লেখা-লেখি

"স্বগত সংলাপ "- এর কবি সুনীতি দেবনাথ

৪:১৫:০০ PM 0 Comments

















পুস্তক পর্যালোচনাঃ২০১৮

“স্বগত সংলাপ”-এর কবি সুনীতি দেবনাথ

-Tantu Ghosh Urnanava
...................................................

একজন কবি কখনই যাপনের জীর্ণ শিকলবাঁধা গন্ডিতে বেঁচে থাকতে পারেন না। কবির সতন্ত্র একটা ক্ষেত্র থাকে যেখানে তিনি বিচরণ করেন। কবি তাঁর নিজস্ব চিন্তা, সামাজিক-বাস্তবিক জ্ঞান, জীবনের খুঁটিনাটি সব অভিজ্ঞতা নিয়ে কবিতায় অবতীর্ণ হন। কবিতায় যে কল্পচিত্র ব্যবহার করা হয় তা কবির স্মৃতিসঞ্জাত বা অভিজ্ঞতাপ্রসূত বোধ থেকেই আসে, কোনো শূন্য মাধ্যম থেকে কবিতা লেখা যায় না। প্রত্যক্ষ পরোক্ষে যা উপলব্ধিতে আসে তাই ফুটে ওঠে কবিতায়। কবিরা কেউ ক্রান্তদর্শী হন, কেউ কালদর্শী( শুধু ভবিষ্য না সমকালও)। "স্বগত সংলাপে" কবি সুনীতি দেবনাথকে আমরা পাচ্ছি অন্তর্দর্শনের আত্মগত প্রীতি অপ্রীতি কোলাজের ইন্ট্রোস্পেক্টর হিসেবে।

বীরঙ্গনা সত্তার কবি, প্রাবন্ধিক, সাহিত্যিক, সুনীতি দেবনাথের জন্ম ২৮শে জানুয়ারি, ১৯৪৫ সালে অবিভক্ত ভারতে। পূর্ববঙ্গের শ্রীহট্ট জেলার বিয়ানীবাজার সুপতলা গ্রামে। বর্তমান বাসস্থান, উত্তর ত্রিপুরার ধর্মনগর। যিনি ত্রিপুরা-পশ্চিমবঙ্গে সংস্কৃতি সমন্বয় কেন্দ্রের বিভিন্ন শিল্প সাহিত্যের সাথে যুক্ত। তার প্রকাশিত গ্রন্থ – ‘প্রতিবাদী কবিদের  কবিতা সংকলন’, গবেষণাধর্মী বই – ‘ম্যাজিসিয়ান ডি মুরারী : প্রেক্ষিত পূর্বোত্তরের জাদুচর্চা’। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ – ‘ঋদ্ধ সত্য অনুভবে আসে’, ‘কাফে কবিতা সংকলন(বারোজন কবির কবিতা নিয়ে’,। ‘স্বগত সংলাপ’ এর কবিতাগুলি প্রথম ইবুক আকারে  প্রকাশিত হয় । বর্তমানে,  নীহারিকা প্রকাশনী কবিতাগুলিকে বই আকারে সদ্য প্রকাশ করেছেন। 

   কবি হিসেবে সুনীতি দেবনাথ  একজন শিল্পসচেতন কবি। যিনি মননশীল ভাবনা ও বিন্যাসে নিজস্ব কাব্যিক শৈলী এবং কাব্যসুষমার নজির রেখে কবিতার দেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। চিত্রকল্প নির্মাণেও কবির সিদ্ধহস্ত। বুদ্ধদেব বসু যদি কবিতার জন্য দাবি করে থাকেন  - "কবিতায় চাই চিত্রকল্প, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতা, সান্দ্রতা সেই আর্দ্র ও ঈষৎ-অন্ধকার বাতাস, যা প্রাণের জীবাণুর পক্ষে অনুকূল।" তবে, সুনীতি-চেতনায় সমকালীন এমন অনুষঙ্গ উঠে এসেছে - যা সমকালীন রাজনীতি এবং সমকালীন সমাজনীতি থেকে ছিন্ন না। মৌলিক অনুষঙ্গ প্রয়োগ করে এক অপূর্ব ইন্দ্রিয়ঘন অনুভূতির প্রকাশ করেছেন তাঁর কবিতাগুলিতে। "স্বগত সংলাপ"-এ যদি আত্মগত অনুসৃতি তুলে ধরতে সক্ষম হন  অন্যদিকে 'কনসেনট্রেশন ক্যাম্প', 'জীবন এক দ্বন্দ্ব', 'ক্ষুধা', 'প্রতিরোধ মিছিল চলছে', 'একশো পঁচিশের কাঠগড়া', 'আ ব্ল্যাক পোয়েট ফ্রম দ্য ক্যারিবিয়ান', 'যুদ্ধবাজ', 'চে গেভেরা' -এর মতন কালজয়ী কবিতায় বাস্তবতার এমন কিছু পটভূমিক চিত্র উপস্থাপন করেছেন যা পাঠকের আপাতমস্তক শিহরণের  দ্রুতি খেলে যাবে।

 নিজস্ব অভিজ্ঞতার অন্তর্দশন থেকেই উঠে আসে কল্পনালব্ধ বোধ, কবি তসেই বোধকেই তুলে ধরেন কবিতায়।  জীবনের নানান  দৃশ্য, অনুভব, অভিজ্ঞতা এক সুষম আকারে ধরা দেয় কবির মানসপটে যা আকৃতি পায় মনোলোকে। এবং পরিশীলিত শব্দ ও শব্দপুঞ্জের সুবিন্যাসেই হয়ে ওঠে কবিতা। অনেকক্ষেত্রে, কবি তার নিবিষ্ট সাধনায় মনের চোখ দিয়ে তুলে আনেন পঙক্তির পর পঙক্তি। এক্ষেত্রে কবিতার সর্বজনীন সংজ্ঞা নিরূপন করা দুরূহ। জীবনানন্দ-এর ভাষায়, ‘কবিতা অনেক রকম এর কোনো সংজ্ঞাই সার্বজনীন নয়।’ তার মতে, ‘কবিতা একান্ত উপলব্ধি ও উপভোগের বিষয় । অর্থাৎ ভোগ করার মতো স্পৃশ্য শরীর এর নেই। তাই ভোগের প্রশ্নে কবিতা অনঙ্গ। সে অনঙ্গ শিল্পের পথে একাকী রাতখচিত সময় কাটান কবি। কবির অনিদ্রা কবিতার সৃজন মুহূর্তের পূর্বাভাষও।’ এরপর তার মূল্যায়ণ, ‘জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে মানুষ যেমন নতুন নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে শেখে, তেমনি কবিও প্রতিটি কবিতা সৃষ্টির পূর্বমুহূর্তে এক অলৌকক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকেন। সবাই সে সৃজন যন্ত্রণা থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারে না। যিনি পারেন তিনি কবি।’ তিনি সুনীতি দেবনাথ। তাই হয়তো এই বাহাত্তুরে চোখেও এক একেকটি কবিতার জন্ম দিতে ভাবনার প্রতিবর্ত দর্পণটির সামনে দাঁড়িয়ে আজও অতন্দ্র মগ্ন এই অলৌকিক ভাবের সাধনায়, কবিতার সাধনায়।

"স্বগত সংলাপ"-এ মোট তিরিশটি কবিতা রয়েছে যা সংখ্যা ক্রমে। ২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে লেখা কবিতাগুলি কবির একাত্ম যুক্তি, বিবেচনা প্রসূত বোধের বিচিত্র ভাব ও অনুভূতির প্রতিফলন। আবার কবি সত্তার অস্মিতারূপটি সেলফ'এর বিমূর্ত প্রকাশে লৌকিক-অলৌকিক ভাব রসে সর্বজনীন হয়ে উঠেছে। কবি তাই লিখেছেন,

''স্বগত সংলাপে কবিতা উচ্চারণ করে -/ নিজের একান্তে থাকা উদাসীন কবিতা সব, / এসব কবিতা শুধু অন্ধকারে পড়া যেতে পারে।/ একা অন্ধকারে অন্তরালে কবিতার মুখোমুখি বসে / কথপোকথনে মগ্ন হয়ে --/
তোমার আমার মাঝখানে এক সেতু গড়ে তোলা।"(স্বগত সংলাপ - ৩০)
কবি একাকীত্বের বিষন্ন যন্ত্রণা বোধের শব্দগুলিকে কাব্যরূপ দিয়ে অন্তরের শূন্যতা হতে বাইরের অন্ধকা্রের নীরবতা অবধি কবিতার এক সেতু গড়ে তুলেছেন। কবির নিরন্তর ভাবনায় প্রিয়জনের মুখশ্রী উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে, বিগত স্মৃতি আন্দোলিত হয়ে ওঠে হৃদয়ের গভীর বিলাপ অনুরাগে, বিচ্ছিন্নতাবোধের কোলাহলে। বিচ্ছেদের যে saddest thought দুর্লভ  স্মৃতি এখানে ফুটে উঠছে তারই হার্দ্যিক উচ্চারণ- ' সর্বশেষ ঠিকানার খোঁজ পেতে পেতে/ অগ্রগামী তুমি আগে পৌঁছে গেলে।' জীবনের সরল প্রবাহ থামিয়ে বাঁধন ছিঁড়ে মর্মসহচরী ফিরেছেন শেষ ঠিকানায়। সে বিগত জন আর ফিরবে না জেনেও ব্যর্থ অন্বেষণে স্মৃতির বিহ্বল সংলাপে দুঃখ-বিলাপে মগ্ন হয়েছেন। চেনা অচেনা মানুষের মাঝে অন্তরের শূন্যতা থেকে কবি লিখেছেন-

"জেনে গেছি সব হারিয়ে একা আমি / চেনা মুখ চেনা মানুষ কি ভয়ানক/ চেনা জগৎ এখন বড়/ মুখোশ খোলা কঠিন কঠোর।"(স্বগত সংলাপ - ০১)

তাই সায়াহ্ন ক্ষণে এসেও জানা হলনা – কি সত্য! কি মিথ্যা! কবির অনুযোগ এখানে সুস্পষ্ট। গোলকধাঁধাময় জীবন যার চক্রবুহ্যে আমাদের সকলকেই কোনো না কোনো সময় পিষ্ট হতেই হয়। আর অন্তরের চিন্তাভাবনা থেকে ব্যক্ত করছেন innermost contemplation, ‘interior monologue’। কবির অন্তরের চেতনাস্রোত, স্বগতোক্তি এক অভিনব দৃষ্টিকোণ থেকে বাগ্ময় হয়ে উঠেছে কবিতায়। তিনি যুক্তিবাদ এবং যুক্তি-অন্বেষণের পথ খুঁজে নিয়েছেন সংবেদন ও আত্মদর্শনের মধ্য দিয়ে। নানান প্রশ্ন নানান জিজ্ঞাসার জর্জরিত অন্তর্কলহে ধ্যানাভিমুখী হয়ে এই কবিতাগুলির প্রকাশ। 
“কোনটা সত্য জানা হলো না/ কোনটা মিথ্যা তাও জানি না, / সত্য -মিথ্যার গোলকধাঁধায় ঘুরছি কেবল।'(স্বগত সংলাপ” (স্বগত সংলাপ-০৬) 

কবিতায় মৌলিক অনুষঙ্গ, ছন্দ-ভাষা যথোপযুক্ত অলঙ্কার অনিবার্য যা বিশেষভাবে লক্ষণীয়। মানবমনের বিচিত্র সব অস্ফূট প্রশ্ন-উত্তরের অবিরাম কোলাহল চলতে থাকে তার সংবেদনশীল মননে। এই প্রশ্নশীল চরিত্রই মানুষকে শিল্পী করে তোলে। যে বেদনাবোধ থেকে মর্মবোধ থেকে কবি লিখছেন-

‘শূন্যতা কি শূন্য শুধু, থাকেনা কি স্মৃতির আঁচল বিছানো/ হয়তো থাকে স্মৃতি কি সতত স্বচ্ছ?’

জীবনকে ভালোবাসতে চাই, ভালোবাসা ঝড়ে উড়ে যায়,/ মৃত্যুকে আত্মীয় ভাবি দূরে সরে সরে সে শুধু যায়/…… মনে শুধু হয়-/ মৃত্যু সহ এ জগৎ সত্য, এই জীবন সত্য/ সত্য এই বেঁচে থাকা নানা অনুভবে অনুষঙ্গে/ তারপর অন্য কিছু নেই।(স্বগত সংলাপ-১৯)

এই মর্মযাতনার ও উপলব্ধির মূলেও মানবাত্মার অনন্তজিজ্ঞাসা উপস্থিত। শব্দ দিয়ে কবি শব্দকেও অতিক্রম করে গেছেন, এখানেই তিনি সার্থক। টি.এস এলিয়ট-এর কথায়, ‘শিল্পের আবেগকে নৈর্ব্যিক্তিক হয়ে উঠতে হবে।’  নৈর্ব্যক্তিকতার কথায় আবেগের সংহতি, যুক্তিবোধ ও যুক্তিহীনতার শৃঙ্খলা প্রজ্ঞাশাসিত পথে অনুগমন করে, সুনীতি দেবনাথের কবিতাগুলো শুদ্ধতম কবিতায় উত্তোরিত হয়েছে।
কেবল দিনগত পাপক্ষয় আর অভিনয়ের রঙ্গমঞ্চে রঙতামাশার এই গিরগিটিবৃত্তি জীবন; জীবনের এই জটিল প্রক্রিয়া কবির কাম্য না। প্রাত্যহিক জীবনের প্রতি মুহূর্তে আমরা শোক দুঃখ হতাশা ইত্যাদির ভাবপ্রকাশ কবিতায় এক আশ্চর্য রূপান্তর ঘটে। কবির সেই লৌকিক ভাবই হয়ে ওঠে অলৌকিক অর্থাৎ সার্বভৌম। যা পাঠকের কাছে গভীর আনন্দের রস পরিবেশন করে। ওয়ার্ডস্ওয়ার্থের ভাষায় ‘emotion recollected in tranquillity’ – ‘নিস্তাপ স্মৃতির অত্বর রোমন্থন’। আত্মগত প্রলাপে চিন্তাভঙ্গি, ব্যক্তিগত উপোলব্ধি ব্যতীত কবিতার প্রকাশ অসম্ভব । কিন্তু ব্যক্তিত্বই কবিতার সর্বজনীনতায় বাধা হয়ে দাঁডায়। অর্থাৎ এই পার্সোন্যালিটি থেকে সরে এসেই তা সার্বজনীন হতে পারে। এখানে সুনীতি দেবনাথ ক্যারেকটার থেকে সরে এসে নিজস্ব কথোপকথন, অনুভূতি প্রকাশের এক অদৃষ্টপূর্ব মাধ্যম বেছে নিয়েছেন এবং কেন্দ্রগত ভাবটির প্রকাশে সক্ষম হয়েছেন। কবিতা কোথাও ব্যক্তিসর্বস্ব হয়ে ওঠে নি। কবি তাঁর আত্মিক সত্তাকে সংযমে রেখে নৈর্ব্যক্তিক আত্মোপলব্ধি তুলে ধরেছেন কবিতায়। কবি হতাশা, বেদনা এবং ভালবাসা এই তিন শব্দকে বহুমাত্রিক দক্ষতায় অন্তরঙ্গ প্রতিবেশী করে তুলেছেন। ব্যবহৃত শব্দ চয়ন এবং অন্যান্য উপাদানের প্রয়োগ কৌশল তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করে। 

জীবন মানে যদি দিনযাপনের গ্লানি/ চাওয়া পাওয়ার যোগবিয়োগের গোলকধাঁধা
জীবন মানে যদি দিনগত পাপক্ষয়/ জীবন মানে যদি প্রথম মিস্টি হাসির মধুর চাহনি/ জীবন মানে যদি চোরাগুপ্তা লড়াই দু 'জনের / জীবন মানে যদি গোপন সন্ধি মুখোশ পরা/ ক্ষণে ক্ষণে রঙ বদলানো গিরগিটি বৃত্তি - / এমন জীবন আমার কাঙ্ক্ষিত স্বর্গ নয়।(স্বগত সংলাপ - ০৯)

উপমার শীতলতা, শব্দ প্রয়োগের কৌশল সুনীতি দেবনাথের কবিতায় দীপ্তিময়। উপমার বর্ণিল ভুবন থেকে তিনি নানা রঙের নানা অর্থের উপমা তুলে এনেছেন কবিতায়। কবিতায় উপমার পাশাপাশি নিজস্ব প্রকাশভঙ্গি, শব্দ নির্বাচন ও যোজন চমৎকার নিপুণতার সাক্ষর। কবিতায় দৃশ্যপট তৈরি করে কবিতাকে প্রাণবন্ত করে তুলেছেন । যা ‘স্বগত সংলাপ-২৫’ এবং ‘স্বগত সংলাপ-২৬’ কবিতা দুটিতে বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়।

এক একটি দিন হলুদ পাতার মত / ঝরে আর জমা হয় বছরের ঘরে। (স্বগত সংলাপ-১১)
রাত্রি যেন সন্তানসম্ভবা নারী,/ জন্ম দেয় শোণিতের ধারাস্রোতে/ প্রতিদিন নতুন সকালের।/ কোন কোন রাত্রি যেন বন্ধ্যা নারীর মত/ অন্ধকারে চুপিসাড়ে পড়ে থাকে সারাকাল/ আলোর আভাস মাত্র তার গর্ভ নেই,/ আঁধার থেকে আঁধারে যাত্রা তার/ অবিরাম স্রোতে সুগভীর নদীর মতন। (স্বগত সংলাপ-১৩)

জীবনের সত্যকে উপলব্ধি ও দর্শনের পর একজন কবি অন্তরালের অসহ্য বেদনা ছিন্ন করে আত্মপ্রকাশ ঘটান নিজের উপলব্ধিগত ভাবনা। কবিতায় আঙ্গিক ও বিষয় একে অপরের পরিপূরক। পৃথিবীতে প্রেম, ভালোবাসা, জন্ম, মৃত্যু, দুঃখ ও বেদনা এসব কোনো কিছুই নতুন নয়। কিন্তু বিষয় হিসেবে এসব ফুটিয়ে তুলতে তিনি স্বতন্ত্র কল্পচিত্র ব্যবহার করেছেন।

মৃত্যু মানে কি অনুভূতির তন্ত্রীতে/ বিষাদ কোমল ভৈরবীতে তান তোলা/ সেই কথা বলে যাওয়া -/ মিথ্যা এ জগৎ, মিথ্যা জীবন / মিথ্যা সবকিছু ভালোবাসা, প্রেম / সত্য শুধু চিরায়ত মৃত্যু! / আগে পিছে কিছু নাই! (স্বগত সংলাপ - ১৮)

কবি এখানে মৃত্যুর ও জীবনের সত্য মিথ্যার মূল্যবোধকে তুলে ধরছেন। শেলী যেমন তাঁর "ডেথ" কবিতাটিতে মৃত্যুর এক বিষাদময় চিত্র তুলে ধরেছেন। অর্থাৎ প্রথম আমাদের আনন্দগুলো মরে- এবং পরে আমাদের আশা, অতঃপরে জীবন তাগিদের ভয়গুলো মরে। আর বাঁচার সমস্ত জৈবিক চাহিদা শেষ হয়ে গেলে - বাকি থাকে ঋণ, জীর্নতার দিন। তখন অশান্ত হৃদয়ে জীবন সায়াহ্নে মেলে নির্জনতা। প্রশ্ন আসে, মিথ্যা জীবন, মিথ্যা জগৎ - নশ্বরতা ঢের বেশি সত্য। কবি  তাই লিখছেন 'ঋদ্ধ সত্য অনুভবে আসে'। 

কবিতাগুলির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো বক্তব্যের গভীরতা। বাংলা ভাষা সাহিত্যে যদি অকস্মাৎ আমূল পরিবর্তন না দেখা দেয়, তবে আগামী দুশো বছরেও সুনীতি দেবনাথ আধুনিকতার জায়গা থেকে অপসারিত হবেন না এ কথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। এর অন্যতম প্রধান কারণই হলো তার কবিতার হাইসিরিয়াসনেস। অর্থাৎ ততোদিন তাঁর কবিতা অন্ধকারের চাদর চিরে চিকন আলোকরেখা পাঠকের আত্মাকে নাড়িয়ে দিয়ে যাবে যতোদিন ‘স্বগত সংলাপ’-এর আত্মগত কবিতায় পাঠক নিজেকে খুঁজে পাবেন।

SUNITI Debnath

আমি সুনীতি দেবনাথ, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি শিক্ষিকা। কবিতা, প্রবন্ধ ও ছোটগল্প লিখি। কবিতা আমার প্রিয়ভূমি, শৈশব থেকেই হেঁটে চলেছি...

0 comments: