লেখা-লেখি

নন্দিনী ইরাবতী তোমাকে

১২:১৬:০০ AM 0 Comments










          © সুনীতি দেবনাথ    

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার
আকাশে এখন কি দিনশেষে টকটকে
লাল সূর্যটা রক্তকরবী হয়ে ডুবতে
চাইছে অন্ধকার সমুদ্রে? জানিনা তা
জানিনা। ওখানে কি ঠিক আমদের মত
সন্ধ্যা নামে আকাশ ঢাকা এলো কালো
চুল ছড়িয়ে তাওতো জানিনা।
ধরে নিলাম রবিঠাকুরের নন্দিনীর জন্য
 কোন পাগলা যুবক
দেশ ঝেঁটিয়ে রক্তকরবী না আনলেও
সন্ধ্যায় লাল সূর্য নন্দিনীর এলানো
চুলে রক্ত রশ্মির
একটি রক্তকরবী গুঁজে দিতে চায়।

তুমি কি এখন ক্লান্ত পায়ে বেসামাল
ছন্দের ঢেউয়ের দোলায় দুলছো? আর
হাসপাতাল চত্বরে ক্লান্তি ছড়িয়ে
ঘরমুখো? তোমার চোখের তারায়
নাচছে রক্তকরবীর রঙের ছায়া
বেপরোয়া!  তাওতো জানিনা।

জানো এখানে এখন রাত শেষ,
আজানের নিবেদনের কাঁপা কাঁপা সুর
থেমে গেছে, এখনো সূর্য চোখ কচলে
পুব আকাশে  উঁকি দেয়নি।
তবু ঘুম ভাঙা একটি কালো কাক
ডেকেই চলেছে অবিরাম
আর দোয়েল কটি শিস দিয়ে কত কি
যাচ্ছে বলে, কেউ বলবে হয়তো
ওরা গাইছে গান, আমি বলব ওরা
গান ভুলে গেছে তাই রক্তকরবীও
চোখ মেলে তাকায়না, কোন যুবকও
আর নন্দিনীর জন্য রক্তকরবী খুঁজে
হয়না হয়রান।

এ যুগের নন্দিনী আর অদ্ভুত সোনার
কারাগার ভেঙ্গে ধনের
ভাণ্ডারে বন্দি রাজাকে মুক্ত করে
সোনালি রোদের আকাশ তলে
উচ্ছ্বসিত মুক্তির ছন্দে মাতোয়ারা
ঝর্ণার কাছে নিয়ে যেতে চায়না।
জানো নন্দিনী আমরা বড়ই বেসামাল
 মানুষ, বলতে পারো আকাট মূর্খ ও
আত্মবিস্মৃত মানুষ।
তুমি তো এই মাটির সুুঘ্রাণ নিয়ে
এই জলশ্যাওলার অলৌকিক সুগন্ধি
বাতাসে ফুসফুসে কোন কারুকাজও
করোনি, বাংলার তেপান্তরের মাঠে চুল
উড়িয়ে
ছুটোনি গাঙশালিকের ছায়ার পেছনে,
শরতের শিশির ভেজা
শিউলি কুড়োওনি আঁচল ভরে,
কাশবনের ঢেউয়ে দোলে তিরতির
কাঁপেনি তোমার কিশোরী শরীর!
তবু এই বাংলার নরম মুখ বড় টানে।

নন্দিনী সেই কবে তোমার পিতামহ
পিতামহী বাংলার আঁচল ছেড়ে
প্রবাসে, পিতামাতাও ওদেশের মাটিতে
শেষ ঘুমে শুয়ে। শুনেছি
তৃতীয় প্রজন্ম- কন্যা জন্মেছ ওদেশে,
তবু প্রাণের অতল সাঁতার  
শুধু বাংলার জলে, কামনা শুধু
বাংলার অক্ষরে উচ্চারণ বাংলা।
তুমি জানোনা নন্দিনী, বাংলা আর
সেই বাংলা নেই। একদিন বিদেশী
তাড়িয়ে খণ্ড খণ্ড যে স্বদেশ জুটেছিল,
সেখানেও ভাষার জন্য ভয়ঙ্কর যুদ্ধ
হলো, বিজয় হলো
তবু ভাষা কাঁদে নীরবে নিভৃতে।
আমরা স্বেচ্ছাচারী, স্রোতে ভাসিয়ে
বিবেক স্বদেশী ঠাকুর ফেলে পুজো করি
বিদেশী কুকুর, এই আমাদের
স্বাদেশিকতা ! পশ্চিম থেকে ঝেঁটিয়ে
বিদেয় করা যত আবর্জনা প্রিয় তা
আমাদের কাছে।  জানো নন্দিনী,
এক অবক্ষয়িত জীবন আমাদের।
নেই কোথাও উজ্জ্বল আলোর দিশা,
নেই কোন জেগে ওঠার তীর
রূপনারায়ণের। এদেশে চলেছে
বিদেশী হবার প্রবল সাধনা, আর
সাত সমুদ্র তেরো নদীর  ওপারে
 বাংলার নন্দিনী তুমি স্বপ্নের স্বদেশে
গড়ে চলো অলৌকিক কথা  আর
অপরূপ স্বপ্নিল আবাস।


কাজরী,
৩১ ডিসেম্বর, ২০১৪

SUNITI Debnath

আমি সুনীতি দেবনাথ, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি শিক্ষিকা। কবিতা, প্রবন্ধ ও ছোটগল্প লিখি। কবিতা আমার প্রিয়ভূমি, শৈশব থেকেই হেঁটে চলেছি...

0 comments: