বাংলাদেশের একজন প্রতিবাদী কবি হেলাল হাফিজ/ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’
বাংলাদেশের একজন প্রতিবাদী কবি হেলাল হাফিজ/ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’
বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরে সামরিক পট পরিবর্তনের অস্থির সময়ে যেসব কবিরা প্রতিবাদী কবিতা লিখে যাচ্ছিলেন, তাঁদের অন্যতম কবি হেলাল হাফিজ। আশির দশকে তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ' যে জলে আগুন জ্বলে ' প্রকাশিত হয়। তাঁর কাব্যগ্রন্থের প্রধান উপাদান যৌবন ও বিদ্রোহ। দীর্ঘ সময় ধরে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, জ্ঞান বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষ যদিও হয়েছিল, তবু মানব সভ্যতা একটা বিপর্যস্ত অবস্থার সামনাসামনি হয় তখন। বিশ্ব মানবতা সাম্রাজ্যবাদী বনিকগোষ্ঠীর অন্তহীন অর্থ লিপ্সায় ক্ষতবিক্ষত। ধনী দেশগুলি যুদ্ধ যুদ্ধ খেলায় প্রমত্ত হয়ে ওঠায় মানুষের বিবেকবোধ ও নৈতিকতা ছিন্নবিচ্ছিন্ন। অবক্ষয়ের এমনি পটভূমিতে হেলাল হাফিজের প্রেম মিশ্রিত যুদ্ধের কবিতা চাবুকের মত বিবেকহীন মানুষকে আহত করেছিল। তাঁর ' জলেতে আগুন জ্বলে ' কাব্যগ্রন্থের ৫৬টি কবিতা বর্তমানের উদ্ভ্রান্ত সময়ে কোন অংশেই অপ্রাসঙ্গিক নয়। গভীর মননশীলতা আর অবিমিশ্র আন্তরিকতা কবিতাগুলিকে প্রোজ্জ্বল দ্যুতিময় করে তুলেছে। আর হৃদয়ে রক্তাক্ত হাত বুলিয়ে স্বদেশপ্রেমে উদ্বেলিত করেছে, আজো করে। এমন অবিস্মরণীয় মানুষের ভালোবাসার কবি হেলাল হাফিজের একটি কবিতা উপস্থাপন করছি আমার বন্ধুদের সামনে। হেলাল হাফিজ দেশ ও কালোত্তীর্ণ কবি।
কবি হেলাল হাফিজের কবিতা
----------------------------------—--—-----
একটি পতাকা পেলে
----------------------------------
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
আমি আর লিখবো না বেদনার অঙ্কুরিত কষ্টের কবিতা
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
ভজন গায়িকা সেই সন্ন্যাসিনী সবিতা মিস্ট্রেস
ব্যর্থ চল্লিশে বসে বলবেন,–’পেয়েছি, পেয়েছি’।
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
পাতা কুড়োনির মেয়ে শীতের সকালে
ওম নেবে জাতীয় সংগীত শুনে পাতার মর্মরে।
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
ভূমিহীন মনুমিয়া গাইবে তৃপ্তির গান জ্যৈষ্ঠে-বোশেখে,
বাঁচবে যুদ্ধের শিশু সসন্মানে সাদা দুধে-ভাতে।
কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
আমাদের সব দুঃখ জমা দেবো যৌথ-খামারে,
সম্মিলিত বৈজ্ঞানিক চাষাবাদে সমান সুখের ভাগ
সকলেই নিয়ে যাবো নিজের সংসারে।

0 comments: