লেখা-লেখি

গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ

৪:০৮:০০ AM 0 Comments
















 গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ একটি নাম। ১৯৮২ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। সিয়েন আনিওস দে সোলেদাদ ( নিঃসঙ্গতার একশো বছর / One Hundred Years of Solitude) নামক বিখ্যাত উপন্যাসের লেখক তিনি। এই উপন্যাসটি তাঁকে নোবেল পুরস্কার এনে দিলো। ১৯৮১ সালে প্যারিস রিভিউ- এর একটি সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন যে ছুতোরের অর্থাৎ কাঠমিস্ত্রির কাজের সঙ্গে সাহিত্য নির্মাণের সাদৃশ্য আছে। তিনি বলেন, " লেখার কাজটা একটা টেবিল তৈরি করার কাজের মতই খুব কঠিন। দুটি বিষয়েই বাস্তবতার সাথে কাজ করতে হয়। আর বাস্তব হচ্ছে কাঠের মতই সুকঠিন।
( টেবিল বানানো আর লেখা)দুটি বিষয়েই কৌশল এবং প্রযুক্তির প্রয়োজন পড়ে। মূলগতভাবে দুটি কাজেই অতি সামান্যই ম্যাজিক আছে, কিন্তু প্রচুর পরিমাণে কঠোর পরিশ্রম লাগে। "
    ১৯৮২ সালে নিউইয়র্ক টাইমসের সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন যে, অত্যদ্ভুত মনে হওয়া বা অবিশ্বাস্য কোনও কিছুকে বিশ্বাসযোগ্য ও মূল্যবান করে সৃষ্টি করতে হলে কিছু ট্রিকস বা কলাকৌশল ব্যবহার করতেই হয়। তিনি জার্নালিজম করা থেকেই সেই কলাকৌশল শিখেছিলেন বলে জানান। মূল চাবিকাঠিটা হচ্ছে কিছু বলতে হলে তা সরাসরি বলা, জার্ণালিজমে সেটা করা হয় আর গ্রামীণ জনগণ সেটা করে।
         ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের প্রথম উপন্যাস লা ওহারাস্কা (পাতার ঝড়)।, কিন্তু তাঁর রচনাশৈলী ধারাবহিকভাবেই যেন  বদলে যেতে থাকে যতদিন ১৯৬৫-৬৭ কালপর্বে তিনি রচনা করেনসিয়েন আনিওস দে সোলেদাদ ( "নিঃসঙ্গতার এক শতাব্দী")। এই উপন্যাসে তিনি তাঁর নিজস্ব লিখনশৈলীটি যেন আবিষ্কার করতে পারলেন। তাঁকে বলা হয় জাদু বাস্তবতা বা Magical Reality -এর মহা রাজাধিরাজ। উপন্যাসের শৈলী হিসেবে জাদু বাস্তবতা তাঁর আবিস্কার না হলেও এই রচনাশৈলীকে তিনি যেভাবে আত্তীকরণ করে স্বকীয় করে নিয়েছিলেন তা আর কেউ করতে পারেননি। তাঁর উপন্যাসের কাহিনী প্রোথিত থাকে বাস্তবে কিন্তু এই ভিত্তির ওপর কল্পনার ময়ূরপংখী ভাসিয়ে দিয়ে নবীনতর উপকূলে পৌঁছে যান তিনি। তিনি বলেছিলেন, যেদিন ইউনুস নবী (আ:) ৩০ বছর নিরুদ্দেশ থাকার পর বাসায় ফিরে তাঁর স্ত্রীকে জানান যে তিমি মাছ তাঁকে গিলে ফেলেছিল এবং এ কারণেই তিনি নিরুদ্দেশ ছিলেন, সেদিনই কথাসাহিত্যের গোড়াপত্তন হয়েছে। মার্কেস মনে করেন না যে পাঠক গল্প-উপন্যাসে বাস্তব পরিবেশের অনুপুঙ্খ বর্ণনা খুব বেশি আশা করে। এটা ঠিক যে মার্কেসের কল্পনাপ্রবণতা পাঠককে আনন্দ দেয়, কিন্তু একই সঙ্গে কাহিনীর রাজনৈতিক দিগদর্শন চিন্তায় আলোড়ন তোলে। মার্কেজের জাদু বাস্তবতা একই সাথে যেন ত্রিকালে বিচরণ করে। কিন্তু তা অস্বাভাবিক মনে হয়না। এই জাদু বাস্তবতা দ্বারা জন্ম থেকে জন্মান্তর, কাল থেকে কালান্তরে, এমনকি পরলোকেও অবাধ বিচরণ করেছেন লেখক তাঁর উপন্যাসে।
   গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের জন্ম হয়েছিল ৬ মার্চ,১৯২৭ সালে। তাঁর মৃত্যু হয়১৭এপ্রিল ২০১৪ সালে।তিনি গাবো নামেও পরিচিত ছিলেন। একজন কলম্বীয়  সাহিত্যিক, সাংবাদিক, প্রকাশক ও রাজনীতিবিদ ছিলেন তিনি। নিঃসঙ্গতার এক শতাব্দী বইয়ের লেখক হিসেবে তিনি বিশেষভাবে পরিচিত। কলম্বিয়ার সন্তান ছিলেন তিনি। তবে  গার্সিয়া মার্কেস জীবনের বেশিরভাগ সময় বসবাস করেছেন মেক্সিকো এবং ইউরোপের  বিভিন্ন শহরে।

এই বিশ্ব বিখ্যাত ঔপন্যাসিক কলম্বিয় ও স্পেনীয় ভাষা- ভাষী ছিলেন। তিনি  বিশ শতকের শেষার্দ্ধের সবচেয়ে আলোচিত, সবচেয়ে প্রভাবশালী লেখক হিসেবে পরিগণিত হয়েছিলেন। জীবনের শেষ দিনগুলি ক্যান্সারের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচেছিলেন। এ সময় তাঁর লেখালেখি কমে আসে; জনসংযোগ ও ভ্রমণ হয়ে পড়ে সীমিত। এমনকী ২০০২-এ আত্মজীবনীর প্রথম খণ্ড লিভিং টু টেল আ টেইল প্রকাশের পর পরিকল্পিত ২য় এবং ৩য় খণ্ড আর রচনা করা হয়ে ওঠেনি। ২০১২'র জুলাই থেকে তিনি স্মৃতি বিনষ্টিতে আক্রান্ত হন। মৃত্যুকালে তিনি একটি অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি রেখে গিয়েছেন।
    সাহিত্যবিশেষজ্ঞদের মতে তিনি হোর্হে লুইস বোহের্স এবং হুলিও কোর্তাসারের সাথে বিশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দক্ষিণ আমেরিকান কথাসাহিত্যিক। একই সঙ্গে জনপ্রিয় ও মহৎ লেখক হিসেবে চার্লস ডিকেন্স , লেভ তলস্তয়  ও আর্ণেস্ট হেমিংওয়ের সঙ্গে তাঁর নাম এক শ্রেণীতে  উচ্চারিত হয়। ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে নোবেল পুরস্কার প্রদানের সময় সুইডিশ একাডেমী এমন মন্তব্য করেন যে তাঁর প্রতিটি নতুন গ্রন্থের প্রকাশনা বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার মতো। জনমানুষের সঙ্গে রাজনৈতিক যোগাযোগের কারণে তিনি ছিলেন বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ।কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব ছিল প্রবাদতুল্য। 

SUNITI Debnath

আমি সুনীতি দেবনাথ, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি শিক্ষিকা। কবিতা, প্রবন্ধ ও ছোটগল্প লিখি। কবিতা আমার প্রিয়ভূমি, শৈশব থেকেই হেঁটে চলেছি...

0 comments: