নির্জনে সৈকতে
© সুনীতি দেবনাথ
একদিন অবশ্যই নির্জনে সৈকতে
সারাবেলা কুড়োনো ঝিনুক রাশি
সামনে সাজিয়ে পশরার মত
বসেই যেতে হয় মুক্তোর সন্ধানে।
কেউ নেই কিছু নেই কোলাহল নেই
থাকে শুধু সন্ধান দুর্নিবার সমুদ্র অনন্তে,
ঝিনুকের আগল খুলে খুলে দেখছি
সেই অমল মুক্তোখানি মেলে কিনা—
ঝিনুকের শেষ নেই খোলারও নেই
অবশেষ প্রত্যাশা অন্তহীন।
কখন শান্ত সুবিমল অন্ধকার এলো
কখন ভাঙ্গা ঢেউয়ে ঝিনুকেরা ভেসে গেলো
কোথায় জানি না!
উন্মাদ ঢেউ আমাকে ভাসালো
স্রোত স্মিত হেসে ডাকে আয় আয়
ওপারে যাবার বেলা এখন
চল্ না ভেসে যাই একসাথে
আমি সফেদ নরম ফেনায় তোকে
আদরে জড়িয়ে নেবো
মুক্তো নাহয় নাই পেলি!
কান্নায় ভেসে ভেঙ্গে পড়ি আমি
অনন্ত আকাঙ্ক্ষার বিমল মুক্তোখানি
আমার চাইই চাই —
হু হু বাতাস অট্টহাসি হাসে প্রমত্ত
যেন বলল পেছনে তাকা —
তাকালাম
পরমাশ্চর্য সেই অমল মুুক্তো হাসছে!
ইঙ্গিতে ডাকছে আমাকে
এসো এসো আমার কাছে এসো!
হাসি কান্নায় ভেঙ্গে যেতে যেতে
উল্লাসে আমি দুহাত বাড়ালাম
সে এলো দুহাত জড়িয়ে আমার
সৈকতের রূপালি বালিতে
সবটুকু ভালবাসায় ভিজিয়ে
সবটুকু মমতায় সাজিয়ে
আমাকে বসালো পাশে।
সে আর আমি
নিঃস্তব্ধ আকাশ নিঃশব্দ সমুদ্র
কেউ নেই কোন কিছু নেই
শুধু জাগি আমি আর জাগে সে।
আমরা দুজন পাশাপাশি
হাতে হাত দুজনের
অন্ধকারে বিমল এক জ্যোতিরেখা
আমাদের ঘিরে ঘিরে নাচতে লাগলো
শ্রবণে আমাদের সমুদ্রের মহাসঙ্গীত
আকাশ থেকে নক্ষত্রেরা, সব নক্ষত্রেরা
আলো চোখ মেলে বিস্ময়ে তাকালো
পাশাপাশি বসা দেখে আমাদের
আলোর টুকরো হাসি ছিটকে দিলো।
আত্মহারা আনন্দে দুচোখ বুজলাম
আমি চোখ বুুজে মগ্নতায় স্তব্ধ —
তারপর—
তারপর চোখ খুলে হাহাকার
সে নেই কেউ নেই কিছু নেই
নির্জনে সৈকতে একা
সমুদ্র শুধু কাঁদে গভীরে গভীরে।
কাজরী,
১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫
0 comments: