সমুন্নত আগামীর কথাকার ইতিহাস
© সুনীতি দেবনাথ
এখন আর উচ্চকিত সুতীক্ষ্ণ কণ্ঠস্বর নয়
এখন শুধু বিনম্র নমিত কণ্ঠে মৃদু উচ্চারণ_
ঘাতকের হাতে নিহত হয়েছিল যারা
তাদের স্মরণে শুধু শোকে ভাসা
চোখের জল মনের আর্তির মিশেলে স্মরণ।
তাদের দেহে খুব বেশী রক্ত ছিলনা
অপুষ্টির শিকার ছিল তারা
তবু যতটুকু ছিল
সবটুকু ঝরেছিল মাটির আদুল গায়ে,
অশ্রু দিয়ে তা ধুয়ে দিতে হবে।
ওরা সব প্রান্তিক মানুষ পৃথিবীর
খেতে খামারে ঝরিয়েছে ঘাম অনেক
পেটভরা খাবার একটাদিনও প্রসন্ন করেনি ওদের
তবু জ্বলন্ত সূর্যের নীচে চামড়া পুড়িয়ে
বোধ-চেতনাহীন হয়ে কাজ করে যেতে হবে_
এটাই ভবিতব্য মেনে নিয়েছিল।
কলেকারখানায় খনিতে যারা সারাদিন
সারারাত ধোঁয়ায় আঁধারে কাজ করে যেত
তারাও দোসর ছিল এদের
সমুন্নত সভ্যতার রূপকার।
এসব পশুর মত খেটে যাওয়াদের বুদ্ধিশুদ্ধি
শতকরা হারে বড়জোর পঁচিশের কোঠায়_
উচ্চাসনে আসীন ক্ষমতার ঠিকা নেয়া প্রভুদের চেয়ে
নগন্য মাত্র।
এরা হাবাগোবা হয়ে জন্মে এভাবেই থেকে
একদিন চোখ বুজে হাঁ করে মরে পড়ে থাকে।
এরা কোনদিন কারো তহবিল তছরুপ করেনি,
অন্যের গোয়ালে দেয়নি হানা
আগুনও দেয়নি কারো ফলন্ত খামারে
কিংবা উপচানো গোলায়,
ফসল প্রচুর হাতের মায়ায় ওদের ভারে ভারে
স্তরে স্তরে সেজে স্তুপাকারে জমেছে,
শেষ শ্রমটুকু দিয়ে কণামাত্র তলানি না রেখে
অন্যায্য সুদের ঋণ কাঁধে নিয়ে
অনুর্বরকে সরস করে ফসল কুড়ালো
যোগবিয়োগের জটিল ধারাপাতে
শূন্য গোলা ওদের কোনদিন পূর্ণ তো হলোনা-
অবশেষে এক ঘাতক দিন এলো উন্মত্ত ঝড় নিয়ে-
অজানা এক সংক্রামক রোগে ওরা আক্রান্ত হল
স্বহস্তে নিজেকে করল হ্ত্যা-
ফাঁসুড়ে হয়ে নিজেকেই ফাঁসিতে ঝুলালো।
তখন ভয়ানক আগ্নেয়াস্ত্র হাতে কোন ঘাতক
সেই বধ্যভূমিতে দণ্ডায়মান ছিলনা,
গোপন পাশবিক কৌশলী নৃশংস এক অস্ত্র
গোপনে থেকেই ওদের হত্যা করেছিল,
ভয়ানক সে হত্যালীলা আজও আবর্তিত হয়,
এখনো বিস্তৃত সেই কূটচাল।
এভাবে ঠিক এভাবেই কাতারে কাতারে বধ করা হল।
আজও চলেছে তা উন্নয়ন প্রত্যাশী সব দেশে
লাতিন আমেরিকায়,আফ্রিকায় -
আমাদের স্বপ্নের স্বদেশেও।
বহু বহু মানুষের অনুন্নয়ন কৌশলী হাতে
ইউরোপ আমেরিকার উন্নয়ন গড়ে তোলে।
সভ্যতার একান্ত অসভ্য রীতি।
ইতিহাস ভরে গেছে বিমর্ষ মৃত্যুর কাহিনীতে,
ইতিহাস জর্জরিত অন্যায্য যুদ্ধ লুণ্ঠন আর
বিদ্রোহ বিপ্লব আন্দোলন পতনের ঘুর্ণিতে।
তাই ইতিহাস জানান দেয় _
দারিদ্র্য আকাশ নিঃসৃত কোন দৈববাণী নয়,
মৃত্তিকার স্তরে লেখা অনিবার্য লিপিমালাও নয়
নিচে পড়ে থাকা
ঈশ্বরের মানসাঙ্কে সিদ্ধ জটিল-কুটিল নক্সাচিত্রও নয়।
ইতিহাস বলে আমাকে দেখ আমার পাতায় পাতায় পাবে
ক্ষয়ে যাওয়া মাটিতে লুটিয়ে পড়া মানুষের কথা-
নানাকালে নানাস্থলে সংগঠিত ব্যর্থ বিদ্রোহ
বিপ্লব আর আন্দোলনের বার্তা।
ক্ষণকালীন যে সাফল্য চক্রান্তের কূটকৌশলে
ধ্বস্ত হয়েছে ছটফট করে শেষে নিঃশেষ হয়েছে_
চক্রান্তকারী সেসব ঘাতক-চক্রব্যুহের ঠিকানাও পাবে।
ইতিহাসের অভ্রান্ত ঘোষণা _
অতীতের ভ্রান্তিহীন বিশ্লেষণে
অনিবার্য ফলরূপে বর্তমান প্রতীত হয়,
অতীতের ভুলভ্রান্তি বর্তমানের নিয়ন্ত্রকও বটে।
সব মিলে যতসব ব্যর্থ উত্থান বিদ্রোহ আন্দোলন বিপ্লব
ভবিষ্যৎ কোন পথে যাবে তা নির্ধারণ করে।
কথাটা হচ্ছে এখানেই,ঠিক এখান থেকেই
সঠিক দিক নির্দেশে আবার শুরুর প্রয়োজন_
ইতিহাসের ভবিষ্যদ্বাণী শুনে একবার শুরু করা হলে
সঠিক প্রক্রিয়ায়,জয় নিশ্চয়।
আজ তাই নম্র কোমল স্বরলিপি
আহত নিহত অনবরত অপমানিত_
ক্ষমতার আস্ফালনে নিষ্পেষিত যারা,
তাদের স্মরণ করে যুগ যুগ সঞ্চিত ঋণ স্বীকার_
আর বিষাদিত প্রান্তরে ঋণশোধের প্রতিজ্ঞা গ্রহণ।
সবকিছু সমন্বিত হয়ে কালের গতিতে অবশ্য
ব্যর্থতা অতিক্রম করে একদিন নিচে থাকাদের মাথা
সমুন্নত হবেই হবে,বিদ্রোহ বিপ্লব সব সত্য মূর্তি পাবে।
কাজরী,
১৬ মার্চ, ২০১৪
0 comments: