লেখা-লেখি

যা পাখি উড়ে যা

১২:১৫:০০ AM 0 Comments








[Photograph by my favourite photographer Samiran Majumder Kolkata India]








  ©সুনীতি দেবনাথ


একটাও পাহাড় লুঙ্গা পেরোতে হবেনা
সোজাসুজি তুই উড়ে যা পাখি চিঠিটা নিয়ে।
রাঘনা সীমান্ত এখন কাঁটাতারে ঘেরা
আকাশ তো ঘেরাবন্দি নয়
সীমান্তরক্ষীও তোকে তাক্ করে
বন্দুক উঁচিয়ে ধরবেনা।
আকাশে আকাশে উড়ে যা পাখি
সেই ভিনদেশে যা –
সেদেশ এদেশ মিলে যা একদেশ ছিল একদিন।

উড়ে উড়ে পাখি কুশিয়ারা পেরিয়ে
ঐ গাঁয়ে চলে যা-
টিলা সমতল হাওর বিল নিয়ে
শ্যামলশোভন বৃক্ষ বনানীর নরম ছায়ার সে গাঁ।
ওখানে জলাশয় সব শাপলা পদ্ম নিয়ে খেলে,
ওপাশে দেখ কত বড় কদমের গাছ
বকুলের সাথে মিতালি পেতেছে শাখায় শাখায়
সারাক্ষণ ঝুরঝুর সুগন্ধে ঝরছে বকুল।
ঐদেখ ঝিরিঝিরি নরম মেয়েটি ছড়া
ওকে নিশানা করে উড়ে যা
পুবে তার টলটল জল জলচোখে আকাশ দেখে
ঐযে পুকুর সেই বাড়ি দেখ
পুকূর পাড়ে দক্ষিণে- পশ্চিমে দু’টি মন্দির-
আজ আর নেই মনে হয়।
কমলা গাছের আহ্লাদী ছায়ায়
আম কাঁঠালের কোলে ঘরগুলি শীত রোদ পোহায়,
পশ্চিমে বাঁশবন শীতালি বাতাসে আশনাই
আর শিসের পাল্লায় মাতে।

ঘরের দুয়ারে মা
আমার সেই দেখনহাসি গর্ভধারিণী মা-
তাকে তো পাবিনা কখনো পাবিনা।
চিঠিখানা সেই মাকে দিবি যে এখন
ও বাড়ির মা, ভাবিসনে তুই আমার স্বপ্নের ভাষা
সব কিছু এই মাও পলকে নেবে বুঝে।
মা যে জানে সব।ও বাড়ির ধুলোয় এখনো স্পষ্ট
পাঁচ বছরের দামাল মেয়ের সেই পায়ের ছাপ
মুছে যায়নি মুছে তো যায়না।
সব মায়ের জানা আছে তা, তাই পেয়ে যায় টের।
ঠিক জানে মা ভোরের আজান যখন আকুল আর্তিতে
আকাশ কাঁপিয়ে স্পন্দন তুলে বাতাসের মনে
ভেঙ্গে ভেঙ্গে ছড়িয়ে যেতো আকাশে আকাশে-
সেই মেয়ে চুপিসাড়ে উঠে উঠি উঠি সূর্যের আলোয়
লাল সে আলোয় স্নান করে ঝরা বকুল শিউলি কুড়োতো।
ওবাড়ির মা এও বুঝে যাবে একদিন শীতে র সেই
কুশিয়ারার নিস্তেজ প্রবাহে সন্ধ্যর সোনার থালা
ডুব দেয়া সূর্যকে দু’হাতে জাপ্টে ধরে নিতে
কেমন নাকানি চুবানি খেয়েছিল মেয়ে।

ঠিকঠাক দেখে নিস্ পাখি
ওগারে বর্ষার বিলে ঝাঁকে ঝাঁকে
শাপলারা  আকাশের নীল দেখে কিনা
আরপাশে পদ্মের ফুলেরা ঢলে পড়ে
বিলের বুকে আশনাই করে কিনা,
আর পানকৌড়ি পাখি ঘুরে ঘুরে ডাকাডাকি করে
মজলিশে মেতে উঠে কিনা।
ভাল করে দেখে নিস্ পাখি বাঁশবাগানের ঝাড়
বিলের স্ফটিক জল আয়নায় মুখ দেখে নাকি!
ঝাঁকঝাঁক মাছরাঙা তপস্বী বকেরা
ঠায় বসে ঝিমুতে ঝিমুতে টুপটাপ
মাছ ধরে কিনা আজো-
মাকেও জিজ্ঞেস করে নিবি
সবকিছু আগের মত আছে কিনা।

ভিনদেশের মাকে দেখে উতলা হোসনে পাখি,
শুধু বলে দিস্ সেই সে ছোট মেয়ে
আজ নিজেই এক মা যদিও অন্তরে আজো
সেই ছোট থেকে কান্নায় ডুবে ভাসে।
উদাস দুপুরে পাখি তোরই মত
হাওয়ায় দু’টি ডানা মেলে উড়ে উড়ে যায়
বাঁশঝাড় তলে পুতুল খেলার সেই ঘরে
যেখানে অরুণ বরুণ কিরণমালা ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমী
বুদ্ধু ভুতুম গাঙফড়িং প্রজাপতি ঝিঁঝিঁর ঝঙ্কার
সাতরজার ধন হীরেমাণিকের ভাণ্ডার
আরো কত শব্দ গন্ধ মায়ের টলটলে দু’টি চোখ
ভাঁটফুল গন্ধমাখা মিঠেল হাসি অদ্ভুত এক ঝাঁপি।
আজ সবকিছু তুলসীতলার পিদিমের শেষ শিখায়
শাঁখের মহিমান্বিত সেই শেষ আওয়াজে
হারিয়ে কোথায় গেছে নাকি
নাকি শাশ্বতের ঘরে জমে আছে
জানতে ব্যাকুল বড় মন।

পাখি জানিস্ তো তুই
এই পরবাসে অভিমানে
মা আমার কবে মরে গেছে।
বড় সাধ হয় ওদেশের ওবাড়ির মাটি
গায়ে মেখে ও মাটিতে লুটোপুটি খাই-
আরেকবার শেষবার ওই মাটির ছোঁয়া,
বুক ভরে মাটির সুঘ্রাণ টেনে নিতে চাই।

কাজরী,
২১ফেব্রুয়ারি, ২০১৪


SUNITI Debnath

আমি সুনীতি দেবনাথ, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি শিক্ষিকা। কবিতা, প্রবন্ধ ও ছোটগল্প লিখি। কবিতা আমার প্রিয়ভূমি, শৈশব থেকেই হেঁটে চলেছি...

0 comments: