জল আর মানুষের গাথা
(Photograph by the famous professional photographer Jashim Uddin of Chittagong, Bangladesh)
© সুনীতি দেবনাথ
জন্মেছিলাম ঐ বাংলার এককোণে নদী নালা খাল বিল হাওরের দেশে আজও সেসব ছবি সিন্দুকের তাকে উন্মাদনায় আতর মেখে রেখেছি সাজিয়ে।
ভিটের ঠিক দক্ষিণে খাল বর্ষার দামাল মেয়ে দুরন্ত যৌবনা চলাচলে নৌকো অনিবার্য, গ্রীষ্মে পায়ের পাতা ডুবো জল শীতে শুধু বালি
আলোথালো বেসামাল ছুট্ ওখানে যে নদী ডাকে _ চেনাশোনা মন দেয়ানেয়া হবে । হায় নদীতে মিশে সে নদী হয়ে গেছে!
ওপাশে খালের দুপাশে ছোট পরিসরে দুটি বিল আঁচল বিছিয়ে শুয়েছে শীত মরশুমে ফুটিফাঁটা বর্ষায় নেচেকুুঁদে জল থৈথৈ অথৈ ।
কালো জলে ঠেলাঠেলি জড়াজড়ি শাপলা শালুক পদ্মের ভীড়ে, নৌকো পারাপারে জলঢোঁড়া লাফ মেরে এঁকেবেঁকে চলে
জলও তো জল নয় মগ্ন অস্তিত্বের অদ্ভুত কেমন এক গন্ধ নিয়ে উঁকিঝুঁকি দেয়-
শেওলা মাটি জলজ গাছ এসবের মিশেলে আজব ভিয়েনে জাত আশ্চর্য গন্ধ মিলেমিশে একাকার অস্তিত্বের ঘরে। মেছো জালে রোদের টুকরো চাঁদা সরপুঁটি লাফঝাঁপে আলো নিয়ে খেলে, হেলেঞ্চা কলমী সোহাগে জড়াজড়ি করে। শরবনে পদ্মের বাথানে মনসার অনুচর হিলহিলে সাপ কিলবিল খেলে যেন এক সুগন্ধি বাসরে লোকায়ত খেলা!
আরেকটু পশ্চিমে সেই নদী নদী কুশিয়ারা মনে মনে পাতানো সই! এ নদী ঘুর্ণিপাকে মেতে বুকে নিয়ে জল ছুটে চলে অনন্তের ঠিকানায়
কোথায় যে যায় নদী তো জানেনা
জলও কি জানে মনে তো হয়না।
জানে শুধু যেতে হবে জানি যেতে হয় অনির্দেশ্য পথে।
মাঝে মাঝে জেলে ডিঙি গয়নার নাও পাল তুলে যায় কোন দেশ কোথায়?
সন্ধ্যে এলে জলকেলি শেষে স্নান করে নিজ জলে নদী মাতে রঙের খেলায়। আগুন ঝরিয়ে সারাদিন সোনার থালা সূর্য ডুব দেয় জলে। ফীসন পরবের কালে ধুন্ধুমার কাণ্ড নৌকো বাইচ চলে _
পেশীর তরঙ্গিত তালে জীবন মরণ পণ
সোমত্ত পুরুষ বৈঠায় খেলে।
স্তব্ধ চরাচরে জল মানুষের
চিরায়ত গাথা এ যে অনুপম।
কাজরী,
২১ফেব্রুয়ারি, ২০১৪
0 comments: