কবি সুনীতি দেবনাথের 'চতুষ্পদী ' কবিতার কাব্য - সমালোচনা
কবি সুনীতি দেবনাথের 'চতুষ্পদী'
কবিতার কাব্য-সমালোচনা
উত্তমকুমার রায়
'চতুষ্পদী' হলো দুটো চৌপদী কবিতা । কবিতা দুটো স্বতন্ত্র হলেও প্রথম কবিতাটিতে যে সমস্যা-সঙ্কটের প্রকাশ, দ্বিতীয়টিতে রয়েছে তা থেকে মুক্তির পথ । কবিতা দুটো ছোটো হলেও এর ব্যঞ্জনা বিস্তৃত বহুদূর পর্যন্ত । কবিতা দুটো কবির আত্মজ সঙ্কট ও আত্মোপলব্ধির নির্মম প্রকাশ ।
কবিতা দুটোতে নদী আর নারী একসূত্রে গাঁথা । রোগগ্রস্ত শরীরে পুরনো শীর্ণ নদীর মতোই শুয়ে আছেন শয্যায় এ কাব্যের নায়িকা । তাঁর দেহের মাংসের খাঁজে খাঁজে রয়েছে শ্যাওলার বসতি । সুযোগ বুঝে কিছু অমানুষ কথায় কথায় রক্তাক্ত করছে তাঁকে । জ্বালাতন করে অতিষ্ঠ করে তুলছে । সেই রক্তের স্রোতধারায় ভেসে ভেসে তিনি চলেছেন অসীমের পথে ।
এ কাব্যের নায়িকার চলার এ-পথ নয় মোটেই মসৃণ । অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যদিয়ে এগিয়ে যেতে হচ্ছে তাঁকে অনন্তের দিকে । কারণ এ-পথে নেই কোনো তারুণ্য, নেই কোনো কামনা-বাসনা, নেই কোনো ইচ্ছে-অভিলাষ । শুধুই রয়েছে দুঃসহ বেদনা । চলার এ অনন্ত পথপরিক্রমায় নায়িকা পেয়েছেন সর্বাতীত অর্থাৎ দুঃখ, মায়া প্রভৃতির অতীত এক আশ্রয় - তা তো মৃত্যু ভিন্ন আর কিছু নয় । মৃত্যুভাবনার ভেতর দিয়েই এ-নায়িকা জরা-ব্যাধি থেকে মুক্তির পথ খুঁজে পেয়েছেন । প্রকৃতপক্ষে মৃত্যুই দুঃখ, মায়া, জরা-ব্যাধি থেকে পারে মুক্তি দিতে ।
প্রথম কবিতায় 'প্রাচীনা নদীটি শুয়ে আছি এলিয়ে শরীর' - এখানে উপমা চমৎকারভাবে চিত্রকল্পে রূপায়িত হচ্ছে । 'শরীর মাংসের খাঁজে শ্যাওলার ঘর / মাংসবিলাসী পাখিরা ঠুকরায় কেবল / রক্তের স্রোতে ভেসে অনন্তের পথ চলি' - এ তিনটে লাইনেই রয়েছে অপরূপ চিত্রকল্প । প্রথম পঙ্ ক্তিটি কাব্যিক সৌন্দর্যে অসাধারণ ।
দ্বিতীয় কবিতাটিতে আছে অনুপ্রাস 'কেবলই চড়াই উৎরাই' এবং 'প্রলাপ-প্রলোভন' । শেষ লাইনটিতে রয়েছে অনন্তপথে চলার উত্তর - 'সব নেই যে প্রান্তরে সেখানেই পরমের ঘর ।'
উপমা, চিত্রকল্প,অনুপাস, নান্দনিকতা সর্বোপরি মৃত্যুচিন্তা বা মৃত্যুভাবনা কবিতাটিকে দিয়েছে কাব্যিক সার্থকতা । আন্তরিক ধন্যবাদ কবিকে ।
0 comments: