আমার স্বদেশ ভাসে
কবি সুনীতি দেবনাথের 'আমার স্বদেশ ভাসে' কবিতার কাব্য-সমালোচনা
উত্তমকুমার রায়
কবির এ কবিতায় তাঁর প্রিয় স্বদেশভূমি আজ হিংসা, হত্যা, সন্ত্রাস আর জঙ্গিহানায় মৃতপুরী । তাই স্বদেশের পুনরুজ্জীবনের জন্যে প্রয়োজন অমৃতের । স্বর্গ থেকে সেই অমৃতভাগ পেতে মৃত স্বদেশকে ভেলায় নিয়ে দুঃসাহসিক এক যাত্রা শুরু করেছেন বেহুলারূপী কাব্যের এ নায়িকা ।
বাংলাদেশের বগুড়া জেলার মহাস্থানগড়ে অবস্থিত প্রাচীন বাংলার রাজধানী পুণ্ড্রবর্ধন । মহাস্থানগড়ে রয়েছে বেহুলার ভিটে, লখিন্দরের লোহার বাসর-ঘর । একদিন এই ভিটে-বাসর-ঘর ঘিরে বাংলার প্রতিটিমানুষের মনে রঙিন স্বপ্ন ও চেতনা আবর্তিত হয়েছে এবং এখনো মানুষ সেই আবেগ ও চেতনায় আপ্লুত হয় । বেহুলার প্রতিবাদিনী ভূমিকা, সততা, দৃঢ়তা ও ত্যাগস্বীকারকে ভালোবেসেছিল একদিন বাংলার মানুষ । চাঁদ সওদাগরের আপোষহীন ভূমিকা ও নৈতিক সাহসকে সম্মান জানিয়েছিল বাংলার আপামর মানুষ । তাই বেহুলা ও চাঁদ সওদাগর বাংলার লোকজ ঐতিহ্যের গর্বিত চরিত্র । পদ্মপুরাণ একটি শক্তিশালী লোকগাঁথা । চাঁদ সওদাগরের আপোষহীন উচ্চারণ-
'যে হাতে পুজিনু আমি চণ্ডিকাজননী
সে হাতে না পুঁজিব কভু চ্যাঙ-মুড়ি-কানি ।'
এ কবিতায় প্রতিবাদিনী বেহুলা চান স্বর্গের অমৃতের একচ্ছত্র অধিকার দেবতাদের কাছ থেকে কেড়ে নিতে । কারণ এখন তাঁর অত্যন্ত প্রয়োজন স্বদেশকে পুনরুজ্জীবন দেওয়া । কিন্তু শতো বাধাবিঘ্ন পথ অতিক্রম করে স্বর্গে পৌঁছেও তাঁকে ফিরে আসতে হয়েছিল মর্ত্যে, স্বর্গের ছলাকলায় তিতিবিরক্ত হয়ে । বেহুলার কাছে আর বুঝতে বাকি নেই যে স্বদেশই শ্রেষ্ঠ স্বর্গ । কারণ স্বর্গের মতো এতো ছলাকলা ছলনা নেই মর্ত্যে । স্বর্গের অমৃতের চেয়ে স্বদেশের মা, মাটি, মানুষ খাঁটি । পদ্মপুরাণের ঐতিহ্যবাহী প্রতিবাদিনী চরিত্র বেহুলারূপী এক নারী ভালোবাসেন স্বদেশকে, ভালোবাসেন স্বদেশের মানুষকে । স্বদেশের মহিমাকে ম্লান করে দিয়েছে কতিপয় জঙ্গি, সন্ত্রাসী, মৌলবাদী । তাই স্বদেশের হৃতগৌরব পুনরুদ্ধার করতে এ নারী দৃঢ়প্রতিজ্ঞ । স্বদেশের মাটিতে তিনি বিজয়নিশান উড়াবেনই, কেউ তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারবে না । কারণ বাংলার বেহুলারা কোনোকিছু ভয় করে না । সকল বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে তাঁরা বিজয় ছিনিয়ে আনেই ।
কবিতাটির মিষ্টিমধুর শব্দনির্মিতি গ্রামবাংলার মতোই সহজ-সরল কিন্ত প্রাণবন্ত ।
কবিতাটির অনুপ্রাসের দোলা চমৎকার । যেমন-
1. 'পচে গলে খসে খসে পড়ে জলে ভাসে'
2. কালো জল কালসাপ কুণ্ডলী পাঁকায়'
উপমার ব্যবহারেও কবিতাটি সুন্দর । যেমন-
'বুকে জ্বলে হুতাশন সপ্ত পুত্রের শ্মশান'
আর আছে চমৎকার ইমেজ বা চিত্রকল্প । যেমন-
'আমার স্বদেশ ভাসে কলার মান্দাসে'
পৌরাণিক এক প্রতিবাদিনী নারীচরিত্রই বর্তমান সময়ের আর এক নারীতে প্রতিফলন ঘটেছে নতুনভাবে । সার্বিকভাবে কবিতাটি সার্থক । ধন্যবাদ কবিকে ।
উত্তমকুমার রায়
কবির এ কবিতায় তাঁর প্রিয় স্বদেশভূমি আজ হিংসা, হত্যা, সন্ত্রাস আর জঙ্গিহানায় মৃতপুরী । তাই স্বদেশের পুনরুজ্জীবনের জন্যে প্রয়োজন অমৃতের । স্বর্গ থেকে সেই অমৃতভাগ পেতে মৃত স্বদেশকে ভেলায় নিয়ে দুঃসাহসিক এক যাত্রা শুরু করেছেন বেহুলারূপী কাব্যের এ নায়িকা ।
বাংলাদেশের বগুড়া জেলার মহাস্থানগড়ে অবস্থিত প্রাচীন বাংলার রাজধানী পুণ্ড্রবর্ধন । মহাস্থানগড়ে রয়েছে বেহুলার ভিটে, লখিন্দরের লোহার বাসর-ঘর । একদিন এই ভিটে-বাসর-ঘর ঘিরে বাংলার প্রতিটিমানুষের মনে রঙিন স্বপ্ন ও চেতনা আবর্তিত হয়েছে এবং এখনো মানুষ সেই আবেগ ও চেতনায় আপ্লুত হয় । বেহুলার প্রতিবাদিনী ভূমিকা, সততা, দৃঢ়তা ও ত্যাগস্বীকারকে ভালোবেসেছিল একদিন বাংলার মানুষ । চাঁদ সওদাগরের আপোষহীন ভূমিকা ও নৈতিক সাহসকে সম্মান জানিয়েছিল বাংলার আপামর মানুষ । তাই বেহুলা ও চাঁদ সওদাগর বাংলার লোকজ ঐতিহ্যের গর্বিত চরিত্র । পদ্মপুরাণ একটি শক্তিশালী লোকগাঁথা । চাঁদ সওদাগরের আপোষহীন উচ্চারণ-
'যে হাতে পুজিনু আমি চণ্ডিকাজননী
সে হাতে না পুঁজিব কভু চ্যাঙ-মুড়ি-কানি ।'
এ কবিতায় প্রতিবাদিনী বেহুলা চান স্বর্গের অমৃতের একচ্ছত্র অধিকার দেবতাদের কাছ থেকে কেড়ে নিতে । কারণ এখন তাঁর অত্যন্ত প্রয়োজন স্বদেশকে পুনরুজ্জীবন দেওয়া । কিন্তু শতো বাধাবিঘ্ন পথ অতিক্রম করে স্বর্গে পৌঁছেও তাঁকে ফিরে আসতে হয়েছিল মর্ত্যে, স্বর্গের ছলাকলায় তিতিবিরক্ত হয়ে । বেহুলার কাছে আর বুঝতে বাকি নেই যে স্বদেশই শ্রেষ্ঠ স্বর্গ । কারণ স্বর্গের মতো এতো ছলাকলা ছলনা নেই মর্ত্যে । স্বর্গের অমৃতের চেয়ে স্বদেশের মা, মাটি, মানুষ খাঁটি । পদ্মপুরাণের ঐতিহ্যবাহী প্রতিবাদিনী চরিত্র বেহুলারূপী এক নারী ভালোবাসেন স্বদেশকে, ভালোবাসেন স্বদেশের মানুষকে । স্বদেশের মহিমাকে ম্লান করে দিয়েছে কতিপয় জঙ্গি, সন্ত্রাসী, মৌলবাদী । তাই স্বদেশের হৃতগৌরব পুনরুদ্ধার করতে এ নারী দৃঢ়প্রতিজ্ঞ । স্বদেশের মাটিতে তিনি বিজয়নিশান উড়াবেনই, কেউ তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারবে না । কারণ বাংলার বেহুলারা কোনোকিছু ভয় করে না । সকল বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে তাঁরা বিজয় ছিনিয়ে আনেই ।
কবিতাটির মিষ্টিমধুর শব্দনির্মিতি গ্রামবাংলার মতোই সহজ-সরল কিন্ত প্রাণবন্ত ।
কবিতাটির অনুপ্রাসের দোলা চমৎকার । যেমন-
1. 'পচে গলে খসে খসে পড়ে জলে ভাসে'
2. কালো জল কালসাপ কুণ্ডলী পাঁকায়'
উপমার ব্যবহারেও কবিতাটি সুন্দর । যেমন-
'বুকে জ্বলে হুতাশন সপ্ত পুত্রের শ্মশান'
আর আছে চমৎকার ইমেজ বা চিত্রকল্প । যেমন-
'আমার স্বদেশ ভাসে কলার মান্দাসে'
পৌরাণিক এক প্রতিবাদিনী নারীচরিত্রই বর্তমান সময়ের আর এক নারীতে প্রতিফলন ঘটেছে নতুনভাবে । সার্বিকভাবে কবিতাটি সার্থক । ধন্যবাদ কবিকে ।
0 comments: