কেমন আছো?
© সুনীতি দেবনাথ।
তুমি কেমন আছো রাকিবুল ভাই?
প্রসন্ন তুমি কি ভালো আছো?
এখনো লাঙল কাঁধে যাওয়া আসা হয়?
নাবাল মাটির বুক ফালাফালা করে
বিনি পয়সার স্বপ্ন বুনে ফসল ফলাও?
ঠিক দুপুরে সূর্যটা যখন মাথার তালুতে
গনগনে ক্রোধে শিহাব ছিটোতে থাকে,
এখনো কি আগের মত
দূর বাড়িঘর থেকে
বৌ ঝিরা গামছায় ভাতের থালা
বেঁধে নিয়ে ঢলে ঢলে আলপথে আসে?
তারপর আলপথে রোদালি আঁচলে বসে
কিছু না বলে হাজারো কথার লেনদেন
বহু দীর্ঘশ্বাস অনেক সুখের স্মৃতি মিলেমিশে
অপরূপ রূপকথার জাল বোনা চলে?
প্রসন্ন ভাই, আকাশে তাকিয়ে বুঝি ভাবো
দিনকাল কেমন রঙ বদলায় একদম
বদলায় না এই খরা এই বান এই ঋণ আত্মঘাতী সুদ মহাজন
সকলই নসীবের খেল!
বড় আশায় বাপজান নাম রাখে প্রসন্ন,
জানে না তো বিধাতার লিখন ছিলো বিষণ্ণ!
নইলে জোয়ান মরদ ছেলে দু 'পাতা পড়ে
পাল্টে গিয়ে স্বপ্নহীন শিহাব হয়ে সমুদ্র পেরিয়ে
মায়া কাননের নিঃসঙ্গ বাসিন্দা হতে পারে?
আরব সাগরের ঢেউ গুণে প্রতিটি বিকেলে হায়!
মা তার আকুল প্রতিপল প্রতীক্ষায়
শূন্য পথে অঝোরে শাওন বৃষ্টি হয়ে শেষ হয়ে যায়!
তবু সে আসে না ফিরে।
আমি শুধু প্রতিটি রাতে অন্ধকারে
বিষণ্ণতার খাতা খুলে পাতা উল্টে যাই।
রাকিবুল ভাই, তোমার গল্প শুনি —
জীবন যৌবন সবই সঁপেছিলে
পালল মাটি আর লাঙলের ফলায়।
নুব্জ্য দেহে আজো দেখি ধুঁকে ধূঁকে
লাঙল ঠেলো আর পাঁচন মারো
বুড়ো হাড় জিরজিরে বলদের গায়।
তার আগে পরে?
বহুদিন হলো সেই আমার বৌ রহিমা
মরে গেছে আকালে রক্তশূন্যতায়।
ছেলেটা ইস্কুলে তখন, কলেজের
চৌকাঠ ডিঙিয়ে বাবু হয়েছিল
হয়নি বাপের মত চাষা।
দিনকাল বদলে গেলো, বখে গেলো সে
তারপর একদিন সকালে পাড়ি দিল শহরের পথে। ফেরেনি আজো বড়সড়
চাকরি করে ভাবতাম।
সেদিন রশীদ ভাই শহর ফেরতা
জানালো দেখেছে তাকে এক মহাজনী
দোকানে মাল টানে, হায়রে শহুরে বাবুয়ানা!
আমার ডাগর ডোগর মেয়ে ফেরদৌস
মনে পড়ে? সেও নেই।
গলায় কলসী বেঁধে ডুবে মরেছে পুকুরে,
বাঁচালো। পেটে কলঙ্কের বীজ পুঁতেছিল যে!
ভালো আছি ভাই, সুখে আছি মাটির
কাছাকাছি মাটির মানুষ।
কাজরী,
৫ জুন, ২০১৫
0 comments: