গীত প্রীতি থেকে বিচ্যুত হননি। সমস্ত ব্যথা বেদনাকে উপেক্ষা করে রজনীকান্ত একজন একনিষ্ঠ সাধকের একাগ্রতা নিয়ে সঙ্গীতের অন্দরমহলে প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন। আর তাই তাঁর সাধনার ফলশ্রুতিতে তিনি সাফল্যও অর্জন করেছিলেন। সমকালীন কবিদের মত তিনি হাজার গান রচনা করেননি। কিন্তু তাঁর গানের সুরের লালিত্য আর সর্বোপরি সারল্য গানগুলিকে এমনি মাধুর্য মণ্ডিত করে তুলতো যে, শ্রোতাদের মন বিস্ময়াভিভূত হয়ে যেতো।পঞ্চকবির মধ্যে রজনীকান্তের গানই সর্বাপেক্ষা বেশি ভাবগম্ভীর এবং দার্শনিক তাৎপর্যপূ্র্ণ। তাঁর লেখা গান কান্তগীতি নামে পরিচিত। তাঁর লেখা গানগুলিকে দেশাত্মবোধক, ভক্তিগীতি, প্রীতিমূলক এই কটি ভাগে ভাগ করা হয়। তবে এর বাইরে তিনি  কিছু রম্যগীতিও লিখেছিলেন। আবগারি বিভাগের পরিচালক দ্বিজেন্দ্রলাল রায় একবার রাজসাহী এলে তাঁর রম্যগীতি শুনে কান্তকবিও হাস্যরসাত্মক গান রচনা  করতে উৎসাহিত হন। প্রসঙ্গত উলেখ করতে হয় যদিও দ্বিজেন্দ্রলালের রম্যগানে মুগ্ধ হয়ে রজনীকান্ত রম্যগীতি লিখতে শুরু করেন, তবু বিশেষজ্ঞদের মতে দুজনের রম্যগীতির চরিত্র একেবারে ভিন্ন ছিলো।  এই প্রসঙ্গে প্রমথনাথ বিশী বলেন.,  " দ্বিজেন্দ্রলালের হাসির গান যদি শুক্ল শীতের বাতাস হয় রজনীকান্তের হাসির গান বর্ষায় জলভারাক্রান্ত পূবের বাতাস "। লক্ষনীয় স্বজন মৃত্যুর অতলান্ত বেদনার মধ্যেও রজনীকান্ত ৪৫ বছরের স্বল্পায়ু জীবনে সঙ্গীত রচনা থেকে বিরত থাকেননি।
      "এক অর্থে এই তারকেশ্বর চক্রবর্তীই হলেন রজনীকান্তের সঙ্গীতগুরু —যদিও ঠিক নিয়ম মেনে প্রথাগত সঙ্গীতাভ্যাস রজনীকান্ত করেননি। "
রজনীকান্তের কন্যা শান্তিলতাদেবীর একটা লেখায় এই তথ্য জানা যায়। কে তারকেশ্বর চক্রবর্তী? ইনি রজনীকান্তের বন্ধু এবং চৌদ্দ বছর বয়সে দুজনের পরিচিতি ঘটেছিল। তারকেশ্বর সুন্দর গান গাইতেন তাঁর গান শুনে রজনীকান্ত সঙ্গীতের প্রতি অধিকতর আকৃষ্ট হয়েছিলেন। তবে একথা সত্য রজনীকান্ত স্বয়ং সুগায়ক ছিলেন বলে রাজশাহীতে অবস্থানকালে স্বরচিত গান গেয়ে নানা অনুষ্ঠানে, মজলিশে, সাহিত্যসভায় আসর মাতিয়ে দিতেন। প্রমথনাথ বিশী তাঁকে বলেছেন, "উৎসবরাজ "।
     ‘বাণী’ ও ‘কল্যাণী’ গ্রন্থ দুটি কবির গানের সংকলন। তাঁর গানগুলোর সুর মূলত ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত ঘরানার, তবে এর সাথে কীর্তন,বাউল ও টপ্পার সুরমিশ্রণ দেখা যায়। আইন ব্যবসায়ে মোটেই মন বসে নি, আগ্রহী ছিলেন সঙ্গীত, সাহিত্য ও নাটকে। খুব স্বল্প তিনি গান লিখতে পারতেন। রাজশাহীর যে কোন উৎসব অনুষ্ঠানে রজনীকান্তের গান ছিল অবধারিত।
নীতিকবিতা লেখার ক্ষেত্রেও তাঁর প্রতিভা স্মরণীয়, যেমন স্বাধীনতার সুখ,উপযুক্ত কাল প্রভৃতি এর নিদর্শন। রবীন্দ্রনাথকে রজনীকান্ত প্রথম সাক্ষাতের দিন দুটি গান গেয়ে শোনান, কবিগুরু তাতেই বেশ মুগ্ধ হন এবং কান্তকবিকে তাঁর বাসায় যেতে বলেন। কান্তকবির শেষজীবনে অসুস্থতার সময় রবীন্দ্রনাথ তাঁকে দেখতে হাসপাতালে আসেন।
      হিন্দু হস্টেলে থেকে পড়াশুনা করার সময় তিনি স্বরচিত গান খঞ্জনী বাজিয়ে গেয়ে পথ পরিক্রমা করতেন। পড়াশুনার শেষে রজনীকান্ত রাজশাহী শহরে ওকালতি ব্যবসা শুরু করেছিলেন। তবে তাতে তিনি মনোনিবেশ করতে পারেননি। এক দিকে চলতে থাকে ওকালতি অন্য দিকে গান ও কবিতা রচনা। শরৎ কুমার রায়কে তিনি নিজেই লিখেছিলেন , "আমি আইন ব্যবসায়ী কিন্তু ব্যবসা করিতে পারি নাই।"
       ১৯০২-এ তাঁর প্রথম গ্রন্থ ‘বাণী’ প্রকাশিত হয়। শোনা যায় স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্যদের কাছ থেকে উৎসাহ পেয়েও সুরেশচন্দ্র সমাজপতির ভয়ে তিনি এই বইটি ছাপতে চাননি। পরে জলধর সেনের কলকাতার বাড়িতে সুরেশচন্দ্র সমাজপতি তাঁর গান শুনে সেগুলি গ্রন্থাকারে ছাপাতে বললে তা প্রকাশ করেন।  ১৯০৫-এ তাঁর দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘কল্যাণী’ প্রকাশিত হয়েছিল। জীবিতাবস্থায় তাঁর তৃতীয় গ্রন্থ 'অমৃত'। প্রথম দুটি সঙ্গীতের বই।  মৃত্যুর আগে তিনটি এবং মৃত্যুর পরে পাঁচটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল। কান্তকবির কন্যা শান্তিলতা দেবী জানান তাঁর গানের সংখ্যা ২৯০ টি, এটি সম্পূর্ণ সংখ্যা নয় বলেও তাঁর অভিমত। ভক্তি রসাত্মক গানে কবি ঈশ্বরভক্তির কাছে কিভাবে আত্মসমর্পণ করেন তা বুঝা যায়, তেমনি হাস্যরসাত্মক গান কবির সঙ্গীতবৈচিত্র্যের পরিচায়ক।আরেকটি কথা কান্তকবি সম্সর্কে বলতেই হয়। অতি দ্রুত ও স্বল্প সময়ে তিনি একটা গান লিখে ফেলতে পারতেন।
   কবি হিসেবেও রজনীকান্ত প্রভূত খ্যাতির অধিকারী হয়েছিলেন।তাঁর কবিতা  নির্মল আবেগে এবং কোমল সুরের ব্যঞ্জনায় ঋদ্ধ ও সমৃদ্ধ। ব্যঙ্গ কবিতা রচনায় কবি সিদ্ধহস্ত ছিলেন। তাঁর ব্যঙ্গ কবিতাগুলো রসচাতুর্যে ও রস নিবেদনে অপূর্ব! প্রচ্ছন্ন শ্লেষ ও চতুরতায় সমকালীন সমাজেের সংস্কার ও শিক্ষিত সমাজের অসঙ্গতি নিয়ে ব্যঙ্গ কবিতা লেখেন।
তিনি সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে তীব্র ব্যঙ্গ করেছিলেন। তৎকালীন সামাজিক সংস্কার, শিক্ষিত সমাজের বিকৃতি ইত্যাদি উপকরণ নিয়ে ব্যঙ্গ করার সাথে সাথে গ্লানিমুক্ত নির্দোষ হাসির কবিতাও তিনি লিখেছেন। এদেশের ঐতিহাসিক গবেষণার প্রতি প্রচ্ছন্ন শ্লেষের সাথে কৌতুকরসের পরিবেশনা করেন।
গল্প,কাহিনী বা নিছক কলাশিল্পের সাহায্যে কবি জ্ঞানগর্ভ নীতিকথা বা তত্ত্ব প্রচার করেন। নীতিকথার তীব্রতা কল্পনার স্পর্শে যাতে কোমল ও কান্তরূপ পরিগ্রহ করে, তাই কবি হৃদয়ের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। সেই দৃষ্টিকোণে রজনীকান্ত সেনের 'অমৃত' কাব্যগ্রন্থটি একটি সার্থক নীতি কবিতার অন্তর্ভূক্ত।
১৯০৯ সালে রজনীকান্ত কণ্ঠনালীর প্রদাহজনিত কারণে সমস্যা ভোগ করতে থাকেন। আর্থিক সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করা সত্ত্বেও একই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর তারিখে তাঁকে জোরপূর্বক কলকাতায় ় প্রেরণ করেন পরিবারের সদস্যরা। একজন ব্রিটিশ ডাক্তার তাঁকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন ও তাঁর ল্যারিঙ্কস ক্যানসার হয়েছে বলে সনাক্ত করেন। এরপর তিনি কলকাতার বিভিন্ন প্রথিতযশা ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। কিন্তু তাঁর অবস্থার আর উত্তরণ হয়নি, বরঞ্চ উত্তরোত্তর অবনতি হতে থাকে।
শেষ আশ্রয় হিসেবে বারাণসীতে ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রকৃতি প্রদত্ত আরোগ্য লাভের আশায় বেশ কয়েকমাস ব্যয় করেন। এ ব্যয়ভার বহনের লক্ষ্যে খুবই বিষণ্ণ চিত্তে তাঁর প্রকাশিত 'বাণী' এবং 'কল্যাণী' বই দু'টোর গ্রন্থস্বত্ত্ব বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন তিনি। কলকাতায় আবার  ফিরে এলেও শারীরিক অবস্থা ক্রমশ আরো ভেঙ্গে পড়ে। এরপর তিনি ১০ ফেব্রুয়ারি, ১৯১০ তারিখে ক্যাপ্টেন ডেনহ্যাম হুয়াইটের তত্ত্বাবধানে কলিকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ট্রাকিওটোমি অপারেশন করান। এরফলে তিনি কিছুটা আরোগ্য লাভ করলেও চিরতরে তাঁর বাকশক্তি হারিয়ে যায় । অপারেশন পরবর্তী জীবনের বাকী দিনগুলো় হাসপাতালের কটেজ ওয়ার্ডে কাটাতে হয়।
হাসপাতালে থাকাকালীন তিনি তাঁর দৈনিক দিনলিপি বা ডায়েরী সংরক্ষণ করতেন। এছাড়াও, আত্মজীবনী লিখতে শুরু করলেও একটিমাত্র অধ্যায়েই তা শেষ হয়ে যায় মৃত্যুজনিত কারণে। কিছু কবিতাপ্রেমী ব্যক্তিত্ব এবং কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ছাত্ররা তাঁর দেখাশোনা ও খোঁজ-খবর নিতেন। মহারাজা মনীন্দ্র চন্দ্র নন্দী এবং শরৎ কুমার রায় তাঁকে আর্থিক
 সহযোগিতা করেন। স্মর্তব্য যে, ১১ জুন, ১৯১০ তারিখে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রজনীকান্ত সেনকে দেখার জন্যে হাসপাতালে  গিয়েছিলেন। তখন রজনীকান্তের লিখিত একটি গান তাঁর পুত্র ক্ষিতীন্দ্রনাথ এবং কন্যা শান্তিলতা হারমোনিয়ম সহযোগে গেয়েছিলেন । রজনীকান্ত বিশ্বাস করতেন যে, ঈশ্বর তাঁকে ব্যথা-বেদনা দিয়ে তাঁর পবিত্র আত্মাকে শুদ্ধ করছেন। এ বিশ্বাসটুকু তাঁর অন্তঃশক্তি প্রদান করে শারীরিকভাবে ব্যথা থেকে সাময়িক বিমুক্ত রাখতে সহায়তা করেছে। তাঁকে আত্মনিমগ্ন রেখে এবং সঙ্গীত  রচনা করতে সাহায্য করেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে ঐদিন সাক্ষাতের প্রতিফলন হিসেবে নিম্নবর্ণিত গানটি রচনা করেছেন রজনীকান্ত সেন।
"আমায় সকল রকমে কাঙ্গাল করেছে, গর্ব করিতে চূর,.,, "
তারপর তিনি গানটিকে কবিতা আকারে বোলপুরে রবীন্দ্রনাথের কাছে পাঠিয়ে দেন। উষ্ণপ্রকৃতির এ কবিতা হাতে পেয়ে রবিঠাকুর ৩০ জুলাই একটি চিঠি লেখেন। তাতে তিনি রজনী'র ব্যাপক সাহিত্য প্রতিভা এবং গৌরবময় ভূমিকার কথা সবিশেষভাবে উল্লেখ করেন। এর মাধ্যমেই তাঁর অন্তরাত্মা শক্তি ও সাহস জুগিয়ে সর্বপ্রকার ব্যথা-বেদনা থেকে মুক্ত থাকবে বলে ব্যক্ত করেন। এ সময়ে রজনীকান্ত বেশ কিছু আগমনী এবং বিজয়া'র গান রচনা করেন।
    রজনীকান্তের শেষ দিনগুলো ছিল অসম্ভব ব্যথায় পরিপূর্ণ। তিনি ১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯১০ সালে (১৩১৭ বঙ্গাব্দের ২৮শে ভাদ্র) মঙ্গলবার রাত্রি সাড়ে আটটার সময় লোকান্তরিত হন। সৃষ্টির একটি অধ্যায় অকালে সমাপ্ত হয়ে গেলো।
    কান্তকবি রজনীকান্ত সেন আমাদের গৌরব। স্বল্পস্থায়ী জীবনে দুঃখের দহনে দগ্ধ হয়েও বাংলার সম্মানজনক সম্পদ ভাণ্ডারে অকাতরে সৃষ্টির নব নব সম্পদ দান করে গেছেন। সেকথা ভুলে যাওয়া বা এই স্রষ্টাকে বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যেতে দেওয়া উত্তরাধিকারী হিসেবে আমাদের নৈতিক অপরাধ হবে বলে মনে করি।

কাজরী,
৩০ জুলাই, ২০১৬
SUNITI Debnath

SUNITI Debnath

আমি সুনীতি দেবনাথ, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি শিক্ষিকা। কবিতা, প্রবন্ধ ও ছোটগল্প লিখি। কবিতা আমার প্রিয়ভূমি, শৈশব থেকেই হেঁটে চলেছি...

0 comments: