শরণার্থী শিবিরে
© সুনীতি দেবনাথ
সেই ঘোরতর অরণ্যে যখন আমরা
বহুদিন বহু বেদনার দিনের ছবি
এঁকে চলেছি ভাল না লাগার রঙে,
সে সব ঝিমোনো কাতর দিনের
দুপুরগুলো ছিল বড় অসহায়
ঠিক আমাদের মত আশ্রিতদের।
পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে ছোট্ট পা
ফেলে ফেলে আমি হাঁচোড়পাছোড়
নেমে যেতাম বহু নিচে ছড়ার কাছে
পাথর আসনে বসে এদিকে ওদিকে
চারদিকে খুঁজে বেড়াতাম কেবলই
কোথায় সেই শ্যামল কোমল ছায়াবট?
কোথায় বিলের থৈথৈ অথৈ জলের নাচন
আর কদম ফুলের গাছ?
অচেনা পুরো অজানা এ কোন দুনিয়া,
এমন কঠিন কঠোর পাথুরে মাটি,
এমন পাখিহীন ফুুলহীন প্রজাপতির রঙীন উড়াল বিহীন
এ কেমন দেশ?
আমার ছড়ার জল ছিল কেমন
টলমল মায়ের চোখের মত।
এখানে চড়ুই নেই শালিক নেই
ফিঙে মাছরাঙা নেই
আছে শুধু এক দঙ্গল কালো কালো
দাঁড়কাক আর এলোমেলো
গাছ- গাছালির বেহায়া ঝগড়া।
আর কিছু কিছু টিলার ঔদ্ধত্য।
এখানে মানুষজন নেই
হঠাৎ মেলে
ঝোপের আড়ালে হাড়গোড় মানুষের করোটি।
আমার শিরদাঁড়া বেয়ে একটা শীতলস্রোত পৃথিবীর দুই মেরুবিন্দু থেকে এসে একত্রিত হয়ে জমাট করে দিত।
স্বদেশ বিতাড়িত আমরা
ঘোর জঙ্গলে অস্থায়ী তাঁবুর বাসিন্দা।
এখানে প্রাণ গান স্পন্দিত জীবন
ছিলো না —
পাশবিক ক্ষুধা ছিল শুধু ছিল পাণ্ডুর আকাশ।
কাজরী,
১০ জুলাই,
২০১৫
0 comments: