চিরসখা হে ছেড়োনা. ..
রবীন্দ্রনাথের মহাপ্রয়াণের আগেই কল্লোল যুগের কবিরা রবীন্দ্র প্রভাব মুক্ত হবার বিদ্রোহে নেমেছিলেন। আশ্চর্যের বিষয় এই কবিরা রবীন্দ্রনাথেই মুক্তি সন্ধান করেছেন। পৃথিবীর এমন কোন ভাষা নেই, এমন কোন কবি নেই যে ভাষা রবীন্দ্র সমকক্ষ কালজয়ী কবির জন্য গর্বিত হতে পারে, যে কবি মাথা উঁচু করে রবীন্দ্রনাথের উচ্চতাকে আজো স্পর্শ করতে পারেন। সত্যিই বিশ্বকবি তিনি। বাংলা সাহিত্যের এমন কোন পরিসর নেই যেখানে তাঁর ভাস্বর উপস্থিতি ছিলো না। যে গীতাঞ্জলির জন্য নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তি তাতো আদতে সঙ্গীত সমষ্টি । সঙ্গীতের জগতে তিনি নতুন প্রবাহ বইয়ে দিয়েছিলেন। আমাদের সুখ -দুঃখ, আনন্দ - বেদনা, প্রেম -পূজা, সাধনা -আরাধনা, বিদ্রোহ -বিপ্লব সব অনুভব, অনুভূতির চরম প্রকাশ ঘটেছে রবীন্দ্রসঙ্গীতে। জন্ম থেকে মৃত্যু প্রতিটি স্পন্দনে রবীন্দ্র সঙ্গীত আমাদের দিয়েছে পূর্ণতা। চিরসখা যেন তিনি। যে বাঙালী জাতি বিশ্বাঙ্গনে পিছিয়ে ছিল সেই জাতিকে হাতে ধরে জাতীয়তা বোধ থেকে বিশ্ব নাগরিকত্বে পৌঁছে দেন তিনি। তাঁর প্রাসঙ্গিকতা আমি তাই মনে করি আজকের অবক্ষয়ের উন্মাদনায় আরো বেশি দরকারী। জ্যোতির্ময় কবিগুরুর আদর্শ আমাদের আরো বহু যুগ প্রাণিত করে যাবে। ঋতু পর্যায়ের সঙ্গীত রচনায় বর্ষা প্রাধান্য পেয়েছিল রবীন্দ্রসঙ্গীতে। তাই বুঝি তাঁর মহাপ্রয়ান ঘটেছিল ঝরোঝরো বর্ষায় বাইশে শ্রাবণে। কবির শেষ কবিতা ' মধুময় পৃথিবীর ধুলি, ' পৃথিবীর প্রতি ভালোবাসার সুমিত মন্ত্রোচারণ। মৃত্যুর পর মহানগরী কলকাতার রাজপথ, গলিপথে যে জনস্রোত কবিকে শ্রদ্ধা জানাতে ঢেউয়ের মত নেমে আসে তাও ঐতিহাসিক। তাঁরই রচিত মৃত্যু সঙ্গীত কণ্ঠে কণ্ঠে উচ্চারিত হলো :
সমুখে শান্তির পারাবার
ভাসাও তরণী হে কর্ণধার!
মৃত্যু দিনে প্রিয় কবিকে জানাই প্রণাম!
0 comments: