' কান্নাকে বলবো ' কবিতার আলোচনা
ক্রমিক নং ১১
কবি সুনীতি দেবনাথ এর "কান্নাকে বলবো"
রফিকুল ইসলাম রফিক
প্রতিটি মানুষের জীবনে স্বপ্ন থাকে। সে হতে চায় স্বপ্নের মতো বিশাল, স্বপ্নের মতো সুন্দর। যে স্বপ্ন তাকে দেখায় তা হলো এই বিশাল আকাশ। তাই মানুষ তার মনজগতে সৃষ্টি করে ফেলে এক বিশাল আকাশ। মনের উল্লসিত ডানায় ভর করে সে ওড়ে তার নির্মিত আকাশে, স্বপ্নের জগতে। কিন্তু সময়ের ঝড়, তার তান্ডব লীলায় লন্ডভন্ড হয়ে যায় সব। তার নির্মিত আকাশকে সে আর পায় না খুঁজে। আকাশ বুঝি হারিয়ে যায় আকাশেরই মাঝে। কাজেই তার স্বপ্নযাত্রা ভুলে যায়, ভুলতে বাধ্য হয়, নিপতিত হয় সময়ের পঙ্কিল আবর্তে, খায় হাবুডুবু। নষ্ট আর নষ্টামীতে ভরে ওঠে জীবন ও সমাজ। এমনি এক অসামান্য চেতনা সমৃদ্ধ একটি কবিতা কবি সুনীতি দেবনাথ এর "কান্নাকে বলবো"।
সময়ের তান্ডব লীলায় আকাশ হারিয়েছে তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। তার পরতে পরতে আজ বিষবাষ্প মিশ্রিত। তাই আকাশ ব্যর্থ হয় তার উদারতা প্রদর্শনে। উল্টো সে অসহনীয় তপদাহে প্রজ্জ্বলিত করে সবকিছু। যা আমাদের কবিকে কাঁদায়-
এখন আকাশ কোথায় আকাশে হারালো
এখন সেই স্বপ্নযাত্রা ভুলে গিয়ে দুরন্তযুবক
পঙ্কিল আবর্তে ডুবে হাবুডুবু খায়,
নষ্ট যুবক যেমন পথ হারায়, নষ্ট যুবতীও তেমনি চোখ ফেরায় ঐ বিষবাষ্প মিশ্রিত উদোম আকাশ পানে। সময় পৌঁছে যায় নিদারুণ সংকটে। কবির ভাষায়-
"দেখেছি আগুন খেলা পাখির মরণে।
দেখেছি বুনো ফুলের বুকে দংশন ক্ষত,
স্বপ্ন সব নষ্ট যুবকের মন থেকে ঝরে যায়
নষ্ট যুবতী আরো নষ্ট নাগরিক জীবনে
নষ্টতর উদোম আকাশের পানে চোখ।
এ কেমন সংকট স্বাধীনতা দেখছি"
এই হলো আমাদের স্বাধীনতার সংকট,সময়ের যাতনা। এমনি যাতনায় কাঁদেন কবি- কাঁদান আমাদের। কিন্তু আমাদের জীবন শিল্পী এখানেই থেমে থাকতে রাজী নন। তাইতো তিনি হয়ে ওঠেন প্রতিবাদী। কান্নাকে বলেন আগুন হয়ে যেতে, পাথর হয়ে যেতে। শেষমেষ তিনি দেখাতে চান আশার আলো। যা একজন জীবন শিল্পীর কাজ। জীবন ও জগতকে কবি আত্মস্ত করে আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে আঁধারকে আলোময় করে আবার তিনি বিলিয়ে দিয়েছেন এই জীবন ও জগতের করে। কবির ভাষায়-
হেমলক পাত্র হাতে কে তুমি রমণী
প্রাণের সুগন্ধি রস কেড়ে নিতে চাও?
জেনে রাখো যতদিন মৃত্তিকা হবে গর্ভবতী,
যতদিন মিঠেল বাতাসে শ্বাস নেয়া যাবে,
আর নদী দিয়ে যাবে জল তৃষ্ণার্ত কণ্ঠে,
ততদিন প্রতিটি জনপদে অনঙ্গ বীণা
জীবনে ছন্দিত সুরে অন্য কথামালা রচে যাবে,
আর হেমন্তের হিমেল প্রান্তরে ধানকাটা সারা হলে
মানব মানবী
অন্য এক জীবনের নৃত্যে মেতে যাবে।
আর এখানেই একজন জীবন শিল্পীর সার্থকতা। দরদী তুলির ছোঁয়ায় অংকিত এমন একটি অনবদ্য জীবনচিত্র আমাদের উপহার দেবার জন্য কবিকে জানাই অন্তরের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন। প্রিয় পাঠক নিচে কবির পুরো কবিতাটি তুলে ধরলাম।
কান্নাকে বলবো
____________________
© সুনীতি দেবনাথ
কান্নাকে বলবো আগুন হয়ে যা
কান্নাকে বলবো পাথর হয়ে যা —
জল পাথরের নষ্ট খেলা দেখেছি
জাটিঙ্গার বুকে চলন্ত ট্রেনে বসে
দেখেছি আগুন খেলা পাখির মরণে।
দেখেছি বুনো ফুলের বুকে দংশন ক্ষত,
স্বপ্ন সব নষ্ট যুবকের মন থেকে ঝরে যায়
নষ্ট যুবতী আরো নষ্ট নাগরিক জীবনে
নষ্টতর উদোম আকাশের পানে চোখ।
এ কেমন সংকট স্বাধীনতাকে দেখছি
খণ্ড খণ্ড হয়ে অরণ্যের অতলে তলাতে
নাগরিক অধিকারগুলি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর
এখন আকাশ কোথায় আকাশে হারালো
এখন সেই স্বপ্নযাত্রা ভুলে গিয়ে দুরন্তযুবক
পঙ্কিল আবর্তে ডুবে হাবুডুবু খায়,
তবে সত্যিই কি প্রলয়ের সময় আসন্ন
নেচে উঠবে নট ভৈরব উন্মত্ত ছন্দে?
বেজে উঠবে ইস্রাফিলের শিঙা?
আমি পেছনে হেঁটে কতদূর যাবো,
কতটুকু পথ পার হলে সেই বোধিবৃক্ষের
সুশীতল ছায়ায় ছায়ায় উষ্ণতার স্পর্শ পাবো?
প্রাণের মায়াবী নরম উষ্ণতা!
হঠাৎ প্রবল মাতনে শতাব্দীর
সুপ্রাচীন বৃৃক্ষ কেঁপে ওঠে, জীবনের বৃক্ষ,
হেমলক পাত্র হাতে কে তুমি রমণী
প্রাণের সুগন্ধি রস কেড়ে নিতে চাও?
জেনে রাখো যতদিন মৃত্তিকা হবে গর্ভবতী,
যতদিন মিঠেল বাতাসে শ্বাস নেয়া যাবে,
আর নদী দিয়ে যাবে জল তৃষ্ণার্ত কণ্ঠে,
ততদিন প্রতিটি জনপদে অনঙ্গ বীণা
জীবনে ছন্দিত সুরে অন্য কথামালা রচে যাবে,
আর হেমন্তের হিমেল প্রান্তরে ধানকাটা সারা হলে
মানব মানবী
অন্য এক জীবনের নৃত্যে মেতে যাবে।
কবি সুনীতি দেবনাথ এর "কান্নাকে বলবো"
রফিকুল ইসলাম রফিক
প্রতিটি মানুষের জীবনে স্বপ্ন থাকে। সে হতে চায় স্বপ্নের মতো বিশাল, স্বপ্নের মতো সুন্দর। যে স্বপ্ন তাকে দেখায় তা হলো এই বিশাল আকাশ। তাই মানুষ তার মনজগতে সৃষ্টি করে ফেলে এক বিশাল আকাশ। মনের উল্লসিত ডানায় ভর করে সে ওড়ে তার নির্মিত আকাশে, স্বপ্নের জগতে। কিন্তু সময়ের ঝড়, তার তান্ডব লীলায় লন্ডভন্ড হয়ে যায় সব। তার নির্মিত আকাশকে সে আর পায় না খুঁজে। আকাশ বুঝি হারিয়ে যায় আকাশেরই মাঝে। কাজেই তার স্বপ্নযাত্রা ভুলে যায়, ভুলতে বাধ্য হয়, নিপতিত হয় সময়ের পঙ্কিল আবর্তে, খায় হাবুডুবু। নষ্ট আর নষ্টামীতে ভরে ওঠে জীবন ও সমাজ। এমনি এক অসামান্য চেতনা সমৃদ্ধ একটি কবিতা কবি সুনীতি দেবনাথ এর "কান্নাকে বলবো"।
সময়ের তান্ডব লীলায় আকাশ হারিয়েছে তার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য। তার পরতে পরতে আজ বিষবাষ্প মিশ্রিত। তাই আকাশ ব্যর্থ হয় তার উদারতা প্রদর্শনে। উল্টো সে অসহনীয় তপদাহে প্রজ্জ্বলিত করে সবকিছু। যা আমাদের কবিকে কাঁদায়-
এখন আকাশ কোথায় আকাশে হারালো
এখন সেই স্বপ্নযাত্রা ভুলে গিয়ে দুরন্তযুবক
পঙ্কিল আবর্তে ডুবে হাবুডুবু খায়,
নষ্ট যুবক যেমন পথ হারায়, নষ্ট যুবতীও তেমনি চোখ ফেরায় ঐ বিষবাষ্প মিশ্রিত উদোম আকাশ পানে। সময় পৌঁছে যায় নিদারুণ সংকটে। কবির ভাষায়-
"দেখেছি আগুন খেলা পাখির মরণে।
দেখেছি বুনো ফুলের বুকে দংশন ক্ষত,
স্বপ্ন সব নষ্ট যুবকের মন থেকে ঝরে যায়
নষ্ট যুবতী আরো নষ্ট নাগরিক জীবনে
নষ্টতর উদোম আকাশের পানে চোখ।
এ কেমন সংকট স্বাধীনতা দেখছি"
এই হলো আমাদের স্বাধীনতার সংকট,সময়ের যাতনা। এমনি যাতনায় কাঁদেন কবি- কাঁদান আমাদের। কিন্তু আমাদের জীবন শিল্পী এখানেই থেমে থাকতে রাজী নন। তাইতো তিনি হয়ে ওঠেন প্রতিবাদী। কান্নাকে বলেন আগুন হয়ে যেতে, পাথর হয়ে যেতে। শেষমেষ তিনি দেখাতে চান আশার আলো। যা একজন জীবন শিল্পীর কাজ। জীবন ও জগতকে কবি আত্মস্ত করে আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে আঁধারকে আলোময় করে আবার তিনি বিলিয়ে দিয়েছেন এই জীবন ও জগতের করে। কবির ভাষায়-
হেমলক পাত্র হাতে কে তুমি রমণী
প্রাণের সুগন্ধি রস কেড়ে নিতে চাও?
জেনে রাখো যতদিন মৃত্তিকা হবে গর্ভবতী,
যতদিন মিঠেল বাতাসে শ্বাস নেয়া যাবে,
আর নদী দিয়ে যাবে জল তৃষ্ণার্ত কণ্ঠে,
ততদিন প্রতিটি জনপদে অনঙ্গ বীণা
জীবনে ছন্দিত সুরে অন্য কথামালা রচে যাবে,
আর হেমন্তের হিমেল প্রান্তরে ধানকাটা সারা হলে
মানব মানবী
অন্য এক জীবনের নৃত্যে মেতে যাবে।
আর এখানেই একজন জীবন শিল্পীর সার্থকতা। দরদী তুলির ছোঁয়ায় অংকিত এমন একটি অনবদ্য জীবনচিত্র আমাদের উপহার দেবার জন্য কবিকে জানাই অন্তরের অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন। প্রিয় পাঠক নিচে কবির পুরো কবিতাটি তুলে ধরলাম।
কান্নাকে বলবো
____________________
© সুনীতি দেবনাথ
কান্নাকে বলবো আগুন হয়ে যা
কান্নাকে বলবো পাথর হয়ে যা —
জল পাথরের নষ্ট খেলা দেখেছি
জাটিঙ্গার বুকে চলন্ত ট্রেনে বসে
দেখেছি আগুন খেলা পাখির মরণে।
দেখেছি বুনো ফুলের বুকে দংশন ক্ষত,
স্বপ্ন সব নষ্ট যুবকের মন থেকে ঝরে যায়
নষ্ট যুবতী আরো নষ্ট নাগরিক জীবনে
নষ্টতর উদোম আকাশের পানে চোখ।
এ কেমন সংকট স্বাধীনতাকে দেখছি
খণ্ড খণ্ড হয়ে অরণ্যের অতলে তলাতে
নাগরিক অধিকারগুলি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর
এখন আকাশ কোথায় আকাশে হারালো
এখন সেই স্বপ্নযাত্রা ভুলে গিয়ে দুরন্তযুবক
পঙ্কিল আবর্তে ডুবে হাবুডুবু খায়,
তবে সত্যিই কি প্রলয়ের সময় আসন্ন
নেচে উঠবে নট ভৈরব উন্মত্ত ছন্দে?
বেজে উঠবে ইস্রাফিলের শিঙা?
আমি পেছনে হেঁটে কতদূর যাবো,
কতটুকু পথ পার হলে সেই বোধিবৃক্ষের
সুশীতল ছায়ায় ছায়ায় উষ্ণতার স্পর্শ পাবো?
প্রাণের মায়াবী নরম উষ্ণতা!
হঠাৎ প্রবল মাতনে শতাব্দীর
সুপ্রাচীন বৃৃক্ষ কেঁপে ওঠে, জীবনের বৃক্ষ,
হেমলক পাত্র হাতে কে তুমি রমণী
প্রাণের সুগন্ধি রস কেড়ে নিতে চাও?
জেনে রাখো যতদিন মৃত্তিকা হবে গর্ভবতী,
যতদিন মিঠেল বাতাসে শ্বাস নেয়া যাবে,
আর নদী দিয়ে যাবে জল তৃষ্ণার্ত কণ্ঠে,
ততদিন প্রতিটি জনপদে অনঙ্গ বীণা
জীবনে ছন্দিত সুরে অন্য কথামালা রচে যাবে,
আর হেমন্তের হিমেল প্রান্তরে ধানকাটা সারা হলে
মানব মানবী
অন্য এক জীবনের নৃত্যে মেতে যাবে।
0 comments: