লেখা-লেখি

প্রয়াত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং

২:০১:০০ AM 0 Comments














           

            ©সুনীতি দেবনাথ

দীর্ঘদিন যাবৎ মোটর নিউরন ডিজিজের সাথে লড়াই করে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানিত এবং সুপরিচিত একজন বিজ্ঞানীতে পরিণত হওয়া স্টিভেন হকিং ৭৬ বছর বয়সে মারা গেছেন।তিনি  একজন সুরসিক এবং রসবোধ সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব ছিলেন।  বিজ্ঞানের একজন জনপ্রিয় দূত  তিনি সব সময় নিশ্চিত করতেন যেন তাঁর কাজ সাধারণ মানুষ সহজে বুঝতে পারেন।
তাঁর লেখা বই 'এ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম' অনেকটা ধারণার বাইরে বেস্ট সেলার বা সবচেয়ে বিক্রিত বইয়ে পরিণত হয়।যদিও পরিষ্কার বলা যায় না কতজন পাঠক এই বইয়ের শেষ পর্যন্ত পড়তে পেরেছেন।   ‘জীবন যদি মজার না হতো এটি হতো দুঃখভরা’—এ কথাগুলো বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং ধারণ করেছিলেন। ১৪ মার্চ তিনি ৭৬ বছর বয়সে মারা গেছেন। তাঁর দুর্দান্ত রসবোধ, এলিয়েন বা ভিনগ্রহের প্রাণী ও ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বরে দৃঢ় বিশ্বাসের কথা মানুষ দীর্ঘদিন মনে রাখবে। বিশ্বখ্যাত তত্ত্বগুলো আবিষ্কারের পাশাপাশি তাঁর জীবনের কিছু অন্য দিকও আছে।
বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলির মৃত্যুর ৩০০ বছর পূর্তির দিন জন্ম নেন স্টিফেন হকিং। মারা গেলেন আরেক বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী আইনস্টাইনের ১৩৯তম জন্মদিনে। ১৮৭৯ সালের ১৪ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন আইনস্টাইন। স্টিফেন হকিং - এর এ যেন কাকতালীয় ঘটনা।

আইনস্টাইন বলতেন, যে তাঁর উপস্থিত বুদ্ধি বা আইকিউ নিয়ে গর্ব করে সে হারার দলে। আবার  স্টিফেন হকিং নিজেকে মেধাবী মনে করতেন না। তিনি ছিলেন কুড়েদের দলে।
স্কুলজীবনে খুব ভালো গ্রেড পাননি। তিনি ছিলেন গড়পড়তা দলের। তবে স্কুলের বাঁধাধরা লেখাপড়ার বাইরে অন্য কিছু শেখার ব্যাপক ঝোঁক ছিল। ক্লাসে তো রীতিমতো ‘আইনস্টাইন’ খেতাব পেয়েছিলেন তিনি।
যখন জটিল তত্ত্ব নিয়ে কাজ করতেন না, তখন হকিং শিশুতোষ বই লিখতেন। মেয়ের সঙ্গে চার খণ্ডের একটি বই লিখেছেন তিনি। ২০০৭ সালে লেখা ‘জর্জ’স সিক্রেট কি টু দ্য ইউনিভার্স’ বইটি প্রকাশের পর ২০০৯, ২০১২ ও ২০১৪ সালে এর আরও সিক্যুয়েল বের হয়। এসব বইয়ে সহজ ভাষায় অণু-পরমাণু, গ্রহ-নক্ষত্র, ব্ল্যাকহোলের বিষয়ে বর্ণনা করেছেন তিনি।

স্টিফেন হকিং বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম দিকে ছিলেন অনেক বেশি নিঃসঙ্গ। তাই হয়তো একাকিত্ব দূর করতেই যোগ দিয়েছিলেন কলেজের বোট রেসিং টিমে। সবচেয়ে মজার কথাটি হলো, তাঁর দায়িত্ব ছিল রেসের সময় নৌকার হাল ধরে রাখা এবং এই কাজ তিনি এত সফলতার সঙ্গে করেছিলেন যে অল্প কিছু দিনেই হয়ে উঠেছিলেন পুরো অক্সফোর্ডে বিপুল জনপ্রিয়। সপ্তাহে ছয় দিন সন্ধ্যায় অনুশীলন করতে হতো বোট চালানোর।
২০১২ সালে পদার্থবিজ্ঞানীরা ঘোষণা দিলেন যে তাঁরা হিগস-বোসন কণা বা ঈশ্বর কণার দেখা পেয়েছেন। এতে বেশ অখুশি ছিলেন হকিং।  কারণ, বাজিতে হেরে যান হকিং। হকিং তাঁর বন্ধুর সঙ্গে ১০০ ডলারের বাজি ধরে বলেছিলেন, কখনো ঈশ্বর কণার খোঁজ পাওয়া যাবে না। কিন্তু বাজিতে তিনি হেরে যান। এর আগেও ১৯৯৭ সালে তিনি মার্কিন বিজ্ঞানী জন প্রিস্কিলের সঙ্গে বাজি ধরেন। তাঁর কথা ছিল, কৃষ্ণগহ্বর থেকে কিছু বের হতে পারে না। কিন্তু ২০০৪ সালে পরাজয় মেনে নেন তিনি।
  বাবার ইচ্ছে ছিল ছেলে ডাক্তারি পড়বে, নয়তো অক্সফোর্ডে পড়বে অথচ টাকা ছিল না। স্টিফেন হকিং তাই অংশগ্রহণ করলেন স্কলারশিপ পরীক্ষায় এবং সফলতার স্বাক্ষর রেখে টিকেও গেলেন।

কসমোলজি ছিলো  তাঁর প্রিয় বিষয়।
ছোটবেলা থেকে প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল গণিতে, অথচ অক্সফোর্ডে এসে বেছে নিলেন ফিজিকসের একটি অপ্রচলিত শাখা কসমোলজি।
ভারশূন্যতায় থাকার অভিজ্ঞতা তাঁর হয়েছিল।২০০৭ সালে ৬৫ বছর বয়সে রিচার্ড ব্র্যানসনের সাহায্যে ভারশূন্য অভিজ্ঞতা নিতে মহাকাশ ভ্রমণ করেন হকিং। মহাকাশে ভাসতে ভাসতে তিনি চেয়ার ছেড়ে দেন এবং পা ছোড়ার চেষ্টা করেন। সেই বিশ্বের জনপ্রিয় বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং ইহলোকে আর নেই। তাঁর প্রয়ানে শোকস্তব্ধ দুুুনিয়া। এমন বিজ্ঞানী পৃৃথিবীতে আর নেই। পরম শ্রদ্ধা জানাচ্ছি তাঁকে প্রয়ানদিবসেে।

 ( সহায়তা : ইন্টারনেট)

কাজরী,
১৪ মার্চ, ২০১৮

SUNITI Debnath

আমি সুনীতি দেবনাথ, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি শিক্ষিকা। কবিতা, প্রবন্ধ ও ছোটগল্প লিখি। কবিতা আমার প্রিয়ভূমি, শৈশব থেকেই হেঁটে চলেছি...

0 comments: