লেখা-লেখি

অক্ষয় অনন্ত বৃক্ষ

৫:৩০:০০ PM 0 Comments







      © সুনীতি দেবনাথ

সাজানো  হরিৎ পাতার সংসারে
সহস্রমুখ শিকড়ে শুষো মৃত্তিকা স্নেহ
শাখাবাহুর বিস্তৃতিতে প্রসারে মাপছো
আলোপ্রাণ নীলিম আকাশের পরিধি—
অনুপম অক্ষয় বৃক্ষ তুমি নও চিরহরিৎ।

শীতালি শৈত্য হাওয়া আসে শনশনিয়ে
হাওয়ার বেতালা দমকে পাতাঝরা কাল
সারাদিন হলুদ পাতা গুচ্ছে গুচ্ছে ঝরে
কঙ্কাল হাতে বৃক্ষ তুমি আকাশকে ধরো।
যায় যায় বেলা বিষণ্ণ সন্তাপ আবেগে
 চলে যায়, ঝরা পাতা মরা পাতা এক দুই করে গননার বহির্লোকে উড়ে ঝরে যায়।


খাঁ খাঁ দিগন্তরে শূন্যতার বুক ভাঙ্গে শুধু
শূন্য আঁখি বৃক্ষ তুমি এদিক ওদিক দেখে
উদাস বিরাগী বৈরাগ্য মগ্নতায় ডুব দাও
সারাটা দিন সারাটা রাত বেভুল কুয়াশা চাদরে গা ঢেকে
 কান পাতো কোনো ধ্বনির অবশেষ
কিছু আশাবরী মিশ্র খাম্বাজে মিশে
জলতরঙ্গের আলাপনে মাতাল হয় কিনা —

একটি একটি পাতা বিবশ বিষাদে ঝরে
কিছুটা মজবুত যোগ যাদের এখনো শাখার নাড়ীতে
করুণ বিবর্ণ চোখে শুধু দেখে রুদ্ধশ্বাসে
বুঝে যায় বাঁধন ছেঁড়ার দিন বেশী দূর নয়
হাহাকারে হাওয়া বয় পাতা কাঁপে অশ্রুত স্বননে
গেল যারা আর কোনোদিন
আর কোনো বাসন্তিক কালে
ফিরে তো আসে না
আন্দোলিত হতে সবুজ তরঙ্গে।
আছে যারা তারাও যাবে যে চলে
একেবারে ঠিক কোন ভুল নেই।

আবার বসন্তবাহারে সুরের আলাপনে
বিস্তারের বিলম্বিত তানে
কচি কচি কিশলয় থিরথির কম্পিত ডানা মেলে দেবে,
নরম নরম মায়াবী চোখে দেখে যাবে —
আশপাশ ক্রমে আকাশের ঘরবাড়ি দূরে
তাম্রল রঙের ঢেউ সবুজের স্বপ্নিল মঞ্জিলে।
হাসাহাসি ঢলাঢলি নেচে যাবে কথাকলি কত!
ভিতর বাড়ির ঘরে
জাগবে না বিষণ্ণ ভৈরবীর তান।

যারা চলে গেছে ঝরে গেছে
আর কোনদিন আর কোনকালে
এই শাখে দোল খেতে আসবে না ফিরে
আসবে না আর কোনদিন।
সারাটা সময় অক্ষয় অনন্ত বৃক্ষ!
একই খেলা খেলে যাবে তুমি
প্রাপ্তির পূর্ণতা হারাবার মহা সে সঙ্গীত!
অনাদি কালের সেই কথা সুর তাল লয়
একত্রিত হয়ে সারাকাল
সৃষ্ট হয়ে লীন হবে ছন্দিত আবর্তনে।
                             

কাজরী,
 ৬ মে, ২০১৫

SUNITI Debnath

আমি সুনীতি দেবনাথ, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি শিক্ষিকা। কবিতা, প্রবন্ধ ও ছোটগল্প লিখি। কবিতা আমার প্রিয়ভূমি, শৈশব থেকেই হেঁটে চলেছি...

0 comments: