এপার ওপার
© সুনীতি দেবনাথ
এই আলো ছায়ার চিত্রাবলীর সুদৃশ্য উপত্যকায় রিয়াং যুবতীর নৃত্যছন্দের মদির আন্দোলনে একদিন যে ছন্দ ছড়িয়েছিল পাহাড়ের কোলে, আজও সে তরঙ্গের রেশ অরণ্য গভীরে সবুজে সবুজে আন্দোলিত হয় -
জুমের আগুন যুবকের রক্তে জাগাত যে কামনার মশাল যুবতীকে দেখে আজও তা গেঁথে আছে পাহাড়ের শরীরের ভাঁজে।
সন্তান সন্ততি সহ টংঘরে সাজানো সংসার একদিন ছিল বাতাসে তার আভাস ইঙ্গিত ছুঁয়ে গেলেও জুমিয়ার কান্নার ঢেউয়ে তা উড়ে দূরে যায়। তিতুনের আতঙ্কিত দিন আর নেই তবু অতর্কিতে রক্তাক্ত স্মৃতি উঁকি ঝুঁকি দেয়। তাই বহু বহু দিন পেরিয়েও রিয়াং বস্তিতে যুবতীর নাচের তাল কেটে কেটে যায় আর টাক্কল হাতে যুবক অসহায় স্তব্ধ চোখে আকাশেই তাকায়।
কতদিন পার হয়ে গেছে কত রক্ত ঝরে গেছে তবু ক্ষুধার আগুন নিয়ে পেটে রিয়াং পুরুষ লুসাই বস্তির কমলা বাগানে জন খাটে । ঝকঝকে পোষাক মোড়া লুসাই যুবতী পুরন্ত শরীরে বড় তীক্ষ্ণ
ছেঁড়া কাপড়ের রিয়াং পুরুষের যৌবনকে ব্যঙ্গ করে ঢলে পড়ে,
তার চোখে চোখ মেলানো কঠিন
তবু চৌম্বকীয় টানে তার বেপথু যুবক! শিশির ধোয়া রস টসটসে কমলাটি ছুঁড়ে দেয় যুবকের চোখে-
ঝরঝর ঝর্ণার ধারা জল গাল বেয়ে উদোম বুক পেরিয়ে টুপটাপ ঝরে মাটির উপোসী বুকে -
ভাঙ্গাচোরা যুবক নতজানু হয় সে জলে আরেক ভাঙ্গাচোরা ম্লান নারীর মুখ জলভরা চোখ দেখে যে আছে প্রতীক্ষায় তার নিরবধি কাল।
কাজরী,
২০১৩
0 comments: