লেখা-লেখি

অথ শ্রীশ্রী দুর্গা মায়ের সঙ্গে বার্তালাপ

২:২০:০০ AM 0 Comments













ওঠো ওঠো মা গৌরী হিমানী আর নাই,
রাঙামতি সোনা রোদে গাঙ সিনানে যাই ...

ও মা গৌরী ওঠো না ! পথশ্রমে এতো ক্লান্ত তুমি? হিমানী কি কৈলাসেও নেই মা? ওখানেও কি ভূ - উষ্ণায়ন হলো? হবেও বা! তাই বুঝি সোনার অঙ্গে ক্লান্তি আর ক্লান্তি ! হবে না? কেবল যে আগুন ঝরছে আকাশ থেকে। আহা ! মায়ের আমার কত কষ্ট !  সোনার অঙ্গ মলিন হলো !  ও মা শোনো, গাঙ সিনানে যেতে হবে না গো ! সোনা রোদ যে আগুন। ঝলকে ঝলকে পলকে পলকে এ আগুন তোমার সোনার অঙ্গ ঝলসে দেবে গো !  মিউনিসিপ্যালিটির টাইমকল ছিলো ভাগ্যিস, সাত সকালে  ক 'ঘড়া জল টেনেছি। এ দিয়েই সেরে নাও মা তোমার ছেলেপুলে নিয়ে ! গাঙে জল নেই গো ! মরা নদীর সোতা ! শুকিয়ে খা খা ! আহারে তুমি আবার ঘোড়ায় এলে, নৌকো কি ভেঙ্গে গেছে আমাদের কপালের মত? পোড়া কপাল নদী শুকোয়? মাটির তলায় জল চুরি নিত্যদিনের ! এই জল নিয়ে কত বিবাদ ! শুনোনি? তিস্তার জল নিয়ে মা সেকী কাণ্ড ! ভারত বাংলার কুটুমে কুটুমে মুখ দেখাদেখি বন্ধ ! হবেই তো ! জল বলে কথা ! জীবন যে ! আবার দেখো ফারাক্কা নিয়ে কত বায়নাক্কা গো ! ভারত হঠাৎ করে না বলে কয়ে বাড়তি জল ছেড়ে দেয়, ভাসিয়ে নেয় খেতখামার বাড়িঘর বন্যায় ! হাহাকার,  হাহাকার বাংলায় ! দেখো মা এর একটা বিহিত করে দিয়ে যাও এবার ! তুমি তো মা সর্ব শক্তিময়ী কল্যাণী ! তোমায় ছাড়া গতি নেই মা। ও মা, বছর পরে আসো তুমি, কাকে বলি মনের দুঃখ ! এই সেদিন বেঙ্গালুরু আর তামিলনাড়ুতে কী বিবাদ কী বিবাদ কাবেরী নদীর জল নিয়ে মা ! কাড়াকাড়ি মারামারি ! মেরেই ফেললো কয়েকজনকে ! হায় ! ওখানেও জল সমস্যা ! মা তাই বলছিলাম নৌকো নিয়ে এলে পারতে ! তাহলে হয়তো সমস্যার হাল হতো। তা তুমিও পারো ! এলে ঘোড়ায়, যাবে ঘোড়ায়। ভারত পাকিস্তান পায়তারা কষছে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলবে ! যুদ্ধ কি তবে লাগিয়েই যাবে মা? দু' দেশের হর্তাকর্তাদের বিশ্বাস নেই মা। কে কি ভাবছে বলাটা কঠিন। আমরা তো নেহাতই মাথায় গোবর পোরা, বুঝবো কেমনে? কিছু মনে করো না মা, তুমি তো আবার রণচণ্ডী ! যুদ্ধ টুদ্ধ তোমার ভালো আসে ! তাই বুঝি  নৌকোটা মেরামত না করিয়ে ঘোড়াটা নিয়েই এলে? কিন্তু কাশ্মীর সমস্যা, সমাধান পারবে তো? মনে সংশয় জাগে।  তুমি তো সবই জানো মা, এই আগুনজ্বলা বাজার দরের দিন কি করে সব সামলাই বলো? এতোজন সঙ্গে তোমার, এতেই হিমসিম। আবার তোমার সাধের ঘোড়ার দানাপানি? সামলাতে যে হিমসিম ! তাও আবার যুদ্ধ বাঁধাবে ! আমাদের কথা এট্টুখানি ভাববে তো ! রাগ করো না মা ! তুমি অগতির গতি, তোমায় না বলে কাকে বলি মা? যাক্ মা,  তোমার জন্য আনন্দ সংবাদ আছে। ভাঙ্ খোর জামাই ব্যাটাকে জানি তো, তোমার কষ্টও জানি ! আরে আরে রাগ করো না মা। তোমার তো আবার পতিসোহাগ এট্টু বেশি বেশি ! দক্ষ রাজার বাড়িতে তুমি কি করলে আর তোমার জামাই কি কাণ্ড করলো? যজ্ঞ পণ্ড করতে তোমার স্বামীর সেকী তাণ্ডব নৃত্য ! ত্রিভুবন যায় যায় !  একেই বলে দক্ষযজ্ঞ। এবার ওঠো দিকিনি ! স্নানটান সেরে নাও তো। তারপর একটু সাজুগুজু করে ফেলো। তোমাকে পুজো দেবে যে সবাই। তা গয়নাগাঁটি এনেছো তো? নাকি জামাই ব্যাটা সব ভাঙের ছিলিমে খতম করে দিলো? দিক এবার আর অসুবিধে নেই ! জানো তোমার মেয়ে লক্ষ্মী সত্যিই ভালো মেয়ে ! কি করেছে জানো? আমাদের এই গরীব দেশটাকে, মানে ভারতকে ধনে সম্পদে পৃথিবীর সাত নম্বর দেশ করে ফেলেছে গো ! করবে না? আমরা কি ওর কম মান্যিগন্যি করি? সপ্তাহে একদিন রীতিমতো পাঁচালী পড়ে পুজো করি না? এখন তো আমাদের ঘরের মেয়েরা বেশ লেখাপড়া শিখেছে  গো। আসল কথা শোনো। আমাদের একটা ছোট্ট গরীব রাজ্য ত্রিপুরা আছে না? সেই রাজ্য বড় গরীব গো। কিন্তু গরীব হলে কি হবে এবার পুজোয় সারা দুনিয়াকে টেক্কা দিলো। অবশ্য টেক্কা দেয়াটা এই রাজ্যের স্বভাব। প্রায়ই পত্রিকা খুললে দেখবে নানা কাজেকর্মে সারাদেশে প্রথম হয়ে পুরস্কার ছিনিয়ে নিচ্ছে। হ্যাঁ গো, সত্যি বলছি ! এবার কি করলো জানো? বলবো? বলেই ফেলি, পেটে হজম হবে না নইলে। এই তোমার জন্য চার কোটি টাকার সোনার আর হীরের গয়না বানিয়ে ফেলেছে ! পৃথিবীর আর কেউ এতো পারেনি। তোমার দিব্যি দিয়ে বলছি ! যাও শিগগির স্নান করে নাও দিকিনি ! ইস! কথায় কথায় কত বেলা  হয়ে গেলো। আচ্ছা বলতো এই গরীব রাজ্য এতো টাকা পেলো কোথায়?

© সুনীতি দেবনাথ,

কাজরী,
৮ অক্টোবর, ২০১৬

SUNITI Debnath

আমি সুনীতি দেবনাথ, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি শিক্ষিকা। কবিতা, প্রবন্ধ ও ছোটগল্প লিখি। কবিতা আমার প্রিয়ভূমি, শৈশব থেকেই হেঁটে চলেছি...

0 comments: