চাকমা ভাষার একটি উভগীত ( লোকগীতি) / বাংলায় ভাবানুবাদ
© সুনীতি দেবনাথ
উভ গীত : মূল রচনা
----------------------------
মরদ : কালি কুচ্যাল পেরেলুং
ধলা কুচ্যাল পেরেলুং
আঝায় আঝায় ভাজিলুং
বারিঝ্যা বজকাশ কদম কাদেশুং
ন- পেশুং কিওজন ত- ধোক্যা
কামে - করজে তোদক্যা
রূবে - রঙে চোদক্যা
ন - পেলুঙ কিওজন (লক্ষীরৈ)
ত - ধোক্যা।
মিশা : পূজত ফেলাঙ আকপাদা
সুধত দিলুঙ ঘরপাদা
চোগতগুলি তেলনাদা
জানচ কিনেই কত্তে সিয়ানি
মর দাদা :
কদক দোশমিলা থাগত্তে
ম - সান্যা মিলাত্তেই কানত্তে
ডোলনেই ভিলি কুনত্তে
কদক ডোশ মিলা থাগত্তে।
মরদ: দিলুঙ তারাহাম খরানত
ধানুন কুজি হরানত
ন - গান লাগিশ চরানত
ধেইয়া কধা কইনেই লক্ষী রৈ
দুঃখ ন- দিচ পরানত
মিশা: গোজেনে বানেল সিরিত্থি
মানেয়্যর পত্থম গিরিত্তি
কেদুগা - কেদুগীর বজত্তি
মানেই লগর পিরিত্তি।
তোনৎ দিলুং সাবারাং
লাঙ্যা পীড়া মুই ডরাং
আগে ধরি স্যানে আদেরাং
বানা স্যানে মর দাদারৈ
মুই আগে ধরি আদেরাং।
মরদ : লাঙপীড়া কি বানা তর
হলে হব তর আর মর,
লাঙ্যা মেয়াত স্বর্গসুগ
দেখাদেখি ন- হলে পরায় বুক;
দেখা দেখিত চিৎ জুড়োয়
লাঙ্যা মেয়্যা ন ফুরোয়
মানেই কুশত দেব সুখ
লাঙ্যা মেয়্যা স্বর্গ সুখ।
মিশা : লাঙ্যা মেয়্যা যনি পেদে চাচ
গাবুর জীংকানিয়ান যনি মর
পেদে চাচ —
কদেই সত্যগরি কধাগান:
দিবেনি দাদো তর মেয়্যাগান!
মেয়্যাবানে নি মরে বানিবে
মেয়্যাটানে টানিবে
সালেন মর গাবুর
জীংকানিয়ান
গোজেম তরে জানিবে।
অনুবাদঃ
========
পুরুষ :
কালো- সাদা জাতের আখের
রস তুলেছি,
ভেসেছি আশায় আশায় —
দুঃসহ বর্ষা জীবনের কাটিয়েছি।
অতুলনীয়া তুমি
পাইনি তো আর এমন
ঘরকন্নায় সুদক্ষা
রূপবতী অনন্যা।
নারী :
পুজোয় দিয়েছি অঞ্জলি
নতুন ঘর সৃষ্টির কেটেছি নকশা
আর তুমি চোখে দিয়ে তেল
( মায়াকান্না কাঁদো ছলনায়)
বিচক্ষণ তুমি, তাই ইনিয়ে বিনিয়ে
সাজাও কথা।
রূপসী নারীর অভাব পড়েনি তো
কুরূপা বলেই করছো তুমি ব্যঙ্গ।
পুরুষ :
ঘরের মূল খুঁটি ফেলেছি পুঁতে,
দারুণ খরায় ধ্বস্ত রোপণ করেছি ধান;
নদীটির জল গেছে কমে
নৌকোটা গেছে আটকে চরে —
(এমন দুঃসময়ে) দায়সারা কথা বলে
দুঃখ দিয়ো না কন্যা মনে।
নারী :
এই পৃথিবীর সৃষ্টি করলেন ঈশ্বর,
তাই মানব- বসতি হলো পৃথিবী।
কেদুগা- কেদুগী প্রথম বসতকারী —
ধরায় ছড়িয়ে দেয় প্রেম তারা।
প্রেমের জ্বালায় বড় ভয় আমার
আর তাই আগেভাগে সরে যাবার
ভাবনাটাই ভাবছি।
পুরুষ :
প্রেমের জ্বালা একা তো তোমার নয়,
এ জ্বালা তো তোমার আমার দুজনের।
প্রেম সেই স্বর্গ সুখ
মানব মনে সঞ্চারিত করে,
বিচ্ছেদে জাগায় বেদনা।
মিলনে আসে চিত্তে গভীর প্রশান্তি
এ প্রশান্তি অপার অন্তহীন —
তাই লোকে বলে
স্বর্গ -মায়া মিশে আছে প্রেমে।
নারী :
যদি চাও ভালোবাসা
আমার জীবন যদি চাও
নিতে যদি চাও নিজেরই করে,
সত্য বলো তবে
বিনিময়ে শুধু ভালোবাসা দেবে!
যদি বাঁধো প্রীতির বাঁধনে
আর টেনে রাখো নিরন্তর,
তাহলেই জেনো প্রস্ফুটিত এ যৌবন
তোমাকেই করবো সমর্পণ।
কাজরী
৭জুন, ২০১৫
* উল্লেখ্য : ভাষার অর্থ অনুধাবন
সহযোগিতায়— বন্ধুবর নিরঞ্জন চাকমা।
0 comments: