' সে হত হয়েছিল ' কবিতার আলোচনা
আলোচক রূপক বড়ুয়া
---------------------------------
সুনীতি দেবনাথ ' আরশি একটি সাহিত্য সাময়িকী' গ্রুপে 'সে হত হয়েছিল ' কবিতাটি পোস্ট করেছেন। কবিতাটা পড়ার সু্যোগ হলো আমার। ভেতর থেকে একটা তাগিদ অনুভব করলাম এ সম্পর্কে কিছু একটা লিখতে। আর গ্রুপ থেকেও আমাকে সে সুযোগ দেয়া হলো সেরা কবিদের মধ্যে একজনের কবিতা আলোচনা করতে। একটা কথা এখানে বলতেই হয় এখানে সেরা কবিদের প্রত্যেক কবিতা বিশেষ তাৎপর্যমন্ডিত এবং হদয়গ্রাহী,সব কবিতা কোন না কোনভাবে পাঠকহৃদয়কে আলোড়িত করে। তবু আমরা আজ এইক্ষণে সুনীতি দেবনাথের কবিতাকে বেছে নিলাম আলোচনার স্বার্থে।
এভাবে আমরা পর্যায়ক্রমে একেকজন সেরা কবির
কবিতা আলোচনা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আশা
করি আপনারা আমাদের উদ্যোগকে সহজভাবে নেবেন
এবং আমাদের অনুপ্রাণিত করবেন।
সুনীতি দেবনাথ একজন জাত কবি। অসাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি আর ব্যতিক্রমী শৈল্পিক চিন্তা চেতনা থেকে
কবিতার মূলভাব উৎসারিত করেছেন কবিতার প্রারম্ভ
থেকেই। দেশ, সমাজের সাম্প্রতিক চালচিত্র কবি
অন্তঃসত্তা দিয়ে অনুভব করেছেন। তাই তিনি কবিতার
শুরুতেই অনেকটা দ্রোহিক সুরে বললেন
"ঐ আকাশটা গনগনে আগুনের ফার্নেস
নীলের ছোঁয়া নেই হলকা তাপে ঝলসাচ্ছে শরীর
বাতাসে লেশমাত্র অক্সিজেন নেই
হাঁ করে জোরে বাতাস টানাটা ব্যভিচার
দমকে দমকে আগুনের লকলকে শিখা
বুকের ভেতরে থরে থরে জমতে থাকে
সুতীব্র দহন জ্বালা সারাটা অস্তিত্ব জুড়ে"
কবি নিজেকে স্থির রাখতে পারলেন না। মনের ভিতর
ফুঁসে উঠা প্রতিবাদী আগুন জ্বাললেন নিখুঁত শব্দশৈলীতে, তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখলেন চলমান ঘটনা
প্রবাহের উপর, হৃদয়ে অনুভব করলেন তীব্র যন্ত্রণা আর ক্ষোভে ফেটে পড়লেন কবি তাই বলে উঠলেন ;
"এখনই সেই নীলাভ কবিতাটি লিখে নিতে হবে
এমনি প্রখর দহন বেলায় তাকে হত্যা করে
চলন্ত বাসে তকমা পরা পুলিশ বাহিনী
প্রতিবাদী মিছিলে সিনা উঁচু করে কদম কদম
এগোচ্ছিলো নির্ভীক নওজোয়ান
ঘরে জ্বরাক্রান্ত বৃদ্ধ বাবা - মা নেহাতই কিশোরী
ছোট বোনটি আনাড়ি হাতে পরিচর্যায়
ঠিক এমনি দিনে প্রকাশ্য প্রকট দিবালোকে
বেয়নেটের খোঁচায় মিছিলে হাঁটার অপরাধে
তাকে হত্যা করা হয়েছিল সে হত হয়েছিল "
কি দারুণভাবে বলে গেলেন সরকারি দলের অনুগত বাহিনী কর্তৃক নৃশংস, অমানবিক, নিষ্ঠুর এক হত্যাযজ্ঞের কথা। দারুন সাহসিকতায় ব্যক্ত করলেন
এক অসাধারণ সত্য ভাষণ। শুধু মাত্র এক মিছিলে বুক ফুলিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেয়া এক প্রতিবাদী
যুবককে অন্যায়ভাবে হত্যা করার ঘটনাকে করলেন
প্রকাশ্যমান অনন্য শব্দ যোজনায় । হৃদয়ে বেদনার রস
ক্ষরিত হলো, কবি অনন্য অনুভূতিতে স্বাধীনতার বিকৃত রূপ প্রত্যক্ষ করলেন রাষ্ট্রযন্ত্রে, অনুশাসনে, শাসনে ;
'নীল নীল বেদনা নিয়ে এই স্বাধীন দেশ ছেড়ে
ফুটপাতে মুখগুঁজে একটু অক্সিজেন চেয়ে
সজোরে বুকের হাঁপর টেনে স্তব্ধ হয়েছিল
স্বাধীনতা কর্তব্য অধিকার সংবিধান আইন
সেদিন তাকে ঘিরে অট্টহাসি হেসে শবানুগমনে
মরণ নৃত্য নেচেছিলো আমার স্বদেশের মাটিতে '
কবি দেখলেন রাষ্ট্রীয় শাসন শোষণে কিভাবে নিগৃহীত
হতে হতে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত সরকারের নিষ্টুর
আইন শুধু স্বার্থের পরিপন্থী হলে কিভাবে সত্যের ঘাড়ে
খড়্গ হয়ে নেমে আসে।
অসাধারণ দ্রোহের এক ব্যতিক্রমী কবিতা নান্দনিক
দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সৃজিত হয়েছে। কবির গভীর চিন্তাভাবনা স্বাধীনতার মর্মকথা, রাষ্ট্রযন্ত্রের নিষ্ঠুর নিষ্পেষন, দলন নিগৃহীতকরণের, দুঃখি সাধারণ মানুষের জীবনের ব্যথা, অর্থাৎ সব কথাই ব্যক্ত হয়েছে কবিতায়।
কবিতা নন্দিত, অনুপম অনুভবে সৃজিত।
0 comments: