চলো যাই
© সুনীতি দেবনাথ
[ এমন কিছু সম্পর্ক থেকে যায় যা ভালোবাসার জরিন ফিতেয় জড়ানো আর সমুদ্র পারের ঝাউয়ের মাতাল হাওয়ায় বড়ই স্নিগ্ধ, সমুদ্রের গভীর গর্জনেও আত্ম সমাহিত — তোমার সঙ্গে আমার সম্পর্কটাও অনেকটা তেমনি। তুমি আমার প্রিয় ভগ্নী, প্রিয়তমা বান্ধবী। তোমাকেই আমার এ কবিতা উৎসর্গ করছি। ]
আমরা এখন অন্য দিগন্তে দাঁড়িয়ে—
অমল এ লিপিকা এসেছে কোথা থেকে
কোন সুদূর নক্ষত্রের আলোকোজ্জ্বল
মহিমার বাণীবহ রয়েছে অজানা।
এই তনু পুরোনো জীর্ণতায় জর্জর
ছাড়তে হবে যেতে হবে কোন সে গ্রহে,
তুমিও জানো না আমিও জানিনা মোটে।
তবু খোলা দরজা পেরিয়ে যেতে হবে
ঘরের চৌহদ্দি পেরিয়ে উঠোনে নেমে
পায়ে পায়ে চলতে হবে নামতে হবে
খোলা পথে বেদিশা ঠিকানা অজানায়।
চলো না সেদিনের মতোই চলো যাই
একটিবার, হোক না শেষবার হোক,
নদীর কাছে যাই স্রোতের কাছে যাই,
শিখে নিই গতির চরম কথাখানি —
এগিয়ে চলায় পেছন ফেরাটা মানা
চল চল জল সামনেই কল কল —
কেমন চলা সাগরে নয় উৎসে ফেরা!
বিশ্ব জুড়েই তুমি আমি ছড়িয়ে আছি
এবার যাত্রা তোমার আমার একাকী,
দেখা হবে জানি আবার সেই সেখানে
মিলে মিশে সর্বশেষে হবো একাকার।
পরমের খণ্ড তো বেদনা চিরন্তন,
নিরাকার নির্বিকার হয় শুধু পূর্ণ।
অনন্ত কি সত্যিই অপার সীমাহীন?
সমগ্র অনন্ত জুড়ে প্রসারিত সেই
পরম একক, তার খণ্ডিত বিলাসে
তুমি আমি দৃশ্য অদৃশ্য সব কিছুই।
একের খণ্ড অবকাশ বিরহ পথে
পূর্ণতার মিলনেই প্রাপ্তির আনন্দ,
চলো আজ সেই আনন্দপথেই হাঁটি।
মিথ্যা জন্ম - মৃত্যু মিথ্যা বিরহ বেদনা
সত্য শুধু অনির্বাণ আনন্দ অসীম —
আলোয় আলো হয়ে প্রতিভাসিত হই।
কাজরী,
১৪ আগস্ট, ২০১৫
বিশেষ মন্তব্য : কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর অব প্রফেসরস্ ( প্রাক্তন) ডঃ অনিরুদ্ধ বসু।
বাংলা কাব্য সাহিত্যের এক অভিনব সৃষ্টি এই কবিতা। পয়ার ছন্দকে ভেঙ্গে আধুনিক রূপ দান। এ এক নতুন ইতিহাস। এতে কোরআন, হিন্দু পুরাণ, উপনিষদের মিথলজি অসাধারণভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। আর পরাবাস্তবতার গভীর বোধ থেকে জাগতিক জীবনের যে যাপিত অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে তার বাস্তবতা অমোঘ সত্য এবং অতলান্ত এই বোধ আমাদেরকে তন্ময়তার জগত থেকে মন্ময়তার জগতে নিয়ে যায়। সমস্ত চেতনা জুড়ে চিন্তার ঝড় তোলে। মৃত্যুর মাধ্যমে আত্মা জাগতিক স্তর পার হয়ে পরমাত্মার সাথে মিশে সৃষ্টি করে এক মেলবন্ধন। অন্ধকার থেকে চিরআলোকময় জগতে সেই পরমেশ্বরের কাছে পৌঁছে যাওয়া। এ যে অনন্ত অমৃতে মহাযাত্রা মহাশক্তির প্রাণকেন্দ্রে।
0 comments: