আনন্দ পথিক
© সুনীতি দেবনাথ
তিনি দাঁড়িয়ে থাকেন
গমরঙা প্রান্তরের ওপারে সকাল সন্ধ্যে।
পূর্ণ গর্ভবতী গমক্ষেতে বুনো টিয়া ঝাঁকে ঝাঁকে লাল ঠোঁটে ঠুকরিয়ে চলে গোছা পুষ্ট শস্যে।
কাগতাড়ুয়া প্রাচীন ডোরাকাটা মিশরীয় সেনার মত
লতপত দোলে টালমাটাল এবেলা ওবেলা।
চাষীবৌ ফিরোজা ওড়না লাল কুর্তার উপরে বেঁধে
কালো কালো হাতে নিপুণ কাঁচিটা চালায় সারাদিন।
তপ্ত রোদ সোনা পান্নায় আগুন জ্বালিয়ে ক্রুর হাসে
তরল ঘামের পানি নদী হয়ে মুখ বুক বেয়ে
নোনা জলে বৌটিকে ধুয়ে দিয়ে চলে অবিরাম।
তেষ্টার পানি নেই গেলার সময় নেই মোটে।
সন্ধ্যে নামার আগে বহুক্রোশ দূরে বাড়ির উঠোনে
পাকা গম স্তুপ স্তুপ নিতে হবে টেনে নিস্তার যে নেই।
গেলো সন সোয়ামী গলায় দিয়েছে দড়ি মহাজনী কোপে,
নিস্তার তো নেই যত খরা বান হোক পেটে জ্বলে শীত ধুনি,
শুওর ছানার মত ছাওয়াল ঘুরে পায়ে পায়ে
গম বোনা পাকা সোনা ঘরে তোলা চলতে থাকেই।
আনন্দ পথিক খেরো খাতা হাতে একটি সোনাদাঁত ঝিঁকিয়ে
দাঁড়িয়ে থাকেন বাজরা জোয়ারের প্রতিশ্রুতি নিয়ে।
সোয়ামী গেছে রেখে পঙ্গপাল সন্তান, বংশানুক্রমিক লাল খেরোখাতা,
দক্ষিণী এ নারীর নিশ্চিত উত্তরাধিকার।
কাজরী,
১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
0 comments: