বিদেশী ভাইয়া
© সুনীতি দেবনাথ
শৈশব বড় জাদুকর হে !
আগাপাশতলা জীবনটার
আনাচেকানাচে আঁতিপাঁতি সার্চলাইট
ফেলে দেখোনা এরচেয়ে চমৎকার
অন্য কোন চুম্বকীয় ক্ষেত্র পাবেই না।
তাকে সবাই বলতো বিদেশী ভাইয়া।
দুপুর যখন ঝিমঝিম বনকপোতী
ঝিমধরা ঝলসানো রোদ ক্ষ্যাপা বাউল,
বাতাসও তো রুদ্ধশ্বাস ঠিক তখনই
ঝুমুর ঝুমুর নুপূর পায় ঘেমে নেয়ে সে
ডুগ ডুগ ডুগ ডুগডুগি বাজিয়ে
মাতাল দুলুনি তোলে হঠাৎ এসে
পাঁচ চক্কর ঘূর্ণির তুফান তুলে
গেয়ে উঠতো কে বিদেশী মন উদাসী
বাঁশের বাঁশী বাজাও বনে,
হুটহাট ভেজানো দরজা খুলে
এঘর ওঘর সব ঘরের বৌ ঝিরা
বেপথু আঁচল সামলে ঝলমলিয়ে
খিলখিলিয়ে গানের তালে হেলতো
দোলে দোলে যেন মনে ময়ূর পেখমে!
একটাই গান সে গাইতো
একটা গানের সুরে ডুব দিয়ে
সাঁতারের কলাকৌশলে কারিকুরি
নাচের হিল্লোলে প্রাণের আকুতি
ঢেলে দেহ মন একাকার করে দিয়ে
কোন সুদূরের মিঠেল বাঁশীর সুরে
নিজে মন উদাসী হয়ে ঔদাসীন্যের
আবছা নরম সুগন্ধি ওড়না উড়িয়ে
আবার কোথায় হারিয়ে যেতো যে
সে কথা অজানা ছিল আজও নয় জানা।
আমার শৈশবের সেই দিনগুলো
আজো শুনে ঘুরেফিরে ঘুঙুরের
ঝুমঝুম, নাচের প্রমত্ত হিন্দোল
আর ক্লান্ত দুপুরের ঝিমঝিম প্রহর–
বিদেশী ভাইয়া কোথায় হারালো
জানা হলো না তাই কেবলই উদাস।
তবু শৈশবের সেই বহু দূরের অলৌকিক
তপ্ত ঝিমুনির দিন ডুগডুগ ধ্বনি বাঁশী
আর ঘুঙুরের ঝুমঝুম নিয়ে আনমনে
বিদেশী ভাইয়ার নাচেগানে মগ্নতায় ভেসে আসে।
কাজরী,
১৫ এপ্রিল, ২০১৫
0 comments: