আমার মৃত্যুর পরে
© সুনীতি দেবনাথ
আমার মৃত্যুর পরে এই নশ্বর দেহ গঙ্গার কোন ঘাটে পুড়িয়ে দিয়ো —
মণিকর্ণিকা নয় বরং দেহাতি দলিত কোন জনপদের পাশে,
অস্পৃশ্য মানুষের অস্পৃশ্য ঘাটের পাশে অখ্যাত চিতায়।
আমি পুড়ে পুড়ে ছাই হবো, চাই না চন্দন কাঠ
দেহাতি জনের আনা কাঠকুটো দিয়ে সাজানো চিতায়,
পুড়ে পুড়ে ছাই হতে চাই, হয়তো বাতাসে ভেসে কিছু কিছু তার উড়ে উড়ে দূরে চলে যাবে মিশে যাবে
দুরন্ত ঘূর্ণিতে উড়ে আসা দক্ষিণ -পশ্চিমা বায়ুর সাথে,
বাষ্পকণায় মিশে চলে যাবে তুষারাবৃত হিমালয়ের উত্তুঙ্গ শিখরে,
তারপর জলকণা হয়ে ঝরবে, শীতল প্রগাঢ় বৃষ্টিকণা ঝরবে,
সারাটা দেশের মাটিতে ঝরবে, বৃষ্টি আমি মিশে যাবো,
কণা কণা আমি মিশে যাবো, ধূলিতে ধূসর হয়ে যাবো।
অনুভবে শেষবারের মত জেনে যাবো ভারতীয় আমি,
আমি এক নগন্যা ভারত - কন্যা এ দেশের মাটিকে ভালোবাসি,
এ দেশের মাটিকে ভালোবেসে মৃত্যু শেষে হয়ে গেছি মাটি।
আরো কিছু ছাইভস্ম গঙ্গার স্রোতে ভেসে দূর দূরান্তরে —
তীর ছুঁয়ে কত কত ঘাট ছুৃৃঁয়ে, জনপদ ছুঁয়ে ছুঁয়ে ভাটি পথে যাবে,
পদ্মার স্রোতে মিশে বাংলার উদাসী জনপদে
ভাটিয়ালী আজানের সুর শুনে ভেসে যাবে দূরে,
সাগরে মিশে যাবে একদিন বিশাল সে স্রোতের সাগরে!
সাগরে সাগর হয়ে জানা হবে বিরাট এ পৃথিবীর আমি একজন,
খণ্ডে খণ্ডে নয় বিশালত্বে আমার ছিলো শেষ পরিচয়,
পৃথিবীর কন্যা আমি পৃথিবীতেই হয়েছি বিলীন।
কাজরী,
১৫ জুলাই, ২০১৬
0 comments: