মুক্ত গদ্য — জীবন বহিয়া যায়
মুক্ত গদ্য
© সুনীতি দেবনাথ
একটা অন্য ধাঁচের কিছু লেখা যেতে পারে।
সময় পাল্টে বলি ' জীবন ', জীবন বহিয়া যায়, নদীর স্রোতের প্রায় ...ওখানে ঘরের অঙ্গনে আজো সোনাবউ আলপনা আঁকে শিল্পীর আঙুলে পুজো পার্বণে রেওয়াজ মেনে রীতিনীতি মানে, সন্ধ্যায় আঁচল জড়িয়ে গলে
তুলসীতলায় পিদিম জ্বালে শাঁখে ফু্ঁ দেয়।পরবে মোয়া নাড়ু সন্দেশ বাঁধে আজো নিপুণ হাতের খেলে ... জীবন বয়ে চলে নদীও বয়ে যায় সময় নদীর মতন। নদী চলে যায় সমুদ্রে, জীবন বয়ে চলে পুরুষানুক্রমে ...বদলে যায় কুশীলবেরা...বদলায় না পরম্পরা, রীতিনীতি রেওয়াজ। ওখানে পুরুষেরা মুখর দিবালোকে বাবা পুত্র নাতি পুজো দিতে চলে যায় দূর - দূরান্তে মন্দিরে মন্দিরে কোথাও প্যাণ্ডেলে। মেয়েরা থেকে যায় ঘরের অন্দরে, সংসার সামলানোর ফাঁকে উন্মনা ঐ বুঝি শোনা যাবে ঘন্টাধ্বনি ঢং ঢং ঢং, ইথারে ইথারে আসবে ভেসে তারই অনুরণন ঢং ঢং ঢং! পিদিমের সলতে পাকাতে পাকাতে আকাশে চোখ যায় ... চৌদ্দ পুরুষেরা কোথায় আছেন জানি নাতো, স্বর্গে? আনমনে ভেবে ফেলে স্বর্গ কোথায়? ঐ তারাদের ঘরদোরে? হবে হয়তো। উফ্ দেরি হয়ে যাচ্ছে ! ওঁনারা এসে গেলেন বলে ...আপাতত মর্ত্য নিয়েই ...মাগো কালী দোষ নিয়ো না। সন্ধ্যের ঝামেলা চুকেবুকে যাক, রাতে তোমায় প্রণাম করতে যাবো। শাশুড়ি মা ছেলের বৌদের ছোট নাতি - নাতনীদের নিয়ে রাতের বেলা দেবী দর্শনে যাবেন। চৌদ্দ পুরুষের বাতি দিতে হবে, সারা বাড়ি আলোময় হবে, ঘাসফড়িঙ পোকামাকড়ের গঙ্গাপ্রাপ্তি হবে ! সোনাবউ ভাবে গঙ্গা মা এতো সামলাবেন কি করে? উরি ব্বাস্ ! ঠাকুর দেবতা নিয়ে এমনি ভাবে? গড় হই মা, পাপ নিয়ো না ! শরীর ভেঙ্গে আসে, আহারে ! কিন্তু ...ধর্ম বলে কথা ! রক্ষা করো মা রক্ষা কালী।
এখানে একাবউ বেশি বেশি পড়াশোনা জানা ওতো সব ভাবে না। ... গ্রিটিংস্ পাঠানো, বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিকে ফোনে উইস করা, পার্লার হেনতেন গভীর রাত প্রচণ্ড সাজগোজ ...দু 'একটা ঠাকুর দেখা, দামি হোটেলে খানা -পিনা, রাত করে ঘরে ফেরা ...আধুনিক জীবন.!পুজো উদযাপনের নয়া তর তরিকা !
জীবন বহিয়া যায়, আহা ! নদীর স্রোতের প্রায় !
কাজরী,
২৯ অক্টোবর, ২০১৬
0 comments: